সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে নানা তৎপরতা
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিদেশি কূটনীতিকদের নানামুখী তৎপরতা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন তারা।
পাশাপাশি সরকারিসহ সংসদের ভেতরের-বাইরের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গেও চলছে কূটনীতিকদের প্রকাশ্য বা রুদ্ধদ্বার মতবিনিময়। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে বিভিন্ন মাধ্যমে জানার চেষ্টা করছেন কূটনীতিকরা। কী করণীয়-এ নিয়ে নিজেদের মধ্যেও বৈঠক করছেন তারা।
বিএনপি নেতাদের ভাষ্য,কূটনীতিকরা সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং স্বাধীন ও বিশ্বস্ত নির্বাচন কমিশন প্রত্যাশা করছেন। আর সরকারি দলের নেতারা বলছেন, সংবিধানে উল্লেখিত বিধি-বিধান অনুযায়ী যথাযথভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাইরের কারো পরামর্শের দরকার নেই।
গত সোমবার রাতে পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকরা ঢাকায় নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। সেখানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট, যুক্তরাজ্যের ঢাকাস্থ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেইকসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিক উপস্থিত ছিলেন। সূত্র বলেছে, বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সিটি নির্বাচন এবং এসব বিষয়ে তাদের করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার রাতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বাসায় গিয়েছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। বৈঠককালে তিনি আশাপ্রকাশ করেন, আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সব দলের অংশগ্রহণেই অনুষ্ঠিত হবে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও দাতাগোষ্ঠী এবার কোনোরকম প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দেখতে চায় না। তাই সর্বজন গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবছেন তারা। আদালতের রায়ে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জেলে বন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দলের শীর্ষ নেত্রীকে ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। এ অবস্থায় কূটনীতিকরা সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মুক্তি এবং আগামী নির্বাচনে বিএনপির অবস্থান কী হবে, সে বিষয়ে ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করছেন।
জাতীয় নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠেয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনও গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছেন বিদেশিরা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে বলে মনে করেন তারা। আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করোপরেশন নির্বাচনেও দৃষ্টি রয়েছে তাদের।
গত শনিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট। বৈঠকে আসন্ন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনিয়মমুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি। বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশ সরকার আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার গ্রহণযোগ্যভাবে আয়োজন করবে বলে প্রত্যাশা যুক্তরাষ্ট্রের।
বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে জানানো হয় মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে। এ সময় ওবায়দুল কাদেরকে বার্নিকাট বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরিবেশেরই প্রতিফলন ঘটে জাতীয় নির্বাচনে। তাই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে চলতি মাসের শুরুতে বাংলাদেশ সফরে আসার পর জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী সুষ্ঠু নির্বাচনসংক্রান্ত প্রস্তুতির বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আগামী নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে এবং এটি অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।
প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগের পরিস্থিতিও তুলে ধরেন জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে। ওই সময় বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটকে নির্বাচনে আনতে সরকারি দলের তরফে এবং ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী যেসব উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেসবের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় নতুন নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) ডেলিগেশন প্রধান ও রাষ্ট্রদূত রেনসিয়া তিরিঙ্ক। সাক্ষাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইইউ প্রতিনিধির আশাবাদের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রেস সচিব জানান, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন কমিশন এবং স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের ব্যবস্থা এবং ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরিতে সহায়তার জন্য ইইউ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।
এ সপ্তাহে ঢাকা সফর করা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যুরো অব সাউথ এশিয়ার পরিচালক গ্রেইথ বেলে এবং ঢাকাস্থ হাই কমিশনার অ্যালিসন ব্লেইক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে এক বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে জানতে চান।
সুত্র জানায়, পররাষ্ট্র ভবনে ঘণ্টাখানেক স্থায়ী ওই বৈঠকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য করতে সরকারের প্রস্তুতি তুলে ধরেন সচিব। নির্বাচনকালীন সরকার রুটিন কাজকর্মের বাইরে যে কিছু করতে পারে না, তা নিয়েও সচিব তাদের অবহিত করেন। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড সম্প্রতি ঢাকা সফরে এসে বাংলাদেশের সব স্তরের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে প্রত্যাশা করেন।
সুত্র: আমাদের সময়