যুক্তরাষ্ট্রে গভীর শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদদের স্মরণ

0
118

নিউইয়র্ক থেকে : প্রবাস প্রজন্মে বাঙালি সংস্কৃতি জাগ্রত রাখার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাংলাদেশ রচনায় সর্বাত্মক সহায়তা অব্যাহত রাখার সংকল্পে মার্কিন প্রবাসীরা মহান ভাষা দিবস তথা ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালন করছেন।

জাতিসংঘের সামনে বাংলাদেশের সময়ের সাথে সঙ্গতি রেখে নিউইয়র্ক সময় গতকাল মঙ্গলবার বেলা একটা ০১ মিনিটে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন দেশ-বিদেশের কূটনীতিকরা। গত ২৭ বছর ধরেই মুক্তধারা ও বাঙালি চেতনামঞ্চের উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এ সময় প্রদত্ত সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বায়ান্নর ভাষা শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।

এ সময় নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান, ইউনিসেফের পদস্থ কর্মকর্তা, মার্কিন রাজনীতিক এবং প্রবাসী-বাংলদেশিরাও শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।

প্রবাসীদের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী-আঞ্চলিক সংগঠনের উদ্যোগে শহীদ দিবসের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয় স্থানীয় সময় রাত ১২টা ০১ মিনিটে। দুই শতাধিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।

দীর্ঘ ৮০ বছর পর ২০ ফেব্রুয়ারির আবহাওয়া গ্রীষ্মকালের মত হওয়ায় সর্বস্তরের প্রবাসী জড়ো হন বিভিন্ন স্থানে নির্মিত শহীদ মিনারে। এগুলো ছিল জ্যাকসন হাইটট, গুলশান টেরেস, কুইন্স প্যালেস, ব্রুকলীনে চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড, ব্রঙ্কসের বাংলাবাজার এভিনিউসহ বিভিন্ন স্থানে।

জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনেও শহীদ মিনার নির্মাণ করে সেখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও ছিলেন এ কর্মসূচিতে। বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য রোকসানা ইয়াসমিন ছুটি, সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান, সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম, সংসদ সদস্য মুন্নুজান সুফিয়ান ও সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান। তারা সকলেই জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রবাসের সকল বাঙালিকে দলমত নির্বিশেষে কাজ করার আহ্বান জানান।

সংসদ সদস্যগণ বলেন, বাংলাদেশের সাথে আপনাদের নাড়ির টান। মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সকল সঙ্কটে প্রবাসী বাংলাদেশিরা সব সময়ই ভূমিকা রেখেছেন। প্রবাসীদের এই ভূমিকা সবসময় অব্যাহত থাকবে বলে সংসদ সদস্যগণ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। আগামীতে আমরা বিশ্বের নেতৃত্ব দিব”। আগামী নির্বাচনে তিনি আবারও যাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞকে এগিয়ে নিতে পারে সেজন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। তিনি প্রবাসীদেরকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, তারা যেন তাদের সন্তান-সন্তানীদের ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানান। যাতে দেশের সাথে তাদের সম্পর্ক আরও গভীর হয়।

অন্যান্যের মাঝে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাব, নিউইয়র্ক প্রেসক্লাব, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাসদ, জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন, জাতীয় পার্টি, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম সমিতি, বৃহত্তর নোয়াখালী সমিতি, কক্সবাজার ডিস্ট্রিক্ট অ্যাসোসিয়েশন, বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু প্রজন্মলীগ, সন্দ্বীপ অ্যাসোসিয়েশন, জামালপুর সমিতি, শেরপুর সমিতি, ময়মনসিংহ এব্রড; নর্থবেঙ্গল ফাউন্ডেশন, বরিশাল সমিতি, কুষ্টিয়া জেলা সমিতি প্রভৃতি সংগঠনের ব্যানারে ব্রুকলীন, কুইন্স এবং ব্রঙ্কসে বিভিন্ন শহীদ মিনারে ফুল দেয়া হয়।

উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশিদের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত জ্যাকসন হাইটসের শহীদ মিনারের কর্মসূচির সমন্বয় করেছেন যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ আহমেদ। তাকে সহযোগিতা করেছেন জ্যাকসন হাইটসের ব্যবসায়ীরা।

ফ্লোরিডা থেকেও যথাযথ মর্যাদায় শহীদ দিবস উদযাপনের সংবাদ এসেছে। ফ্লোরিডা মেট্রপলিটন আওয়ামী লীগের ব্যানারে অঙ্গরাজ্যের ওয়েস্ট পামবিচে ‘ফ্লেবার অব ইন্ডিয়া’ রেস্টুরেন্টে শহীদ দিবস স্মরণে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ‘বাই ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স’-এর নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান ও ফোবানার চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান।  এ আলোচনায় আরো অংশ গ্রহণ করেন আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক কামালউদ্দিন ভূইয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান জাহাঙ্গির, ভোলা জেলার লালমোহন পৌর মেয়র ইমদাদুল ইসলাম তুহিন, শাহজাহান খসরু, আব্দুর রহিম বুলবুল ও ফ্লোরিডা মেট্রোপলিটন আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব বিন্তু খান। অনুষ্ঠানে একুশের স্মৃতি জাগানিয়া অবিস্মরণীয় সেই গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি-আমি কি ভুলিতে পারি’ সকলের কন্ঠে ধ্বনিত হয়। আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারি শিশু-কিশোররাও কন্ঠ মেলায় এ গানে।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে নতুন প্রজন্মের বাংলা লিখন, পঠন এবং চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয় একুশের প্রথম প্রহরের প্রাক্কালে। এ সময় প্রবাসের বিশিষ্ট শিল্পীরা একুশের গান পরিবেশন করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here