আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার হওয়া রাশিয়ান গুপ্তচর সুন্দরী মারিয়া বাতিনার গোপন অধ্যায়। তিনি অনেকদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে বসে রাশিয়ার হয়ে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছিলেন। এ জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে গড়ে তোলেন সম্পর্ক। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় ও ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি মাঝে মাঝেই সাক্ষাত করতেন। এক্সক্লুসিভ হিসেবে এ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটনে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছিল তার যোগাযোগ। তিনি রাশিয়ার একজন কর্মকর্তার সঙ্গে ২০১৫ সাল থেকেই সাক্ষাত করতেন। এসব বিষয়ে জানেন এমন বেশ কিছু মানুষ ওইসব বৈঠকের কথা ফাঁস করেছেন। তার ওপর ভিত্তি করে ওয়াশিংটনের একটি থিংকট্যাংক আয়োজন করেছিল ওই বৈঠক। তার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে রিপোর্ট। বলা হয়েছে ওই সময়ে ফেডারেল রিজার্ভের ভাইস চেয়ারম্যান স্ট্যানলি ফিশার, নাথান শিটস এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি নাথান শিটস জড়িত ছিলেন এতে। রাশিয়ার তখনকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আলেকজান্দার তোরশিনের সঙ্গে ২০১৫ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান মারিয়া বুতিনা। তখন ক্ষমতায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে ফিশার ও শিটনের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠকে অংশ নেন তারা।  এই দুটি বৈঠকের কথা এর আগে কখনো  প্রকাশ হয় নি। এর মাধ্যমে মারিয়া বুতিনা উচ্চ পর্যায়ের ক্ষমতাধরদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক নেতারা ও বিশেষ স্বার্থ অনুসন্ধানী গ্রুপের কাছে সুবিধা চান। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি এবং ফেডারল রিজার্ভের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মারিয়া বুতিনার অংশগ্রহণের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নেই তার আইনজীবী রবার্ট ড্রিসকোলের কাছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার সম্পর্ককে সমর্থন করার জন্য ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্র বিষয়ক থিংকট্যাংক সেন্টার ফর দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট মারিয়া বুতিনার সঙ্গে ফিশার ও শিটসের বৈঠক আয়োজন করে। এ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক পল স্যান্ডারস ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে তখনকার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে একটি আহ্বান জানান। আর তা হলো রাশিয়ার সঙ্গে উত্তেজনাকে প্রশমিত করা। এ সংস্থার একটি ম্যাগাজিন দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের বিভিন্ন লেখায় এ থিংকট্যাংকের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করতে থাকেন। তারা বোঝাতে থাকেন রাশিয়ার সঙ্গে সাংঘর্ষিক সম্পর্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রকে কি মূল্য দিতে হচ্ছে। অথবা ইউরেশিয়ার সংঘর্ষে জড়িত থাকার জন্য কি মূল্য দিতে হচ্ছে।

মারিয়া বুতিনার সঙ্গে ফিশার ও শিটসের বৈঠকের বিষয়টি সেন্টার ফর দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের একটি রিপোর্টে প্রামাণ্য আকারে তুলে ধরা হয়েছে। ওই রিপোর্টটি দেখতে পেয়েছে রয়টার্স। ওই রিপোর্টে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তাদের রাশিয়া সম্পর্কিত কর্মকান্ডের বিষয়টি জোরালোভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়, ওইসব বৈঠক যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তিদের একত্রিত  করেছে।
গত সপ্তাহে রাশিয়ার ২৯ বছর বয়সী গুপ্তচর মারিয়া বুতিনাকে যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিচারক জেলে পাঠান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটররা যুক্তি তুলে ধরে বলেন, রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বুতিনার যোগাযোগ আছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে পালিয়ে যেতে পারেন। এমন অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন বুতিনা। নিজের পক্ষে কথা বলার জন্য বুধবার তাকে আদালতে তোলার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে বানোয়াট দাবি করে তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে ফোন করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here