প্রতিদিন গড়ে ২০-২২ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে

0
130

বাংলা খবর ডেস্ক,ঢাকা:
শীতে কাবু জনজীবন। বিভিন্ন ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু থেকে শুরু করে বয়স্করা। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে (ঢাকা শিশু হাসপাতাল) বাড়ছে রোগীর চাপ। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। হাসপাতালে খালি নেই কোনো শয্যা। হাসপাতালের তথ্যমতে, সর্দি, জ্বর, নিউমোনিয়া, চর্মরোগ ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। গত ডিসেম্বরে ঠাণ্ডাজনিত রোগ নিয়ে ভর্তি হয়েছিল ৪৩৩ জন। চলতি মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১০২ জন। প্রতিদিন গড়ে ২০-২২ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। এদিকে শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে বাঁচাতে অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়াতে বলেছেন চিকিৎসকরা।

গতকাল রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে (ঢাকা শিশু হাসপাতাল) সরজমিন দেখা যায়, হাসপাতালে খালি নেই কোনো শয্যা। সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে অস্বস্তিতে ভুগছে শিশুরা। অতিরিক্ত রোগীর চাপে হাসপাতালে চিকিৎসকদের যেন দম ফেলার সময় পর্যন্ত নেই। সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৭৫০ শয্যাবিশিষ্ট শিশু হাসপাতালে (সকাল ৮টা পর্যন্ত) গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয় ২০ জন। গত ডিসেম্বরে হাসপাতালে এই রোগ নিয়ে ভর্তি হয়েছিল ৪৩৩ জন। আর এই জানুয়ারিতে ইতিমধ্যেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১০২ জন। যা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে বিবেচনা করছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, ৭৫০ বেডের এই হাসপাতালটি সবসময় পরিপূর্ণ থাকে। কারণ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সকল জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েই এখানে রোগীরা আসেন। হাসপাতালে ফ্লোরিং করার কোনো ব্যবস্থা নেই। সিট ফাঁকা থাকলে রোগী ভর্তি করা হয়, ফাঁকা না থাকলে রোগীকে রেফার্ড করে দেয়া হয়।

৮ মাস বয়সী জিসান। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে অস্বস্তিতে কাতরাচ্ছে। দু’দিন ধরে শিশু হাসপাতালে ভর্তি। তার পাশে রয়েছেন মা। বাহিরে অপেক্ষা করছেন জিসানের বাবা দুলাল বিশ্বাস। তিনি বলেন, আমরা মাদারীপুরে থাকি। কয়েকদিন আগে হঠাৎ করে দেখি বাচ্চার নাক দিয়ে পানি পড়ছে। আবার দেখি কাশিও হচ্ছে। কাশতে-কাশতে দেখি বাচ্চা যা খাচ্ছে সব বমি করে দিচ্ছে। একটা সময়ে ওর পাতলা পায়খানাও শুরু হয়ে যায়। তাই দেরি না করে বেসরকারি একটা হাসপাতালে নেই। বাচ্চার অবস্থা খারাপ দেখে সেখান থেকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়। তারপর ঢাকার এই হাসপাতালে নিয়ে আসি।

১০ মাস বয়সী শিশু আমিনুল ইসলাম। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও ফরিদপুরের বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে ঢাকায় এসেছে চিকিৎসা নিতে। শিশুর মা ফাতিমা বলেন, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫ দিন থাকার পর ছাড়পত্র দিয়েছিল। এরপর সমস্যা বেড়ে গেলে আবারো সেখানে নিয়ে যাই। কোনো সমাধান না পেয়ে ফরিদপুরে নিয়ে যাই। সেখানে অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় এখানে আসি। এখন আমার বাচ্চা অনেকটা সুস্থ হয়েছে।

