করলার রয়েছে হাজারও গুণাগুণ। করলা বাজারে সারাবছরই পাওয়া যায়। ভাজি, ভর্তা ও ঝোলে করলার জুড়ি নেই। তেতো হলেও স্বাদ আছে তাই অনেকে খেতে ভালবাসে। তবে স্বাদের চেয়ে ওষুধের গুণই করলাকে সবার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।
এছাড়াও করলার ভিতর রয়েছে প্রচুর মাত্রায় আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন সি। সেই সঙ্গে মজুত রয়েছে ডায়াটারি ফাইবার, ক্যালসিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন, পটাশিয়াম ইত্যাদি। এছাড়াও, করলায যথেষ্ট পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন আছে, যা ব্রকলি থেকেও দ্বিগুণ।
সুগার নিয়ন্ত্রণ: করলার রস খেলে পলিপেপটাইড-পি নামে একটি উপাদানের মাত্রা বেড়ে যা, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়। এতে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে কমে যায়।
২০১১ সালে প্রকাশিত একটি স্টাডি অনুসারে, ডায়াবেটিস আক্রান্তরা নিয়মিত এই ঘরোয়া ওষুধটি গ্রহণ করেন, তাদের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ: করলায় প্রচুর মাত্রায় আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিড রয়েছে, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি শরীরে লবণের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার মধ্যে দিয়ে ব্লাড প্রেসারকে কন্ট্রোলে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। কোলেস্টরলের মাত্রা কমে যাওয়ার সাথে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণের সম্পর্ক থাকাতে, করল্লার রস পানে হার্টের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যায়।
তারুণ্য ধরে রাখতে করলার রস: করলা হিমোগ্লোবিন তৈরি করে শরীরে রক্তের উপাদান বাড়ায়। করলার ভিটামিন সি ত্বক ও চুল ভালো রাখে। এটি শরীর হতে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় এবং রক্ত পরিষ্কার করে। করলার সবচেয়ে বড় গুণ এটি বার্ধক্য ঠেকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। তাই করলা খেয়ে ধরে রাখুন তারুণ্য।
ক্যানসার প্রতিরোধ: করলায় রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ লৌহ, ভিটামিন এ, সি এবং আঁশ। এন্টি অক্সিডেন্ট-ভিটামিন এ এবং সি বার্ধক্য বিলম্বিত করে। এছাড়াও করলায় রয়েছে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সৃষ্টিকারী লুটিন এবং ক্যানসার প্রতিরোধকারী লাইকোপিন।
কোষ্ঠকাঠিণ্য দূরীকরণ: করলায় লম্বা ফাইবার থাকায় নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
শ্বাস কষ্ট দূর করে: করলার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের দূষণ দূর করে হজমের গতি বাড়ায়। পানির সঙ্গে মধু ও করলার রস মিশিয়ে খেলে অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস ও গলার প্রদাহ নিরাময় হয়।
খাবারে রুচি বাড়ায়: করলার তিতা খাবারে রুচি বাড়ায়। এক চা চামচ করে করল্লার রস সকাল ও বিকালে খেলে খাবারে রুচি বাড়বে।
বাতের ব্যাথা নিরাময়: বাতব্যাথা তাড়াতে চার চা-চামচ করলা বা উচ্ছে পাতার রস একটু গরম করে দেড় চা চামচ বিশুদ্ধ গাওয়া ঘি মিশিয়ে ভাতের সঙ্গে খেতে হবে।
এছাড়া্ও জল পিপাসা বেড়ে যাওয়া, বমিভাব হওয়া থেকে মুক্তি পেতে উচ্ছে বা করলার পাতার রস উপকারী। এক চা চামচ করলা পাতর রস একটু গরম করে অথবা গরম জলের সঙ্গে মিশিয়ে দিনে ২ থেকে ৩ বার করে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
অতিরিক্ত এলকোহল খাওয়ার অভ্যাস থেকে লিভার ড্যামেজড হলে, সে সমস্যায় করলা পাতার রস দারুন কাজে দেয়। শরীর থেকে অতিরিক্ত এ্যালকোহলিক টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।
সতর্কতা
করলা বাজার থেকে কেনার ৩-৪ দিনের মধ্যেই খেয়ে ফেলা ভাল। রুম টেম্পারেচারে অন্যান্য সবজির সঙ্গে করলা রাখলে পেকে গিয়ে হলুদ হয়ে যেতে পারে। তাই, করলা আলাদা রাখার চেষ্টা করুন। বাজার থেকে আনার পর পরিষ্কার পানিতে করলা ভাল করে ধুয়ে রান্না করুন।
করলার এত উপকারি হলেও একদিনে অতিরিক্ত পরিমানে করলা খাবেন না। এতে তলপেটে সামান্য ব্যথা হতে পারে। ডায়বেটিস পেশেন্টরা ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন সারাদিনে কতটা পরিমাণে তেতো খেতে পারবেন। সুগারের ওষুধের সঙ্গে তেতোর ভারসাম্য বজায় রাখা দরকার। প্রেগনেন্ট মহিলারাও ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে করলার রস খাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here