চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকার বাসায়-বাসায় ও গেস্ট হাউজে তরুণীদের সেক্স বাণিজ্য চলছে। সামাজিক পরিবেশে এমন অসামাজিক কাজে জড়িত বেপরোয়া ব্যাচেলর তরুণীদের নিয়ে চিন্তিত পুলিশ। নগরীর অভিজাত এলাকা খ্যাত মেহেদিবাগ ও খুলশী আবাসিক এলাকায় গত দু’রাত অভিযান চাালিয়ে সেক্স বাণিজ্যে জড়িত এমন ২৪ তরুণী ও ২৬ জন তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের কেউই চট্টগ্রামের বাসিন্দা নয় বলে জানান পুলিশ। গ্রেপ্তারদের মধ্যে একজন বাসার দারোয়ান, অন্যজন গেস্ট হাউজের ম্যানেজার বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এসআই লিয়াকত হোসেন। এসআই লিয়াকত জানান, গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়ে রোববার মধ্যরাতে মেহেদিবাগের আমিরবাগ আবাসিক এলাকার প্রবেশমুখে মোর্শেদ ভবন নামে একটি ভবনের পাঁচতলার বাসায় অভিযান চালিয়ে ১১ তরুণী ও ১০ পুরুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরমধ্যে শরীফ নামে ওই বাসার একজন দারোয়ান রয়েছে। তার বাড়ি কুমিল্লা জেলার লাকসামে। তিনি বলেন, অভিযানের সময় তরুণ-তরুণীদের বেশিরভাগই আপত্তিকর অবস্থায় ছিল। অভিযানে ওই ভবনের বাসা থেকে মাদকদ্রব্য ও কিছু সেক্স সরঞ্জামও উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে। এদিকে, শনিবার মধ্যরাতেও খুলশী থানা এলাকায় একটি গেস্ট হাউজ থেকে অসামাজিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৯ নারী-পুরুষকে আটক করেছে পুলিশ। সিক্স স্বর্ণালী নামে ওই গেস্ট হাউজে অভিযান পরিচালনা করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসি (নর্থ) কাজল কান্তি চৌধুরী জানান, গেস্ট হাউজটিতে তরুণীদের জড়ো করে দীর্ঘদিন অসামাজিক কাজ চালিয়ে আসার তথ্য ছিল। সে মোতাবেক অভিযান চালিয়ে ১৩ জন তরুণী ১৬ তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে গেস্ট হাউজের ম্যানেজার ইয়াছিন মামুনও রয়েছেন। তার বাড়িও কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দিতে। তবে, অভিযানের সময় গেস্ট হাউজের মালিক আবুল হোসেন ও কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী পালিয়ে যান। এ ঘটনায় গেস্ট হাউজের মালিকের বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।

নগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে বিভিন্ন অভিজাত হোটেল ও স্পা সেন্টার ছাড়িয়ে এখন বিভিন্ন আবাসিক এলাকার বাসায়-বাসায় এবং গেস্ট হাউজে তরুণীদের সেক্স বাণিজ্য শুরু হয়েছে। বিশেষ করে নগরীর অভিজাত মৌসুমি আবাসিক এলাকা, হিলভিউ আবাসিক এলাকা, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, মোহাম্মদপুর আবাসিক এলাকা, খুলশী আবাসিক এলাকা, মেহেদিবাগ আমিরবাগ আবাসিক এলাকা, আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকা, হালিশহর আবাসিক এলাকার সামাজিক পরিবেশেও অসামাজিক কার্যকলাপ শুরু হওয়ায় পুলিশ প্রশাসন ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়েছে। নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. কামরুজ্জামান জানান, নগরীর অলিগলিতে এমন কিছু ভাসমান তরুণী রয়েছে যাদের বাড়ি চট্টগ্রামের বাইরে। যারা একেবারে বেপরোয়া। ব্যাচেলর এসব তরুণী প্রায়ই মাদকাসক্ত থাকে।

বিশেষ করে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, বরিশাল, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট ও পার্বত্যজেলা রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি, বান্দরবান এবং কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা তরুণীরা সেক্স বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে। এরমধ্যে পেশাদার পতিতা যেমন রয়েছে, তেমনি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরুণীও রয়েছে। এসব তরুণী ছয় থেকে সাত জন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০-১২ জন গ্রুপ করে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী পরিচয়ে বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ব্যাচেলর বাসা ভাড়া নিয়ে সেক্স বাণিজ্য চালাচ্ছে। এদের খদ্দের জুটাতে বাসার দারোয়ান বা তাদের নিজস্ব লোককে ব্যবহার করছে। আবার অসাধু শ্রেণির কিছু পুরুষ এসব তরুণীদের বিভিন্ন গেস্ট হাউজে জড়ো করে সেক্স বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। এমন একটি তালিকা বর্তমানে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে রয়েছে। যাদের এই অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে পুলিশ প্রশাসন অভিযানে নেমেছে। গত দু’দিনে অভিযান চালিয়ে এমন ২৪ জন তরুণী ও ২৬ জন তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অসামাজিক এই কার্যকলাপের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

সুত্র: মানবজমিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here