আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: সম্প্রতি এক বৈশ্বিক নিরাপত্তা বিষয়ক সম্মেলনে ইসরায়েল ও সৌদি আরব ইরানের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। দেশ দুটি বলেছে, এখনই সময় মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ইসলামি প্রজাতন্ত্রের অগ্রগতি রুখে দাঁড়ানোর।
ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জার্মানির মিউনিখে এক সভায় ইরানকে বিশ্বের জন্য এক মহা হুমকি বলে আখ্যায়িত করেছেন। এবং হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ইসরায়েল ইরানকে রুখে দাঁড়াবে। একই সভায় সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের রবিবার বলেন, ইরানকে তার আগ্রাসী আচরণের মূল্য চুকাতে হবে।
সিরিয়ার চলমান যুদ্ধে আসাদ সরকারের পক্ষে রয়েছে ইরান ও রাশিয়া। অন্যদিকে, আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদের মদদ যুগিয়ে যাচ্ছে সৌদি, আরব ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি ইরানকে ঠেকাতে আইএস জঙ্গিদেরকেও ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি আরব সিরিয়ায় মদদ দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত সপ্তাহে সিরিয়ায় বিমান হামলা চালিয়ে ফিরে আসার সময়ে ইসরায়েলের একটি যুদ্ধ বিমানকে ইরান ড্রোন হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে। কিন্তু ইরান তা অস্বীকার করে। রবিবার নেতানিয়াহু মিউনিখে বক্তব্য রাখার সময় একটি টুকরো ধাতব পদার্থ উঁচিয়ে ধরে বলেন এই টুকরোটি এসেছে ইরানের সেই ড্রোন থেকে যা ইসরায়েলের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। নেতানিয়াহু ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোহাম্মদ জারিফকে প্রশ্ন করেন তিনি ওই টুকরোটি চিনছেন কিনা।
এরপর তিনি হুঁশিয়ারি দেন, তেহরানের স্বৈরাচারদের জন্য এই বার্তা নিয়ে যান যে, ইসরায়েলের ধৈর্যে্যর পরীক্ষা নিবেন না। ইসরায়েল শুধু সিরিয়া ও লেবাননে আপনাদের ছায়াযুদ্ধের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না খোদ ইরান ভূখণ্ডেও হামলা চালাবে।
এর উত্তরে জারিফ বলেন, নেতানিয়াহু যে কার্টুন মার্কা সার্কাস করলেন তার কোনো জবাব হয় না। তিনি বলেন, ইরান মধ্যপ্রাচ্যে কোনো আধিপত্য কায়েম করতে চায় না। এসময় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ছয় বিশ্বশক্তি যদি ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু সমঝোতা চুক্তি বাতিল করে তাহলে ইরান এর পাল্টা জবাব দিবে।
নেতানিয়াহু আরো হুঁশিয়ারি দেন যে, ইরান পরমাণু বোমা বানিয়ে ফেললে ইসরায়েলের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে যাবে।
সম্প্রতি ইরাক ও সিরিয়ার ভুমি থেকে আইএস জঙ্গিদেরকে পুরোপুরি উৎখাত করা হয়েছে। অন্যদিকে, সিরিয়ার আসাদ সরকারবিরোধী বিদ্রোহীরাও দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে ইসরায়েল ভয়ে আছে আসাদ সরকারের মিত্র ইরান সিরিয়ায় স্থায়ীভাবে সামরিক উপস্থিতি কায়েম করবে। ফলে ইসরায়েলের সীমান্তের কাছেই অবস্থান করবে ইরান। এখন ইসরায়েলকে হয় তা সহ্য করতে হবে। আর নয়তো যুদ্ধে জড়াতে হবে ইরানের সঙ্গে।
পরিস্থিতি খারাপের দিকে
শুধু চলতি মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান থেকে হামলা করে ২০০ ভাড়াটে রুশ সেনাকে হত্যা করা হয়েছে। যারা সিরিয়ার পক্ষ হয়ে কুর্দিদের ওপর হামলা করেছিল। অন্যদিকে, তুরস্কও তার সীমান্তের কাছে উত্তর সিরিয়ার কুর্দিদের ওপর হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে। যাদের আবার মদদ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েল ইরানের ড্রোন ভুপাতিত করেছে।
ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় ভয় ইরান না আবার সিরিয়া ও ইরাকের ওপর দিয়ে লেবাননের সঙ্গে করিডোর প্রতিষ্ঠা করে বসে। লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইরানের বিপ্লবী সেনাবাহিনীর যোগসাজশ রয়েছে। যার ইসরাইলকে উৎখাত করতে চায়।
অন্যদিকে, সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের ইরানের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক সম্প্রসারণবাদ ও আধিপত্যবাদের এবং সন্ত্রাসবাদে মদদ যোগানোর অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ইরানের ক্ষমতা ব্যবস্থায় একটি আমুল পরিবর্তন আনতে হবে। যাতে পুনরায় ইরানকে একটি স্বাভাবিক দেশ হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া