আপাতত ভোটাধিকার পাচ্ছেন না প্রবাসীরা

0
351

গাজী শাহনেওয়াজ: স্ব-স্ব কর্মস্থলেই ভোটার হবেন প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিরা। তবে তারা কবে নাগাদ পছন্দের দল ও প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সাংবিধানিক এই সংস্থাটি বলছে, ভোটাধিকার নয়, ভোটার করাই প্রধান লক্ষ্য। প্রবাসীদের ভোটার করায় সম্মতি রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।

এদিকে, প্রবাসী বাঙালিদের ভোটার করতে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। এর মধ্যে সাত দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সেমিনারের আয়োজন চলছে। এই সাত দেশ হচ্ছে—সৌদি আরব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইটালি, কুয়েত, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া। আগামী ১৯ এপ্রিল এই সেমিনার করতে ইসিজুড়ে চলছে আয়োজন। এই আয়োজনের আপ্যায়নে কমিশনের ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা। তবে এর আগে কয়েক দফা সময় নির্ধারণ এবং আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েও যথাসময়ে এই সেমিনারের আয়োজন করতে পারেনি ইসি। গত ১৮ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি এবং মার্চের প্রথম সপ্তাহে এই আয়োজনের কথা ছিল। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকা দীর্ঘ ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হওয়ায় এবং তাদেরকে একত্রিত করে সম্মেলনটি করতেই সময় পিছিয়ে নতুন তারিখ নির্ধারণ হয়েছে।

প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশ্বের বাঙালি অধ্যুষিত ১৫৭টি রাষ্ট্রের মধ্যে জনবহুল তিনটি দেশ অর্থাৎ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মালয়েশিয়ায় গিয়ে সেখানকার বাংলাদেশি দূতাবাসের সহায়তা নিয়ে ছবিসহ ভোটার তালিকায় নাম উঠানো হবে প্রবাসীদের; এটা নির্ধারিত করা হলেও এখানেও কাটছাঁট করা হয়েছে। বিদ্যমান প্রস্তাবে শুধু সৌদি আরবে অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হয়েছে। এই দেশে ৪টি টেকনিক্যাল টিম পাঠিয়ে স্ব-স্ব কর্মস্থলেই ভোটার করা হবে। এর আগে এ তালিকায় ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মালয়েশিয়া। এর জন্য আগামী অর্থ বছরের বাজেটে বরাদ্দ রাখতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ধাপে ধাপে কাতার, মালয়েশিয়া, মধ্যপাচ্য, ইউরোপ ও আমেরিকা অঞ্চলে কমিশনের টেকনিক্যাল টিম পাঠিয়ে সেখানে বসবাসরতদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলেন, বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসসমূহের প্রস্তাব, অর্থমন্ত্রীর তাগিদ, গত বছরে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহ অনুশাসন, সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব এবং গাজীপুরের কাপাসিয়ায় আইডি কার্ড প্রদান-সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সম্মতি প্রবাসীদের ভোটার করার বিষয়টি আগেই নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে কমিশন। এমনকি কোন প্রক্রিয়ায় তাদের নাম তালিকাভুক্ত করা হবে সেটিও অনেকটা চূড়ান্ত। কিন্তু ভালো এই উদ্যোগটি কমিশন গ্রহণ করার পর যাতে সংশ্লিষ্ট পকেটগুলো অর্থাৎ স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, প্রবাসী ও বৈদেশিক কল্যাণ মন্ত্রণালয়, পাসপোর্ট অফিস, বোয়েসেল, রামরু, প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক, এনজিও প্রতিনিধি, প্রবাসে বর্তমান কর্মরত প্রথম সচিব ও কনসাল জেনারেলসহ কোনো পক্ষই দায় এড়াতে না পারে মূলত সে কারণে ওই সেমিনারের আয়োজন করতে যাচ্ছে কমিশন। পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সৌদি আরব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইটালি, কুয়েত, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসসমূহের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সেমিনারে উপস্থিতি নিশ্চিতে সমন্বয় করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইসি সচিব পত্র দিয়ে পররাষ্ট্র সচিব এ বিষয়ে সমন্বয় করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, প্রবাসীদের ভোটার করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর জন্য রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সুশীল সমাজ ও ইসির অংশীজনদের নিয়ে একটি সেমিনার আয়োজন করা হবে; যার পরবর্তী তারিখ আগামী ১৯ এপ্রিল। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যরা সম্মত হয়েছেন। ওই সেমিনারটি আয়োজনে এবং অতিথিদের আমন্ত্রণ জানাতে প্রস্তুতি শুরু হবে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, মধ্যপাচ্যে, ইউরোপ এবং আমেরিকাসহ বিশ্বের অনেক দেশে বহুসংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিক অবস্থান করছে। স্বাধীনতার এত বছর পরও তারা দেশে আসার সুযোগ পান না। ফলে ভোটার তালিকায় তাদের নাম যেমন অন্তর্ভুক্ত হয় না, তেমনি তারা জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে বঞ্চিত। রাষ্ট্রের পরিচিতিপত্র না থাকায় নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।

দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা এসব প্রবাসী বাঙালিদের ভোটার করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও ‘ঘাটতি’ থাকায় তা আর এগোয়নি। বর্তমান খান মো. নুরুল হুদা কমিশন গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্বে এসে প্রবাসীদের ভোটার করার সুপরিকল্পিক পদক্ষেপ নেয়।

জানা যায়, ১৯৯৮ সালে দেশের উচ্চ আদালত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার সংবিধান স্বীকৃত বলে ঘোষণা দেন। দীর্ঘ ১৯ বছরেও সেই ঘোষণা বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। বিশ্বের ১৫৭টি দেশে কোটির ওপরে প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। বর্তমান কমিশনের এই উদ্যোগে তাদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের অবসান হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা। এর আগে ১/১১ ড. শামসুল হুদা কমিশনের দুজন কমিশনার এ বিয়য়ে অভিজ্ঞতা নিতে যুক্তরাজ্য সফর করেছিলেন। এর পেছনে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় হয়েছিল। এ নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন সাবেক কমিশনাররা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here