২০১৮ সালে শান্তিতে নোবেল জয়ী নাদিয়া মুরাদ

0
453


আলী আসগর স্বপন:

নাদিয়া মুরাদ ২০১৮ সালে শান্তিতে নোবেল জয়ী । এখন ওর ২৫ বছর বয়স । ২০১৪ সালে নাদিয়া তখন ২১ বছরের একজন উচ্ছল মুসলিম তরুণী । ইরাকের একটি পাহাড়ি এলাকা নাম তার সিনজার । এই পাহাড়ি অঞ্চল সিনজারে একটি গ্রাম ইয়াজিদি ।সেই গ্রামে নাদিয়ার জন্ম থেকে বেড়ে উঠা । ২০১৪ সালের ইয়াজিদি গ্রামে আকস্মিক হামলা চালায় আইএস জঙ্গিরা ,যারা নিজেদের পরিচয় দেয় মুসলিম হিসেবে । মুসলিম নামধারী এই আইএস জঙ্গিরা নির্বিচারে শুরু করে গনহত্যা । গ্রামের প্রায় সব পুরুষ ও বয়স্ক নারীদের হত্যা করা হয়। যাদের মধ্যে নাদিয়ার ছয় ভাই এবং তার মাও ছিলেন।

জঙ্গিরা গ্রামের অন্য ইয়াজিদি নারীদের সঙ্গে নাদিয়াকেও ধরে নিয়ে যায় এবং যৌনদাসী হিসেবে বন্টন করে দেয়।নানা হাত ঘুরে একসময় মসুল পৌঁছে যান নাদিয়া। এই সময়ে তাকে আইএস জঙ্গিরা অসংখ্যবার ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন করে। এক পর্যায়ে সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করেন নাদিয়া, ফল ধরা পড়া। বাড়ে নির্যাতনের মাত্রা।

কিছুদিন পর তাকে আবারও বিক্রির প্রস্তুতি চলছিল। একদিন সুযোগ বুঝে আইএস বন্দিদশা থেকে পালিয়ে এক সুন্নি মুসলিম পরিবারে আশ্রয় নেন নাদিয়া। ওই পরিবার তাকে মসুল থেকে পালিয়ে আসতে সব রকম সহায়তা করে।নাসির নামে এক সুন্নি মুসলমান নাদিয়াকে স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে আইএসের কড়া নিয়ন্ত্রণে থাকা মসুল সীমান্ত পার করে দেন।

জীবনের এই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা বিশ্ববাসীকে জানাতে ‘দ্য লাস্ট গার্ল’ নামে একটি বই লেখেন নাদিয়া, যা ২০১৭ সালে প্রকাশ পায়।ওই বইতে তিনি লেখেন, “কখনও কখনও ধর্ষিত হওয়া ছাড়া আর কিছুই সেখানে ঘটত না। একসময় এটা প্রাত্যহিক জীবনের অংশ হয়ে যায়।আইএস জঙ্গিরা ইয়াজিদি জনগোষ্ঠীর পাঁচ হাজারের বেশী পুরুষ কে হত্যা করে । ধরে নিয়ে যায় তিন হাজারের বেশী যুবতী নারীকে । তাদের উপর চালায় যৌন নির্যাতন । প্রতিদিন এই নারীরা শিকার হত ধর্ষণের ।
২০১৫ সালে ডিসেম্বরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আইএসের হাতে নিপীড়নের ভয়াবহ সেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন নাদিয়া। তিনি মানবাধিকার এবং যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ধর্ষণের ব্যবহারের বিরুদ্ধেও কাজ শুরু করেন।নিজের আত্মজীবনী “‘দ্য লাস্ট গার্ল’ নামে লেখা একটি বইয়ে সেই কাহিনি তুলে ধরেন তিনি।
যৌন সহিংসতা ও হয়রানিকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার বন্ধে লড়াই করে এই বছর ২০১৮ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন জঙ্গিদের হাতে ধর্ষণের শিকার ইয়াজিদি নারী নাদিয়া।
দাড়িয়ে স্যালুট তোমাকে হে নারী । তোমার জন্য থাকছে বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালবাসা ।

লেখক : আইনজীবী ও সাংবাদিক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here