শনিবার ভোরে পৃথিবীর আলো দেখে এক নবজাতক। এখনো রাখা হয়নি ওর নাম। জন্মের পরই ঠাণ্ডাজনিত সমস্যার কারণে ওকে রাখা হয় বড়বাড়িয়ায় একটি হাসপাতালের আইসিইউতে। অবস্থার অবনতি ঘটলে সেখান থেকে ওকে পাঠানো হয় ঢাকা শিশু হাসপাতালে। হাসপাতালে আসা নবজাতকের বাবা ফয়সাল বলেন, শনিবার ভোর ৫টায় আমার বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে। ঠাণ্ডার জন্য ওকে আইসিইউতে নেয়া হয়। অবস্থার কোনো পরিবর্তন না হলে দুপুর ১২টার দিকে আমার বাচ্চাকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসি। আজ ওর অবস্থা অনেকটা ভালো।

রাত থেকে ৩/৪ বার বমি করেছে ৫ বছর বয়সী রাফাত। সঙ্গে পাতলা পায়খানাও হচ্ছে। অবস্থার অবনতি হলে সকালে রাফাতকে হাসপাতালে নিয়ে আসে ওর মা। সঙ্গে আসা মামা জামিল ইসলাম বলেন, আমরা আগারগাঁওয়ে থাকি। হঠাৎ করে ভাগ্নের শরীরের এমন অবস্থা দেখে বিচলিত হয়ে যাই। তাই ওকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসলাম।
শৈত্যপ্রবাহের কারণে শিশু হাসপাতালগুলোয় হঠাৎ রোগী বেড়ে গেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে বিশেষ করে টনসিলাইটিস, ফেরেনজাইটিস, রাইনাইটিস, ব্রোঙ্কিওলাইটিস, সাইনোসাইটিস, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা রোগী তুলনামূলকভাবে হঠাৎ করে কিছুটা বেড়েছে। হঠাৎ হাসপাতালে রোগী বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে হঠাৎ করে এত শীত সাধারণত আসে না। শীত আসার পরে আস্তে আস্তে বাড়তে আসতে শুরু করে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পুরো দেশে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বেড়ে গেছে। এ ছাড়াও এই শীতের প্রভাবে শ্বাসতন্ত্র ও শীতজনিত ডায়রিয়াও কিছুটা বেড়েছে।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সর্দি, জ্বর, নিউমোনিয়া, চর্মরোগ ও ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়ে বেশি পরিমাণে রোগী ভর্তি হচ্ছে। হঠাৎ করে ঠাণ্ডা বেড়ে যাওয়ার ফলেই এসব রোগী বেশি পরিমাণে আসছে। শিশুদের প্রতি বেশি যত্নশীল হতে হবে।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. কামরুজ্জামান বলেন, প্রথমেই বাচ্চার যেন ঠাণ্ডা না লাগে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। তাকে শীতের কাপড় ঠিকমতো পরিয়ে দিতে হবে, মাথা ঢেকে দিতে হবে। বাচ্চাকে প্রয়োজনীয় কারণ ছাড়া বাসা থেকে বের করা যাবে না। নরমাল ঠাণ্ডা কাশিতে বাচ্চার নাক পরিষ্কার রাখতে হবে। শীতের কাপড়গুলো দীর্ঘদিন ধরে প্রিজার্ভ অবস্থায় থাকলে তা বের করে পরিষ্কার করে শরীরে দিতে হবে। বাচ্চাকে শাকসবজি জাতীয় খাবার বেশি করে খাওয়াতে হবে। বাচ্চার ঠাণ্ডা লাগলে কীভাবে বোঝা যাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খেয়াল রাখতে হবে ঠাণ্ডা কাশির সঙ্গে বাচ্চার বুকের নিচে বসে যাচ্ছে কিনা। তার শ্বাস-প্রশ্বাসের নরমাল গতি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হচ্ছে কিনা। বাচ্চা খেতে পারছে কিনা, যা খাচ্ছে তা বমি করে দিচ্ছে কিনা। যদি বাচ্চার গতি স্বাভাবিকের থেকে কমে যায়। এসব উপসর্গ দেখলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ঠাণ্ডাজনিত কোনো অবস্থায় বাচ্চাকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, অনেক সময় বাচ্চার অভিভাবক ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাওয়ায়, এর ফলে উপকারের থেকে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি থাকে। উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। তিনি আরও বলেন, বাসার ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা যেন ভালো থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাচ্চাকে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল না করিয়ে কুসুম গরম পানিতে গোসল করাতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here