ভারত বৈঠক বাতিল করায় হতাশ হয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বাতিল হয়ে যাওয়াই তিনি আশাহত হয়েছে। এক টুইট বার্তায় ইমরান এ বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
কিন্তু শান্তির লক্ষ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ক্ষেত্রে প্রধান এবং প্রাথমিক শর্ত যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, তা ইমরান খানের সম্ভবত জানা নেই। আর যদি জানা থাকে তা হলে বলতে হবে পাক প্রধানমন্ত্রী আসলে শান্তি চাইছেন না। ভারতের তরফ থেকে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।

পাক প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যকে কুরুচিকর বলে উল্লেখ করেছে ভারত। টুইটারে পাক প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বাতিল হওয়ায় তিনি আশাহত। ভারতের আচরণকে তিনি ‘উদ্ধত ও নেতিবাচক’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও লিখেছেন যে, তিনি পুরো জীবনে উঁচু পদে বসে থাকা অনেক নিম্নমেধার লোক দেখেছেন, বৃহত্তর চিত্রটি উপলব্ধি করার মতো দূরদর্শিতা যাদের নেই।

পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কারও নাম উল্লেখ করেননি ঠিকই। কিন্তু তার ইঙ্গিত যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দিকেই, সে কথা সরাসরি না বললেও বোঝা যায়।

ইমরান খানের এমন মন্তব্যের পর ভারতের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে এমন মন্তব্য করার মতো স্পর্ধা এবং দুঃসাহস তার হলো কী করে? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইমরানের এমন মন্তব্যে বিস্মিত। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে মন্তব্য করছেন তিনি। সে কথা কি ভুলে গিয়েছিলেন ইমরান খান? তিনি মোদির মেধার বিচার করলেন কিসের ভিত্তিতে?

কে উচ্চ মেধার, কে নিম্ন মেধার, ইমরান খান তা বিচার করেন কোন মাপকাঠিতে? ভারতের মতো একটি সুবিশাল দেশের বিপুল সংখ্যক নাগরিক যাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সেই ব্যক্তিকে নিম্নমেধাসম্পন্ন আখ্যা দিয়ে ইমরান খান আসলে পুরো ভারতেরই অমর্যাদা করেছেন।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে শান্তিপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অবশ্যই মহৎ কাজ। দু’দেশের মানুষই শান্তি চান। পারস্পরিক বিদ্বেষ বা ঘৃণা কেউ পুষে রাখতে চান না বলেই খেলার মাঠে ভারতীয় ক্রিকেটারকে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানের জুতোর ফিতে বেঁধে দিতে দেখা যায়। বৈরিতার শেষ দেখতে চান বলেই ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দর্শকাসনে পাকিস্তানের সমর্থককে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত গাইতে দেখা যায়।

নাগরিকদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক শান্তির প্রতি এই আবেগ থাকা সত্ত্বেও ভারত ও পাকিস্তানের নেতৃত্ব কেন শান্তিতে পৌঁছাতে পারছে না, তা এক ভিন্ন বিতর্ক। কেন শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হলেই কোথাও বিস্ফোরণ হয়, কোথাও নাশকতা হয়, কোথাও জঙ্গি হামলা হয় বা কোথাও সীমান্তরক্ষায় রত জওয়ানের মাথা কেটে নিয়ে যাওয়া হয়?

যে কোনও কূটনৈতিক পদক্ষেপই অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। বুদ্ধিমত্তা, সংবেদনশীলতা, ভারসাম্যের বোধ ইত্যাদির সমন্বয়ে পদক্ষেপ নিতে হয়। ইতিবাচক ফলের লক্ষ্যে প্রতিটি পদক্ষেপকে সৌজন্যের মোড়কে পেশ করতে হয়। পরিণাম সব সময়ে আশানুরূপ হয় না। কিন্তু তার জন্য হতাশাও ব্যক্ত করতে হয় অত্যন্ত সংযত শব্দে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী উল্টোটা করলেন।

দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বাতিল হওয়ার প্রেক্ষিতে হতাশা ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি লাগাম ছাড়া প্রতিক্রিয়া দিলেন। এতে ইমরান খানের মেধার কী রকম পরিচয় পাওয়া গেল? কিন্তু ভারত-পাকিস্তানের কূটনীতির রাস্তাকে ইমরানের এই অসৌজন্যমূলক এবং কুরুচিকর মন্তব্য যে আরও কণ্টকাকীর্ণ করে তুলল, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই বলে উল্লেখ করেছে ভারত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here