আইএস ব্রাইড বলে পরিচিত শামীমা বেগমকে নিয়ে নিজের দেশ হল্যান্ডে যেতে চান তার ডাচ স্বামী ইয়গো রিডিজক। শামীমা ও তার নবজাতক জেরাহর নাগরিকত্ব নিয়ে বৃটেন সহ বাংলাদেশে যখন চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে তখন মুখ খুললেন রিডিজক। শামীমার বৃটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভেদ। ইঙ্গিত করা হয়েছে, দ্বৈত নাগরিকত্বের অধীনে শামীমাকে বাংলাদেশে আশ্রয় চাইতে বলা হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছে, শামীমাকে আশ্রয় দেয়ার প্রশ্নই আসে না। বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের আহমেদ আলীর মেয়ে শামীমা।

আহমেদ আলী অনেক আগে পূর্ব লন্ডনে বসতি গড়েছেন। শামীমা সেখান থেকে মাত্র ১৫ বছর বয়সে পালিয়ে প্রথমে তুরস্কে যান। তারপর সীমান্ত পেরিয়ে চলে যান সিরিয়া।

উদ্দেশ্য জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসে যোগ দেয়া। ঠিকই সেখানে পৌঁছার মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে তিনি বিয়ে করেন ডাচ নাগরিক রিডিজককে। এরপর তার দুটি সন্তান হয়। তারা মারা যায়। ফেব্রুয়ারির শেষে এসে তার তৃতীয় সন্তানের জন্ম হয়।

রিডিজক বিবিসির কাছে আইএসে যোগ দিয়ে যুদ্ধ করার কথা স্বীকার করেছেন। তবে বলেছেন, তিনি এখন তার স্ত্রী শামীমা ও নবজাতক সন্তানকে নিয়ে দেশে ফিরতে চান। বর্তমানে তিনি সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কুর্দি নিয়ন্ত্রিত একটি বন্দিশিবিরে আটক আছেন। তিনি যদি নেদারল্যান্ডে ফিরে যান তাহলে সেখানকার আইন অনুযায়ী সন্ত্রাসী সংগঠনে যোগ দেয়ার কারণে তার ৬ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।

বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক প্রতিনিধি কুইন্টিন সমারভিলে তার সাক্ষাতকার নিয়েছেন। এতে রিডিজক বলেছেন, তিনি আইএসকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ওই গ্রুপ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন। তার দাবি, রাকায় তাকে আটক রাখা হয়েছিল। তিনি একজন ডাচ গোয়েন্দা এমনটা ভেবে কট্টরপন্থিরা তার ওপর নির্যাতন করেছে বলেও জানান তিনি।

শামীমা বেগমের বয়স এখন ১৯ বছর। সিরিয়ার বাঘোজ শহরে আইএসের পতন হলে সেখান থেকে রিডিজককে সঙ্গে নিয়ে তিনি পালিয়ে যান। এক পর্যায়ে সিরিয়ান যোদ্ধাদের একটি গ্রুপের কাছে আত্মসমর্পণ করেন রিডিজক। আর শামীমা আশ্রয় নেন আল হাওল শরণার্থী শিবিরে। সেখানে ৩৯ হাজার মানুষের মাঝে আশ্রয় শিবিরে জন্ম হয় তার সন্তান জেরাহর। সেখান থেকে ছেলেকে নিয়ে শামীমা পালিয়েছেন বলে খবর দিয়েছে বৃটিশ মিডিয়া।

শামীমাকে যখন রিডিজক বিয়ে করেন তখন শামীমার বয়স ১৫ বছর। রিডিজকের বয়স ২৩ বছর। ওই বয়সে শামীমাকে বিয়ে করে কোনো ভুল করেন নি বলে দাবি রিডিজকের। তিনি বলেছেন, বিয়ের বিষয়টি ছিল শামীমার পছন্দ।
রাকায় নারীদের আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন পূর্বলন্ডনের স্কুল পড়–য়া শামীমা। তার সঙ্গে কিভাবে সাক্ষাত হয়েছিল সে বিষয়ে রিডিজক বলেছেন, প্রথমে তিনি শামীমার প্রতি আগ্রহী ছিলেন না।

কারণ, শামীমা তখনও অনেক কম বয়সী। রিডিজকের ভাষায়, সততার সঙ্গে বলছি, যখন আমার এক বন্ধু এসে আমাকে বললো যে, একটি মেয়ে এসেছে। সে বিয়ে করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আমি আগ্রহ দেখাই নি তার বয়সের কারণে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে করেই হোক আমি মেনে নিলাম। শামীমাকে তখন সুস্থ মানসিকতার মেয়ে বলে মনে হয়েছিল। বিয়ের বিষয়টি তার একান্তই নিজস্ব পছন্দ। সে তার জন্য একজন পার্টনার খুঁজতে বলেছিল। আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
রিডিজক স্বীকার করেন, শামীমার বয়স কম হওয়ার কারণে তার আরও অপেক্ষা করা উচিত ছিল। কিন্তু সে তা করে নি। সে বিয়ে করাটাকেই বেছে নিয়েছে। আমিও তাকে বিয়ে করেছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here