সৌদি আরব এসে ভাগ্য বিড়ম্বনার শিকার হয়ে এজেন্সির ফাঁদে পড়ে এসে কাজ না পেয়ে এখন রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের মেজেতে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশি প্রবাসীরা।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে দেখা যায় দূতাবাসের কনস্যুলার সার্ভিস কাউন্টারের ফাঁকা জায়গায় কার্পেটে শুয়ে আছেন তারা। কারও চোখে ঘুম নেই। বিছানায় শুয়ে চোখেমুখে কাজ না পাওয়ার অনিশ্চিত আশঙ্কার দৃষ্টি।
দূতাবাসে অবস্থানরত এদের মধ্যে দেলোয়ার হোসেন, মো. সজল মোল্লা, মো. লতিফ মিয়া, মো. নুরুল ইসলাম, মো. আতাউর রহমান জানালেন, বাংলাদেশ থেকে রিক্র্যুইটিং এজেন্সি তাদের সৌদি রিয়াল উপার্জনের বড় বড় স্বপ্ন দেখিয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল, নাজিম, রুবেল জানায়, বেশ কিছুদিন আগে দূতাবাসে এসেছেন তারা। বর্তমানে ২১জন এখানে। বাংলাদেশ থেকে অপরাজিতা ওভারসিস, মেসার্স ফালাহ ইন্টারন্যাশনাল, আহমদ আল-আমিন লিমিটেড, এক্সিলেন্ট ওভারসিজ, বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল এসব রিক্র্যুইটিং এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরব আসেন। তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে নিজেদের এলাকা ঢাকা, বরিশাল, নোয়াখালীর দালালদের মাধ্যমে রিক্র্যুইটিং এজেন্সির ভিসা প্রসেসিং করে সৌদি আরব এসেছেন। এরা এক-একজন অন্তত সাড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা এজেন্সিকে দিয়ে কাজের শর্ত পূরণ করে ঢাকা থেকে বিমানে উঠেন।
সৌদি আরবে এসে তারা ছোট ছোট গ্রুপে রিয়াদের রোকন আল-মাসাদি কোম্পানি ফর কন্ট্রাকটিং, সৌদি ইউনিয়ন, মাজা আল-দোহা কন্ট্রাকটিং এস্টাবলিশমেন্টে কোম্পানিতে নেয়া হয়। আশ্রয় গ্রহণকারীরা বলেছে, সৌদি আরব আসার পর এসব কোম্পানি থেকে ঢাকার শর্ত অনুযায়ী তাদের কাজ দেয়া হয়নি।
এদের অনেকের কাছে সাদা কাগজের শর্ত-পেপারে দেখা গেল ইনডোর ক্লিনার, সাধারণ শ্রমিক ইত্যাদি কাজে ৮শ রিয়াল বেতন এবং খাবারের জন্য অতিরিক্ত ২শ রিয়াল লেখা আছে। লেখা আছে, কাজের সময়সীমা দৈনিক আট ঘণ্টা এবং অতিরিক্ত কাজে ওভারটাই হিসেবে প্রতি ১ ঘণ্টায় ১.৫ ঘণ্টা করে মূল বেতনের হিসাবে দেয়া হবে। তারা বলেছে, এসব শর্তের সবকিছুই এখন মিথ্যে স্বপ্ন এবং প্রতারণায় পরিণত হয়েছে।
তারা বলেছে, সৌদি আরবে এসব কোম্পানি তাদের শর্তানুযায়ী কাজ না দিয়ে বিভিন্ন স্থানে সাময়িকভাবে কাজ করিয়ে বেতনভাতা কিছুই দেয়নি। তাছাড়া থাকার জায়গাগুলি ছিল অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। তারা অভিযোগ করেন, সৌদি কোম্পানির কর্মকর্তাদের কাছে মাসিক বেতন চাইতে গেলে তাদেরকে মারধর এবং কোম্পানি থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়।
দুর্ভোগী প্রবাসীরা জানালেন, গত্যন্তর না দেখে কোম্পানি থেকে বের হয়ে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম-কাউন্সেলর মো. সারোয়ার আলম জানান, তাদের খাওয়া এবং থাকার ব্যবস্থা করে দিয়ে বলেছেন, এসব কোম্পানির সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করে একটা ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here