কে জানতো বিশ্বসেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির কয়েক ঘন্টা পরেই তারই মতো কাঁদতে কাঁদতে বিশ্বকাপের আসর থেকে বিদায় নেবেন সাম্প্রতিক সময়ের আরেক কিংবদন্তিতুল্য ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো! এক দুঃস্বপ্ন গ্রাস করেছে আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল ও বিশ্বজুড়ে তাদের কোটি কোটি ভক্তকে। তারা স্বপ্ন দেখেছিলেন এবার বিশ্বকাপটা হয়তো হাতে উঠবে লিওনেল মেসি অথবা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর। কিন্তু হায়! সবই দুরাশায় পরিণত করে একইভাবে নিজে কাঁদলেন তারা। কাঁদালেন কোটি কোটি ভক্তকে। বিশ্বে অনেক গ্রেট ফুটবল খেলোয়ার আছেন যারা কখনোই বিশ্বকাপ জিততে পারেন নি। সম্ভবত  সেই তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছেন মেসি ও রোনালদো। তাদের বিশ্বকাপ ইতিহাস সম্ভবত রাশিয়াতেই থেমে যাচ্ছে। মেসির বয়স এখন ৩১ বছর। অন্যদিকে রোনালদোর বয়স ৩৩ বছর। তারা তাদের ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ দিয়েছেন। কিন্তু না, নিজের দলের হয়ে, নিজের দেশকে সর্বোচ্চ ফল এনে দিতে পারেন নি। উল্টো রেফারি যখন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে হলুদ কার্ড দেখান তখন তিনি তার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন খিটমিটে মেজাজে। তার এখনও ফুটবল মাঠে স্কোর করার সামর্থ্য আছে। তবু আরেকটি বিশ্বকাপ পর্যন্ত তাদের যে বয়স দাঁড়াবে তাতে তারা থাকবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে। এরই মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে দল থেকে অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দিতে পারেন মেসি। রোনালদো কি করবেন তা এখনও জানা যায় নি। তাদের ব্যক্তিগত যে নৈপুণ্য তা সত্ত্বেও দু’জনের একজনও শনিবার রাতে নকআউট পর্বে একটি গোলও করতে পারেন নি। কাজানাকা নদীর তীরটি এদিন ছিল মেঘমুক্ত। তার পাড়ে মেসি ও তার টিমমেটরা যেন ফুরিয়ে গিয়েছিলেন ফরাসিদের কাছে। ফরাসিরা যে দক্ষতা, গতি, তারুণ্য দেখিয়েছেন তা চোখে পড়ার মতো। সে তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। মনে হয়েছিল তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। ২-২ গোলের পর ফ্রান্স যখন ব্যবধান ৩-২ করে ফেলে তখন মেসির মুখের ওপর কালো মেঘ। তিনি যেভাবে তাকিয়ে ছিলেন তাতে অসহায়ত্ব ফুটে ওঠে। এর কিছুক্ষণ পরেই আরও একটি গোল। ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-২। তখন মেসি ও দল যেন ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সবার চোখেমুখে হতাশা। আর শক্তিহীন হয়ে পড়েছে সবাই। যেন খেলার ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গেছে। এখন আগামী শুক্রবার কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে ফ্রান্স ও উরুগুয়ে। সে সময় পর্যন্ত ফুটবলের এ যুগের সবচেয়ে নেতৃস্থানীয় দুটি মানুষ মেসি ও রোনালদো হয়তো তাদের ভবিষ্যত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবেন। তারা সিদ্ধান্ত নেবেন জাতীয় দলের হয়ে আর খেলবেন কিনা। তারা দু’জনেই জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী। আর্জেন্টিনা ও মেসি ২০০৮ সালে অলিম্পিক স্বর্ণ বিজয়ী। অন্যদিকে বিস্ময় সৃষ্টি করে ২০১৬ সালে পর্তুগাল ও রোনালদো জিতেছেন ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। এ ছাড়া তারা ফুটবলের আরো বড় বড় পদক, পুরস্কার জিতেছেন। কিন্তু ফুটবলের সবচেয়ে বড় পুরস্কারটি থেকে গেল তাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। ওই বিশ্বকাপটি এখন অন্য কারো হাতে শোভা পাবে। হতে পারে তা ফ্রান্স বা উরুগুয়ের কারো হাতে যাবে। আর তা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে হবে লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here