রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে জাতিসংঘের দেওয়া প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার সরকার। জাতিসংঘ গঠিত স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনটি বুধবার প্রত্যাখ্যান করে মিয়ানমার। খবর এএফপির
মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ হুতে রাষ্ট্রীয় পত্রিকা গ্লোবাল নিউ লাইটকে বলেন, মিয়ানমারে প্রবেশের জন্য আমরা এফএফএম (জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন) এর কর্মকর্তাদের অনুমতি দেইনি। এ কারণে মানবাধিকার কমিশনের কোনো প্রতিবেদন মানতে আমরা রাজি নই।

দেশটির সরকারের এই মুখপাত্র আরও বলেন, রাখাইনের ঘটনা অনুসন্ধানে মিয়ানমার সরকার একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করেছে। জাতিসংখ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন মিথ্যা প্রমাণ করতে এ কমিশন গঠন করা হয়েছে।

গত সোমবার জাতিসংঘ গঠিত স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার সেনাবাহিনী গণহত্যার অভিপ্রায় থেকেই রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নির্বিচার হত্যা ও ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। এ জন্য দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হদ্মায়িংসহ বাহিনীর পাঁচ জেনারেলকে দোষী সাব্যস্ত করে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানানো হয়। সোমবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের চেয়ারপারসন মারজুকি দারুসমান, সদস্য ক্রিস্টোফার সিদোতি এবং রাধিকা কুমারাস্বামী তাদের তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে কথা বলেন। এর আগে তদন্তের চূড়ান্ত লিখিত প্রতিবেদন তারা জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর পাঠান। এ সংক্রান্ত আরও বিস্তারিত প্রতিবেদন আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হবে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘ এই প্রতিবেদনটি তৈরি করতে শত শত মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। একই সঙ্গে ভিডিও ডকুমেন্ট, স্যাটেলাইট ছবিও রয়েছে প্রমাণ হিসেবে। এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এটাই মিয়ানমারে সংঘটিত রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কড়া হুঁশিয়ারি ও নিন্দা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মিয়ানমারে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য অনুমোদন করেছে। একই সঙ্গে রাখাইন, কাচিন ও সান রাজ্যে সেনাবাহিনী যে মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধ করেছে, তা থেকে সংখ্যালঘুদের রক্ষায়ও সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে ৩০টি পুলিশ ও সেনা চৌকিতে হামলার পর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে নির্বিচার হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন শুরু করে মিয়ানমার সেনা ও আধা সামরিক বাহিনী। এর শিকার হয়ে ১০ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের উপকূলে আশ্রয় নেয়। তাদের ফেরত নিতে এর পর গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার চুক্তি করলেও নানা টালবাহানায় এখনও প্রত্যাবাসন শুরু করেনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here