প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন: অপরাধ শুধু রাজনীতিবিদরাই করে, সাংবাদিকরা করে না?

0
74

বাংলা খবর, নিউইয়র্ক:
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিককেদর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ডিজিটাল আইনে আপনারা একটা দিকই দেখছেন; সাংবাদিকের কণ্ঠরোধ। এখানে সাংবাদিকের তো কন্ঠরোধ নয়। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা শুধু স্বার্থপরের মতো নিজেদেরটাই দেখবে কেন? কেউ যদি অপরাধ না করে, মিথ্যা প্রচার না করে বা ইয়েলো জার্নালিজম না করে তবে তার কোনো চিন্তা হওয়ার কথা না। তার তো কোনো ভয় হওয়ার কথা না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে যে সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, জঙ্গিবাদকে উসকে দেওয়া, সামাজিক যে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে বা আমাদের ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে যুব শ্রেণি.. তারা যে বিপথে চলে যাচ্ছে, মানসিক ভারসাম্য হারাচ্ছে; এরকম বহু ঘটনা হচ্ছে। তো সেগুলো কী রোধ করার প্রয়োজন নাই।
সাইবার অপরাধকে এখন পুরো বিশ্বে একটা সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “সাইবার ক্রাইম- এটা এখন বিশ্বব্যাপী একটা সমস্যা হিসাবে … মানে, সন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদের পরেই সাইবার ক্রাইমটা এসে গেছে। আমাদের তো সমাজটাকে রক্ষা করতে হবে। এই দায়িত্ব সাংবাদিকদেরও আছে। কাজেই এটা কোনো কণ্ঠ রোধ করা না। অপরাধ শুধু রাজনীতিবিদরাই করে, সাংবাদিকরা করে না?”
অন্যান্য দেশে এই ধরণের আইনে কি আছে- তা দেখে সাংবাদিকদের ক্ষোভ প্রকাশ করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। এই বিলটি পাস হওয়ার পরই সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
সংসদে উত্থাপিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলের ৩২ ধারা নিয়ে সাংবাদিক মহলের সবচেয়ে বেশি আপত্তি ছিল। ওই ধারার ফলে প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ হবে বলে মনে করছেন সাংবাদিকরা। সংসদীয় কমিটিতেও বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানায় সাংবাদিকরা।
নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় শুক্রবার জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে এক সংবাদ সম্মেলন একথা বলেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার লেখা বই প্রকাশের বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা একটু খুঁজে বের করেন না, বইটা লেখার পেছনে কার হাত আছে? এই বইটার পাণ্ডুলিপি কতবার বাংলাদেশে গেছে? কার কাছে গেছে বা তিনি যে লঞ্চটা করবেন; এই লঞ্চিংয়ের টাকা-পয়সা খরচটা কে দিচ্ছে? বাংলাদেশ থেকে কেউ দিচ্ছে কিনা বা আপনাদের মতো কোনো সাংবাদিকরা এর পেছনে আছে কিনা? কোনো সংবাদপত্র আছে কিনা বা তারা কতটুকু সাহায্যপত্র দিচ্ছে? আমাদের কোনো আইনজীবী এর স্ক্রিপ্ট দেখে দিচ্ছে কিনা? কোন পত্রিকা বা পত্রিকার মালিকরা তাকে এই মদদটা দিচ্ছে? স্ক্রিপ্টটা লেখার ব্যাপারে কোনো সাংবাদিক, কোন পত্রিকার, কে এটা সাহায্য করছে?” এই প্রশ্নগুলো করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “খুঁজে একটু বের করেন। আমি জানি, আমি তো বলবো না আপনাদের। আপনারা খুঁজে বের করেন; সেটা চাই।”
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যাওয়া তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নানা ঘটনাবলীর মধ্যে পদত্যাগের পর এক বছরের মাথায় বিদেশে বসে বই লিখে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন।

বইতে সিনহা লিখেছেন, ২০১৭ সালে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পক্ষে ঐতিহাসিক এক রায় দেওয়ার পর বর্তমান সরকার আমাকে পদত্যাগ করতে এবং নির্বাসনে যেতে বাধ্য করে।
‘এ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ শিরোনামে সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহার আত্মজীবনীমূলক ৬১০ পৃষ্ঠার এই বইটি অ্যামাজনের কিন্ডেল সংস্করণে বিক্রি হচ্ছে। শনিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে এই বইটি প্রকাশ করা হবে।
সাবেক এই প্রধান বিচারপতির নিউ জার্সিতে বাড়ি রয়েছে। সে বিষয়ে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেবে কিনা – এ প্রশ্নের জবাবে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অ্মোরিকায় বাড়ি কেনা তো খুব একটা কঠিন ব্যাপার না। বরং বাংলাদেশেই এখন কঠিন। বাংলাদেশই দাম বেশি। এখানে তো একটা ডিপোজিট দিলেই বাড়ির মালিক হওয়া যায়। কে কীভাবে কিনলো; সেটা খুঁজে বের করে তথ্য দেন, সেটার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনকালীন সরকার বলে কোনো ডেফিনেশন নেই বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে কথা বলেছি। যদি তারা চান; তারা আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন। নির্বাচনকালীন সময়ে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে… সরকারিদল বিরোধীদল যাই হোক, সবাইকে নিয়ে যদি তারা চান; আমরা হয়তো একটি সরকার গঠন করে নির্বাচনটা পরিচালনা করতে পারি। কিন্তু, এখানে নির্বাচনকালীন সরকার বলে কোনো ডেফিনেশন নেই।

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ভারত ও চীনের অবস্থান নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি নেতিবাচকভাবে না দেখার কথা বলেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে প্রত্যেকটা দেশই কিন্তু এগিয়ে। ভারত এগিয়ে এসেছে। ভারত তো ওখানে তাদের ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছে। চীনও তাদেরকে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছে। মিয়ানমরাকে তারাও চাপ দিচ্ছে; যেন এদেরকে ফেরত নিয়ে যায়। প্রত্যেক দেশের নিজস্ব কাজ করার একটা নীতি থাকে বা ভঙ্গি থাকে। এটা নেগেটিভলি দেখলে চলবে না।
রাশিয়াও তাদের নিজেদের মতো করে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here