বাংলাদেশে লড়ছে চীন-যুক্তরাষ্ট্র, সত্যিকার বিজয়ী ভারত

0
77

বাংলা খবর ডেস্ক:
আবারও বৈশ্বিক ভূরাজনীতির নজরে পড়েছে বাংলাদেশ। এইবার অস্থির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি আর আসন্ন নির্বাচনের আগে দেশটি সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি। উভয় দেশই অন্যের সুবিধা কমানোর পাশাপাশি নিজেদের অগ্রগতি বাড়াতে চেয়েছে। এমন মন্তব্য উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দ্য ডিপ্লোম্যাটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে। গত ২১ জানুয়ারি প্রকাশ হওয়া নিবন্ধটি লিখেছেন জনহপকিন্স বিশ^বিদ্যালয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থী আনু আনোয়ার।

ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, ১০ জানুয়ারি চীনের নতুন নিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং নজিরবিহীন এক পদক্ষেপ নেন। গত ৩২ বছরের প্রথা ভেঙে প্রথম বিদেশ সফরে তিনি ঢাকায় আসেন। আনুষ্ঠানিক সফর না হলেও তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রায় একই সময়ে তিন দিনের বাংলাদেশ সফরে আসেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের উপপ্রধান জেন ঝোও।

চীনের এই উচ্চপর্যায়ের সফরের মধ্যে বাংলাদেশ সফর করেন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা। হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র পরিচালক আইলিন লাউবেচার। এ ছাড়া গত সপ্তাহে শেষ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফর।

দুই দেশের এই উচ্চপর্যায়ের সফরে বাংলাদেশে বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা প্রতিফলিত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে অবস্থিত বাংলাদেশ ভূকৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে বাংলাদেশ নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা চালাচ্ছে চীন-যুক্তরাষ্ট্র। তবে ডিপ্লোম্যাটের নিবন্ধ বলছে, এই লড়াইয়ে চূড়ান্ত বিজয়ী আসলে চীন বা যুক্তরাষ্ট্র নয়, সেটি হচ্ছে ভারত। দিল্লি নীরবে নিজেদের সম্পদের অপচয় না করে বেইজিং ও ওয়াশিংটনকে একে অপরের বিরুদ্ধে খেলাচ্ছে।

ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা দমনে সহায়তার পাশাপাশি বাংলাদেশ দিল্লির আরও বেশকিছু চাহিদা পূরণ করেছে। ভারতের নজরদারি রাডারকে স্থান দিয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি বাংলাদেশি জনগণের জীবনের প্রত্যেকটি পর্যায়ে ভারতের প্রবেশের সুযোগ রাখা হয়েছে। ভারতের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের তৃতীয় বৃহত্তম উৎস হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।

বিপরীতে বাংলাদেশে চীনের প্রবেশ খানিকটা নতুন। ২০১৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ নেওয়ার পর বাংলাদেশে বেইজিংয়ের প্রভাব বেড়েছে। তবে তাদের সামগ্রিক প্রভাব এখনো সীমিত। বিপুল বিনিয়োগ এবং বাণিজ্য থাকার পরও বাংলাদেশের রাজনীতি ও নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলার মতো পর্যাপ্ত সরঞ্জামের ঘাটতি বেইজিংয়ের রয়েছে।

দ্য ডিপ্লোম্যাটের নিবন্ধ বলছে, তার পরও বাংলাদেশে চীনের এই সীমিত সুবিধাকেও ভারত নিজের খরচ বলে মনে করছে। ফলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছে ভারত। তবে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে ভারতবিরোধী মনোভাব থাকায় তারা সম্পদশালী চীনের যোগ্য প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতা ঢাকতে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনকে পরস্পরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে ভারত। এমনকি জাপান ও রাশিয়ার মতো অন্য প্রভাবশালী দেশগুলোকেও এই লড়াইয়ে টেনে আনছে। বিশেষ করে যারা চীনবিরোধী, কিন্তু বাংলাদেশে ভারতের লক্ষ্যকে সমর্থন করে- তাদের এই খেলায় টানছে দিল্লি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here