গাজীপুর সিটি নির্বাচন: প্রার্থীদের পরিকল্পিত নগরীর অঙ্গীকার

0
725
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৭ মেয়র প্রার্থী এক মঞ্চে উঠে আধুনিক ও পরিকল্পিত নগর গড়ার অঙ্গীকার করেছেন। গতকাল গাজীপুর কনভেনশন সেন্টারে সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন আয়োজিত মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠানে প্রার্থীরা এ অঙ্গীকার করেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সাত মেয়র প্রার্থী এক মঞ্চে বসে এলাকার উন্নয়নে নিজেদের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন এবং উপস্থিত ভোটারদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুজনের গাজীপুর মহানগর শাখার সভাপতি মো. মনিরুল ইসলাম রাজিব। সুজনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় এতে অংশ নেন ৭ মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের মো. জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা), বিএনপির হাসানউদ্দিন সরকার (ধানের শীষ), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কাজী মো. রুহুল আমীন (কাস্তে), ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা ফজলুর রহমান (মিনার), ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ-এর অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন (মোমবাতি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মো. নাসির উদ্দিন (হাতপাখা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমেদ (টেবিল ঘড়ি)।

অনুষ্ঠানে আয়োজকদের পক্ষ থেকে দেয়া ১৩ দফা অঙ্গীকারনামা দর্শকদের সামনে পড়ে শোনান সুজনের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মুর্শিকুলী আহমদ শিমুল। পরে প্রার্থীগণ অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেন। এর পর প্রার্থীরা দর্শকদের সরাসরি প্রশ্নের জবাব দেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সুজনের জেলা সম্পাদক মো. রুহুল আমিন সজিব। সুজনের কেন্দ্রীয় প্রধান সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার অনুষ্ঠানে সহসঞ্চালক ছিলেন। মূলত পুরো অনুষ্ঠানে প্রধান দুই দলের প্রার্থীর প্রশ্নোত্তর পর্ব দেখতে অনুষ্ঠানস্থলে প্রচুর জনসমাগম হয়। উপস্থিত মেয়র প্রার্থী প্রতিজনকে তিনটি করে প্রশ্ন করা হয় দর্শকসারি থেকে। তারা সে সব প্রশ্নের জবাব দেন।

দর্শকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জাপান ও চীনের সহায়তায় গাজীপুর সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ৫৭টি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছি। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকারের সমন্বয়ে জনগণের সহায়তায় আমি নির্বাচিত হলে এসব মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করবো। আমি সিটির অভ্যন্তরে ৫টি অর্থনৈতিক জোন ও শ্রমিকদের বাসস্থানের জন্য ৮টি বসবাসের জোন তৈরি করবো। তিনি বলেন, আমি রাজনীতি করি মানুষের জন্য। আমি সবার জন্য গাজীপুর সিটিকে একটি পরিকল্পিত আধুনিক নগর হিসেবে গড়তে চাই। শিক্ষা ফাউন্ডেশন গঠন করে বাংলা, ইংরেজি, আরবি ও কওমি শিক্ষাকে প্রধান্য দিয়ে সবার জন্য শিক্ষা বিস্তারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছি। ২২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। আমি ফুটপাথসহ সুষ্ঠু ড্রেনেজ নির্মাণ করে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন করবো। গাজীপুর সিটিকে একটি ডাইনামিক মডেল শহর গড়তে সবার সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। আমি এ জন্য অপজিট পার্টির সহযোগিতা কামনা করি।

হাসানউদ্দিন সরকার বলেন, স্থানীয় সরকারের উপর কেন্দ্রীয় সরকার হস্তক্ষেপ করলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। বর্তমান মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানকে বিভিন্ন সময়ে কারাগারে রাখা হয়েছে। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তিনি আশানুরূপ উন্নয়ন করতে পারেননি। গাজীপুর একটি শিল্প সমৃদ্ধ শ্রমিক এলাকা। গাজীপুর সিটিকে উন্নয়ন করতে হলে পরিকল্পিত ভাবে প্ল্যানমাফিক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাউন্সিলরদের সহযোগিতা নিয়ে আমি উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করবো। তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে টঙ্গী পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলাম। সে সময় আমি আন্তরিকভাবে পৌরসভার উন্নয়নকাজ সম্পন্ন করেছি।

ইসলামী ঐক্য জোটের প্রার্থী ফজলুর রহমান বলেন, ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়া ও তাদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সরকার ও প্রশাসনের। তিনি শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে বলেন, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়া সম্ভব নয়। তাই তিনি নির্বাচিত হলে বর্তমান শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষা সংযোজন করবেন।
ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মো. জালাল উদ্দিন, এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আধুনিক ও কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষাব্যবস্থা গ্রহণ ও তথ্য-প্রযুক্তির নগরী গড়তে আইটি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিবেন এবং যুবসমাজকে মাদকের কবল থেকে রক্ষা করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পুলিশ, প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একত্রে কাজ করবেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী নাসির উদ্দিন বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে নগরীর গ্যাস সমস্যা সমাধানের উদ্যোগে নেবেন। মাদক উদ্ধারের নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি বন্ধের পদক্ষেপ নেবেন। জঙ্গিবাদ রুখবেন।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মেয়র প্রার্থী কাজী মো. রুহুল আমীন বলেন, তিনি যানজটমুক্ত, পরিচ্ছন্ন আধুনিক শহর গড়ে তুলবেন। শ্রমিকদের কর্মসংস্থান ও তাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদ বলেন, যানজট নিরসন ও নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে সিটি করপোরেশনের সব রাস্তা দ্বিগুণ প্রশস্ত ও পর্যাপ্ত নতুন রাস্তা তৈরি করবেন। তিনি দুর্নীতি করবেন না। নির্বাচনের আগে হলফনামায় যে সম্পদ ঘোষণা করেছেন নির্বাচিত হলে দায়িত্বগ্রহণ শেষেও হলফনামার মাধ্যমে সম্পদের হিসাব নগরবাসীকে পেশ করবেন। তিনি ২-৩ কাঠার ছোট ছোট বাড়ির মালিকদের ট্যাক্স মওকুফ করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here