চাকরির বাইরে তাদের অবসর জীবন কেমন কাটে? ঢাকা শহর হিসেবে বড় হলেও এখানে তরুণীদের বিনোদনের কতটা সুযোগ রয়েছে? অফিস আর বাসার নিয়মিত রুটিনের বাইরে তারা কী করেন?
চাকরি করেন এমন কিছু তরুণীর সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি বাংলা। যার মধ্যে অধিকাংশ তরুণী বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই তাদের অবসর সময় বেশি কাটে।
ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন আমেনা আখতার। তিনি ভালো আয় করেন, কিন্তু বলছেন, নিজের বিনোদনের কথা চিন্তা করার সময় তাকে পারিবারিক অনুশাসন আর সমাজের কথাও চিন্তা করতে হয়।
আমেনা আখতার বলেন, ‘আমার স্বাধীনমতো, নিজের ইচ্ছামতো নিরাপদে ঘুরব-ফিরব সেটা এখানে সম্ভব না। যেমন হয়তো অফিসের পর বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরলাম, এরপর রাত ৯টা বা ১০টায় বাসায় ফিরে বিশ্রাম নিলাম, যাতে আমার রিফ্রেশমেন্টও হলো, ঘোরাফেরাও হলো আবার কাজও হলো, কিন্তু এই ঢাকাতে সম্ভব না।’ প্রিয়.কম
এর কারণ বলতে গিয়ে আমেনা আখতার বলেন, ‘আমি যে সোসাইটিতে থাকি, সেখানে রাত ১০টার সময় যদি কোনো মেয়ে বাসায় যায়, তখন অনেক কথা উঠবে। এ জন্য সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তাই মেয়েদের স্বাধীনতার জন্য সমাজেরও পরিবর্তন দরকার।’
অনেক তরুণী বলছেন, ঘুরে বেড়ানো বা রেস্তোরাঁয় খাওয়া-দাওয়া করা তাদের বিনোদনের অন্যতম উপায়।
তরুণী চাকরিজীবীরা জানান, ঢাকায় চলাচলের সমস্যা, যানজট আর নিরাপত্তার অভাবের কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের ঘরে সামাজিক মাধ্যমে বা টেলিভিশন দেখে সময় বেশি কাটে। তার বিবাহিত তরুণীদের অফিসের বাইরে সংসার সামলাতে অনেক সময় কেটে যায়।
তাহেরা সুলতানা নামের এক তরুণী বলেন, ‘একজন ছেলের মতো আমরা ইচ্ছা করলেই বাইরে যেতে বা ঘুরাফিরা করতে পারছি না। এ কারণেই সামাজিক মাধ্যমগুলোতেই আমাদের বেশি সময় কাটছে। এর মাধ্যমে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করেই বেশিরভাগ সময় কাটে।’
অনেকে শপিং মলে ঘুরে বেড়াতে বা কেনাকাটা করতে পছন্দ করেন। এর বাইরে তাদের কাটানোর আরেকটি উপায় কোনো উপলক্ষ ধরে রেস্তোরাঁয় খাওয়া-দাওয়া করা।
এ সম্পর্কে আমেনা আখতার বলেন, ‘অনেক সময় পরিবার বা বন্ধুদের কেউ বলে, ভালো লাগছে না, চলো কোথাও থেকে ঘুরে আসি। কিন্তু কোথায় ঘুরতে যাব? পার্কের যে অবস্থা, সেখানে তো যাওয়া যায় না। নিরাপত্তার অভাব। তখন চিন্তা করি, একটা ভালো রেস্তোরাঁয় গিয়ে আজ একজন খাওয়াচ্ছে, কাল আরেকজন। এটাই যেন এখন আমাদের সবচেয়ে বড় বিনোদন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘মেয়েদের জন্য ঢাকার মতো একটি মহানগরীতে আরও কিছু সুযোগ সুবিধা থাকা উচিত। তিনি বলেন, ‘এ রকম যদি কোনো জায়গা বা সংস্থা থাকত, যেখানে গিয়ে মেয়েরা ছেলেদের মতো সময় কাটাতে পারবে, যেমন টেনিস, ব্যাডমিন্টন বা গলফ খেলতে পারবে, তাহলে খুব ভালো হতো। ঢাকায় যে দুই-একটি ক্লাব রয়েছে, সেখানে সবাই যেতে পারে না বা অনেক মেয়েদের জন্য নিরাপদও না। তাই সবার জন্য এ রকম জায়গা হলে অনেকে যেতে পারত।’
সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, গত দুই দশকের তুলনায় বাংলাদেশের মেয়েদের সামাজিক অবস্থানের যেমন অনেক পরিবর্তন হয়েছে, তেমনি তাদের অবসর বা সময় কাটানোর ধরনেরও অনেক পরিবর্তন এসেছে।
সমাজবিজ্ঞানী সামিনা লুৎফা বলেন, ‘একসময় বই পড়া বা সপ্তাহে এক দিন সিনেমা দেখার মধ্যে যে বিনোদন সীমাবদ্ধ ছিল, তা এখন গণ্ডি পেরিয়ে দেশের ভেতরে বাইরে ভ্রমণেও রূপান্তরিত হচ্ছে ‘
সামিনা লুৎফা আরও বলেন, ‘গত দুই দশকে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত নারীরা অনেক বাইরে এসেছে। অবসর নিয়ে তাদের ধারণাও অনেক পাল্টে গেছে। অনেকে হয়তো কর্পোরেট চাকরি শেষে, যানজট ঠেলে আসা-যাওয়ার পর বিনোদনের ইচ্ছাটাও থাকে না।
আবার নিরাপত্তারও অনেক অভাব আছে। তারপরেও নিজের বিনোদন নিয়ে নারীদের মনোভাবের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। হয়তো আমাদের দেশে ক্লাব, পাব—এগুলো সে অর্থে নেই বা যা আছে, তাও হাতেগোনা উচ্চবিত্তদের গণ্ডির মধ্যে। কিন্তু সেটাই তো একমাত্র বিনোদন নয়।’