মেং হংওয়েই ৬৪ বছর বয়সী চীনা নাগরিক। তিনিই প্রথম চীনা নাগরিক হিসেবে আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগকারী এজেন্সি ইন্টারপোলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। ফ্রান্সে এর সদর দফতরে তার অফিস। গত সপ্তাহে তিনি চীন সফরে আসেন। তবে চীনের মাটিতে অবতরণের পর পরই তাকে দেশটির আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নেয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। তবে কি কারণে, কি উদ্দেশে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তা স্পষ্ট নয়। তাকে কোথায় আটকে রাখা হয়েছে তাও পরিষ্কার করে বলা হয় নি। চীনের জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন উপ-মন্ত্রীও মেং হংওয়েই। তার স্ত্রী ফরাসি পুলিশকে খবর জানান যে, তার স্বামী নিখোঁজ হয়েছেন। এরপর মেং হংওয়েই’র নিখোঁজ নিয়ে নারা জল্পনা চলতে থাকে। সচকিত হয়ে ওঠেন চারদিকের সবাই। এমন অবস্থায় ফরাসি পুলিশ শুক্রবার একটি বিবৃতি দেয়। তারা বলে, মেং হংওয়েই’র স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ার পর তারা তার উদ্ধারে বা কোথায় আছেন তিনি তা জানতে তদন্ত শুরু করেছে। লিয়নে অবস্থিত ইন্টারপোলও শুক্রবার একটি বিবৃতি দিয়েছে। তারা বলেছে, মেং হংওয়েই নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তারা সচেতন বা জানেন। বিষয়টি ফ্রান্স ও চীন সরকারের মধ্যকার।
মেং হংওয়েইকে সর্বশেষ গত ২৯ শে সেপ্টেম্বর দেখা গিয়েছিল ফ্রান্সে। তবে তাকে আটকের কথা স্থানীয় পত্রিকা প্রকাশ করলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চীনের জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয় বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেউই কোনো কথা বলে নি বা মন্তব্য করে নি। চীনের আইন অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি বা তার পরিবারকে সন্দেহজনক বলে মনে হয় তাহলে তাকে বা তাদেরকে আটকের ২৪ ঘন্টা আগে জানাতে হবে। তবে মেং হংওয়েই’র ক্ষেত্রে তার স্ত্রীকে জানানো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। ফরাসি বিচার বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে চীনে যান মেং হংওয়েই। তারপর থেকে তার কোনো হদিস ছিল না। যদিও জননিরাপত্তা বিষয়ক চীনা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে মেং হংওয়েই এখনও ভাইস মিনিস্টার, তবু তিনি কমিউনিস্ট পার্টি কমিটিতে তার আসন হারিয়েছেন। উল্লেখ্য, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি কমিটি হলো সেখানে প্রকৃত সিদ্ধান্ত নেয়ার একটি পরিষদ। এখানকার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হিসেবে দেখা হয়।
ওই ওয়েবসাইটে মেং হংওয়েইর নিজস্ব পেজে সরকারি কর্মকান্ডে তিনি সর্বশেষ অংশ নিয়েছিলেন ২৩ শে আগস্ট। ওই সময় তিনি সিঙ্গাপুরের দ্বিতীয় স্থায়ী সচিব লাই চুং হানের সঙ্গে সাক্ষাত করেন।
এখানে উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ইন্টারপোলের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় তাকে। বিদেশেও চীনা সরকার তার ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর যে দমনপীড়ন চালাচ্ছে তা নিয়ে যখন উদ্বেগ চারদিকে, তখন তাকে ওই নিয়োগ দেয়া হয়। ফলে এ নিয়ে বেশ সোরগোল হয়। ইন্টারপোল প্রধানের পদে তার ২০২০ সাল পর্যন্ত দায়িত্বের মেয়াদ আছে। এ সংস্থাটির পুলিশ বিশ্বের ১৯২টি দেশের পুলিশকে তদন্তে সহায়তা করে থাকে।