সূত্র জানায়, আইএমইডির চিহ্নিত সমস্যাগুলোর অন্যতম কয়েকটি হচ্ছে- প্রকল্প নেয়ার আগে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা না হওয়া, প্রকল্পের লজিক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক যথাযথ না হওয়া, বারবার প্রকল্প সংশোধন, সার্বক্ষণিক তদারকির অভাব, অনভিজ্ঞ ও অনাগ্রহী প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ, ভূমি অধিগ্রহণে পদ্ধতিগত দীর্ঘসূত্রতা এবং প্রকল্পের বছরভিত্তিক অডিট না হওয়া। এগুলো নতুন অর্থবছরেও বহাল থাকায় শেষ সময়ে তড়িঘড়ি অর্থ ব্যয় করতে গিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি ও মানহীন বাস্তবায়ন হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক মোস্তফা কে. মুজেরি শনিবার বলেন, এডিপি বাস্তবায়নে গত কয়েক বছরের যে অভিজ্ঞতা তাতে দেখা গেছে, বাস্তবায়নে ব্যাপক দুর্বলতা রয়েছে। যেভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন বাড়ানো প্রয়োজন সেরকম সক্ষমতা নেই। তাছাড়া এ অর্থবছরে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে জাতীয় নির্বাচন। এ সময় পরিবেশ নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই শঙ্কা থাকে। এ অর্থবছরে এডিপির আকারও বেড়েছে। কিন্তু অন্যান্য অর্থবছরের তুলনায় এ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের কার্যকরী সময় কম পাওয়া যাবে। তাই এটি একটি অন্যতম বাধা হতে পারে। সেজন্য পরিকল্পনা কমিশন থেকে মন্ত্রণালয়গুলোকে একটি নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে, যা অর্থবছরের শুরু থেকেই এডিপি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে পারে।

তবে ভিন্নমত পোষণ করেছেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। শনিবার তিনি যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার ছোট আকারের হলেও রুটিন কাজগুলো সবই চলবে। আর এডিপি বাস্তবায়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। তাছাড়া সরকারের আমলাতন্ত্র তো ঠিকই থাকবে। তাই প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সেই সঙ্গে অন্যান্য যেসব জটিলতা রয়েছে, সেগুলোও ধীরে ধীরে দূর করা হচ্ছে। যেমন- এ অর্থবছর থেকেই প্রকল্প পরিচালকরা শুরু থেকেই দুই কিস্তির টাকা তুলতে পারবেন। এটি প্রকল্পের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় একটি অন্যতম সংস্কার এবং বড় উদ্যোগ। এক্ষেত্রে অর্থবছরের শুরুর দিন থেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। কিন্তু এখন অর্থছাড় সহজ হওয়ায় প্রকল্পের বাস্তবায়নে গতি বাড়বে।

সূত্র জানায়, নির্বাচনী বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য এডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে ৭ হাজার ৮৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা খরচের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। এর আগে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, এডিপি হচ্ছে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) লাইফলাইন। তাই আমরা পরিকল্পিতভাবে এগোচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালে উন্নত দেশে যাওয়া। অর্থাৎ এসডিজির হাত ধরে উন্নত দেশে যেতে চাই। নির্বাচনের কারণে কোনো উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে না। বিশেষ প্রয়োজন না হলে আর সংশোধিত এডিপিও করা হবে না। মানসম্মত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনা হবে। ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, নির্বাচন হয়তো খুব বেশি বাধা হবে না। তবে চলমান যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেগুলোকেই মোকাবেলা করতে হবে। আর এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে না পারলে এডিপির বাস্তবায়ন সবসময় যেমন হয় সেরকমই হবে। বাড়বে না।

সুত্র: যুগান্তর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here