জামায়াত প্রার্থী হলে ২০ দলের ভোট ভাগ হয়ে গেলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান সুবিধা পাবেন, এটা সহজেই অনুমেয়। তাই ক্ষমতাসীন দল চাইছে জামায়াতের প্রার্থী থাকুক এখানে।
তবে বিএনপি চেষ্টা করছে জামায়াতকে ভোট থেকে সরিয়ে দিতে। মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন জানান, ‘জামায়াত প্রার্থী দিলেও জোটের পক্ষ থেকে তাদের সাথে কথাবার্তা চলছে। আশা করি জামায়াত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে।’
বিএনপির অন্য একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ‘জামায়াত বাড়াবাড়ি করছে। তারা কোন হিসাবে মেয়র পদে নির্বাচন করতে চায়? এককভাবে নির্বাচন করলে জিতে আসার মতো অবস্থান তাদের আছে? আশা করব কেন্দ্রীয় নেতারা জামায়াতের সঙ্গে কথা বলে এর একটা সুরাহা করবেন।’
ওই বিএনপি নেতার ধারণা, জামায়াত আওয়ামী লীগকে সুবিধা করে দিতে কোনো কারণে এই কাজ করতে চাইছে। কিন্তু তাদেরকে সে সুযোগ দেয়া হবে না।
অন্য একজন নেতা বলেন, ‘জামায়াতের সমর্থন ছাড়াও সিলেটে নানা সময় বিএনপি জিতেছে। তারা যদি মনে করে তাদেরকে ছাড়া আমাদের চলবে না, তাহলে আমি বলব, আসলে আমাদেরকে ছাড়া তাদের চলবে না।’
এরই মধ্যে খুলনা এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন বড় ব্যবধানে হেরে ভোটের লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়েছে বিএনপি। এই অবস্থায় আগামী ৩০ জুলাই হতে যাওয়া ভোটে জোটের মধ্যে ঐক্য না থাকলে বেকায়দায় পড়তে হবে ক্ষমতা কাঠামোর বাইরে থাকা দলটিকে।
রাজশাহীতেও জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করে রেখেছিল আগেভাগে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে সমর্থন জানিয়ে সরে দাঁড়িয়েছে তারা। বরিশালের ভোট নিয়ে জামায়াতের কোনো ভাবনা নেই।
তবে সিলেটে যদি বিএনপি-জামায়াত পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে যায়, তাহলে রাজশাহী ও বরিশালে ঐক্য অটুট থাকবে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। এ কারণেই বিএনপির সিলেটের পাশাপাশি অন্য দুই নগরীর পাশাপাশি সারাদেশের সমর্থকরই জানা বুঝার চেষ্টা করছেন আসলে জামায়াত কী করতে যাচ্ছে।
সিলেটে জামায়াতের হয়ে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন দিয়েছেন দলের মহানগর শাখার আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
নিবন্ধন হারানো জামায়াতের দলীয় প্রতীকে ভোট করার সুযোগ নেই। সে জন্য প্রতীক হিসেবে টেবিল ঘড়ি অথবা বাস চাওয়ার কথা জানিয়েছেন জামায়াত নেতা।
এর আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী দিলেও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার আগে আগে তা তুলে নেয় জামায়াত। তবে সিলেটের বিষয়টি ভিন্ন বলে জানিয়েছেন জুবায়ের।
জামায়াতের প্রার্থী বলেন, ‘আমরা সিলেট সিটি নির্বাচনকে ‘ওপেন’ করে রাখার জন্য জোটের নেতাদের জানিয়ে রেখেছি।’
২০১৩ সালেও সিলেটে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছিলেন জুবায়ের। এবার ভোট করবেন- এই সিদ্ধান্তে অটল জামায়াত নেতা বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন জায়গায় বিএনপিকে ছাড় দিয়েছি। এখন সিলেটে মেয়র পদে তাদের সমর্থন চেয়েছি। কিন্তু বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তাই আমি আলাদাভাবে প্রার্থী হয়েছি।’
জামায়াতের এই মনোভাবে যারপরনাই বিরক্ত সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ। তিনি বলেন, ‘সিলেট মহানগর একটি মর্যাদাপূর্ণ এলাকা। এখানে বিভিন্ন দলের হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছে। জামায়াত জোটের শরিক দল হওয়ার কারণে বিভিন্ন বিষয়ে মতামত দিতেই পারে। তাদের দাবি সিলেট সিটির নির্বাচন ওপেন করে দেওয়া, তবে আমরা এর বিপক্ষে মতামত দিয়েছি। এখানে ওপেন নির্বাচনের কোনও প্রশ্নই আসে না।’