ছেলেটা হয়তো কোনো একদিন রাস্তায় মরে পরে থাকবে, কেউ খবরও নিবে না

0
469

সালমা তালুকদার:

কোথাও যাওয়ার পথে প্রায়ই ছেলেটার সাথে দেখা হয়ে যেত।আর দেখা হলেই সামনে এসে পথ আগলে দাঁড়াতো।জিজ্ঞেস করতাম, “কিছু বলবে বাবা?”
কাঁচুমাচু চেহারায় সংকোচ স্পষ্ট হয়ে দেখা দিত।আমি তাকিয়ে থাকতাম।দাঁড়িমোচের জঙ্গলে ভরা একটা চেহারা।দুই ঠোঁটের ফাঁকে হলুদ দাঁত গুলো দেখা যায়।কতদিন ব্রাশ ঘষা হয় না কে জানে!চোখ দুটো কেমন নিষ্প্রাণ।ভাষা নেই ওতে।
আরেকটু খেয়াল করে দেখলাম,এক হাত পেছনে রাখা।আরেক হাত দিয়ে একটু পর পর মাথা চুলকাচ্ছে।বললাম,”পেছনের হাতে কি তোমার?”
বলে,”না তো আন্টি।কিছু নাই।”
“দেখাও তো দেখি।”
“না আন্টি কিছু নাই।আন্টি আমার কোক খেতে ইচ্ছে করছে।আপনি আমাকে কোক কিনে দিবেন?”
আমি বললাম,”কোক খাওয়া ভালো না বাবা।”
বলে,”তাহলে পাস্তা খাবো।টাকা দিবেন?”
আমি বললাম,”বাসায় যাও।গিয়ে ঘরের নাস্তা খাও।এত সকালে কোথাও তুমি পাস্তা পাবা না।”

কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চলে গেলো।আমার সামনে দিয়ে হন হন করে হেঁটে গেলো।আমিও ওর পিছু পিছু হাঁটছি আর ভাবছি এই ছেলেটা হয়তো কোনো একদিন রাস্তায় মরে পরে থাকবে।কেউ খবরও নিবে না।
হাঁটার সময় পেছনে রাখা হাতটা সহ দুটো হাত দুই পাশে দুলাতে দুলাতে যাচ্ছে।তখন দেখলাম যে হাতটা পেছনে লুকানো ছিলো সেই হাতের নখ গুলো অস্বাভাবিক লম্বা।দেখলেই কেমন গা ঘিন ঘিন করে।অবাক হয়ে ভাবলাম,ও কি তাহলে বুঝতে পারে যে এত বড় নখ রাখা ভালো না?”
পায়ের গোড়ালি ফেটে রক্ত জমাট বেঁধে আছে।
হয়তো খুঁজলে আরো কিছু অসংগতি চোখে পরতো।খুঁজলাম না।ইচ্ছে করলো না।

চোখের কোনের পানি মুছতে গিয়ে ঝটিকা বৃষ্টিতে ওড়নার একটা পাশ ভিজে গেলো।ভাবলাম সন্তানের মা গুলো এত তাড়াতাড়ি কেন না ফেরার দেশে চলে যায়?আর বাবা গুলো কেন তাদের প্রয়োজন মিটাতে গিয়ে অপরিচিতা একজন নারীকে ঘরে ঢুকায়।মা এর আগে বাবা মরে গেলে তো মায়েরা সন্তানকে বুকে আগলে রাখে।তখন তাদের শারীরিক ও মানসিক চাহিদার কথা মনে থাকে না কেন?বাবাদের কি একবারও মনে হয় না,তিনি অফিসে গেলে সন্তান গুলো অপরিচিতা নতুন মায়ের কাছে কেমন থাকে!
হাজারো প্রশ্ন মনে ভীর করে আসে।কিন্তু কোনো উত্তর নেই।প্রয়োজন আপনজনকেও অনেক দূরে ঠেলে দেয়।

(উপলব্ধীর জায়গা থেকে)
সালমা তালুকদার
৩০ আগস্ট ২০১৮ ইং

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here