খালেদা জিয়া কি সত্যিই অসুস্থ?

0
111
নিয়ম অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে কারা কর্তৃপক্ষই সিদ্ধান্ত নেবে। তারা বলছে, তাঁর শারীরিক অবস্থার কোনো অবনতি হয়নি। অথচ বেগম জিয়ার বিদেশ যাত্রা নিয়ে চলছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য।

কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কি আসলেই অসুস্থ? কিংবা অসুস্থ হলে কতটা? এই প্রশ্নের নিশ্চিত কোনো উত্তর নেই রাজনৈতিক দল বিএনপি বা আওয়ামী লীগের কাছে। অথচ তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার বিষয়ে চলছে জোর আলোচনা।

বর্তমানে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহমুদুল হাসান শুভ।

তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বাড়িতে থাকা অবস্থায় তাঁর শারীরিক অবস্থা যেমন ছিল, তা থেকে একটুও অবনতি হয়নি। খালেদা জিয়ার কোনও অসুস্থতা নেই। তাঁর সবকিছুই স্বাভাবিক রয়েছে।

‘‘আমরা নিয়মিত চেকআপ করে তাঁর কোনও অসুস্থতা পাইনি। তবে তাঁর বয়স ৭৩ বছর। পায়ে একটি অপারেশন আগে করা হয়েছে। তাই হাঁটতে একটু সমস্যা হয়। এর বাইরে কিছু নয়।”

জানা গেছে, খালেদা জিয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টা কারাগারে একজন চিকিৎসক থাকেন। রাতে কেবল তাঁর জন্যই একজন চিকিৎসক কারা ফটকের একটি কক্ষে ঘুমান। তাঁর পাশের রুমেই থাকেন একজন নার্স। কারাগারের ভেতর নিয়মিত তিনি হাঁটাচলাও করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

আগের দিন বিএনপির তরফ থেকে চেয়ারপার্সনকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর দাবি করা হলেও শনিবার দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন যে, বিদেশে নেয়া নয়, বরং তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা যেন বেগম জিয়াকে দেখতে পান সেটিই তাঁদের মূল দাবি।

‘‘আমরা তো জানিই না, উনি কেমন আছেন। কারা কর্তৃপক্ষ গতকাল পর্যন্ত আমাদের কাছে বিষয়টি পরিস্কার করে কিছু বলেনি। তারা আদালতে প্রতিবেদন পাঠিয়ে বলেছে, খালেদা জিয়া অসুস্থ এ কারণে তাঁকে আদালতে নেয়া হয়নি। সঙ্গত কারণেই আমরা মনে করি তিনি অসুস্থ। আমরা তাঁর চিকিৎসার কথা বলেছি।”

তিনি আরো বলেন, আমরা বলেছি, আগে তাঁকে মুক্তি দিতে হবে এবং এরপর তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি কোথায় চিকিৎসা করাবেন। এর আগে তাঁকে যারা নিয়মিত পরীক্ষা করতেন সেই ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তাঁকে দেখানোর সুযোগ দেয়ার দাবি করেছি আমরা।”

এদিকে, আগের দিন খালেদা জিয়াকে ‘বিদেশ নেয়া’র জন্য মির্জা ফখরুলের প্রস্তাব লুফে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি সত্য হলে, তার (অসুস্থতার) মাত্রা বুঝে তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী সব ব্যবস্থাই সরকার নেবে। সুচিকিৎসা যদি দেশে হয় তাহলে দেশে, আর বিদেশে নেয়ার দরকার হলে তাই হবে। চিকিৎসকরা যদি বোর্ড বসিয়ে বলেন যে, বিদেশে পাঠাতে হবে, তাহলে পাঠাবো।

এ বিষয়ে শনিবার আওয়ামী লীগের মুখপাত্র ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, আমাদের পার্টির সাধারণ সম্পাদক তো বলেই দিয়েছেন প্রয়োজন হলে তাকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা করানো হবে। আমরা তো জানি না তিনি আসলে অসুস্থ্য কি-না। এখন তিনি কারাগারে, তাই কারা কর্তৃপক্ষই সিদ্ধান্ত নেবে তাঁর চিকিৎসা আসলে কোথায় করা প্রয়োজন। আমরা শুধু বলেছি, তাঁর চিকিৎসার জন্য যে ধরনের সহযোগিতা আমাদের দেয়া দরকার তার সবই আমরা করব। এ নিয়ে কোন দ্বিমত নেই।”

এদিকে, বিদেশে পাঠাতে হলে দুই প্রক্রিয়ায় পাঠানো সম্ভব বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী মনসুর হাবিব।

তিনি বলেন, উনি সাজাপ্রাপ্ত হলেও উনার আপিল এখন উচ্চ আদালতে রয়েছে। তাই বিএনপি চাইলে উচ্চ আদালতে এই ধরনের আবেদন করতে পারে। আদালত বিবেচনা করে দেখবেন আসলে উনার বিদেশে পাঠানোর প্রয়োজন আছে কি-না?”

মনসুর বলেন, আর সরকার যদি মনে করে, দেশে তাঁর ভালো চিকিৎসা সম্ভব নয়, তাহলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উনাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারে। সেক্ষেত্রেও আদালতে একটা আবেদন জমা দিয়ে উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট দুর্নীতির মামলার রায়ে খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর সাজা হয়েছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ওই রায় ঘোষণার দিন বিকেল থেকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here