জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সঙ্গে বিএনপিসহ পাঁচটি রাজনৈতিক দলের মোর্চা সংগঠন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের মধ্যে দ্বিতীয় দফা সংলাপ শেষ হয়েছে।

নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু হয়েছিল, তার মধ্যে শুধু জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গেই দ্বিতীয় দফায় সংলাপ হয় ক্ষমতাসীনদের। আজ বুধবার সকাল ১১টা থেকে এই সংলাপ শুরু হয়, শেষ হয় দুপুর ২টার কিছু পরে। বৈঠকটি রুদ্ধদ্বার হয়।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে গণভবনেই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের নেতারা গণভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। হয়তো তাঁরা পরে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরবেন।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এ পর্যন্ত হলো প্রায় তিন ঘণ্টা। এই সংলাপ দ্বিতীয় দফা সংলাপ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে। ঐক্যফ্রন্টের দলনেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে তাঁরা এসেছেন এবং আলোচনা হয়েছে। তাঁরাও মন খুলে আলোচনা করেছেন, আমরাও করেছি। তবে আজকে তাঁরা যে দাবিগুলো নিয়ে এসেছেন, আজকে তাঁদের যে ইমিডিয়েট মানে… নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই তাঁরা কিছু বিষয়ে নিশ্চয়তা চান বা কিছু বিষয়ে ঐকমত্য চান। এর মধ্যে মূল কথা হচ্ছে, তাঁরা আসলে সংবিধানে… সংবিধানসম্মতভাবে ২৮ জানুয়ারি থেকে এদিকে যে ৯০ দিন, সংসদ যেদিন বসছে, যে সংসদ বিদায়ী সংসদ, সেদিন থেকে যে সংসদ পাঁচ বছর… এর আগের তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে—এটা হচ্ছে সংবিধান। কিন্তু তাঁরা চাইছেন যে, সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করার জন্য। এটা হচ্ছে মূল কথা…।’

‘এ ছাড়া লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, বিদেশি পর্যবেক্ষক, তারপরে রাজবন্দিদের মুক্তি এসব বিষয়ে আমাদের নেত্রী, আমাদের দলনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনি বলেছেন যে, এসব দাবি মেনে নিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তফসিল ঘোষণার পর এগুলো নির্বাচন কমিশনই করবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ব্যাপারেও আমরা সম্মত। আমাদের মন্ত্রীরা নিজের এলাকায়… পতাকা ব্যবহার করবেন না, জাতীয় পতাকা, সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেবেন না, সার্কিট হাউস ব্যবহার করবেন না, সরকারি গাড়ি ব্যবহার করবেন না, কোনো প্রকার সরকারি ফেসিলিটিজ আমরা এনজয় করব না।’

ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, ‘এমপিদেরও কোনো ক্ষমতা থাকবে না। তাঁরাও সেই অন্যান্য… যদি ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থিতা দেয় তাদের প্রার্থীরা বা অন্য প্রার্থীরা যে সুযোগ-সুবিধা পাবেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা বা মহাজোটের প্রার্থীরা একই সুবিধা এনজয় করবেন। এর অতিরিক্ত কিছু হবে না এবং ইলেকশন কমিশন বিষয়টি দেখবে।’

ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে ছিলেন ড. কামাল হোসেন, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা মোহসীন মন্টু, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, নাগরিক ঐক্যের নেতা এস এম আকরাম, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন ও ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের প্রতিনিধিদলে ছিলেন—আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, ডা. দীপু মনি, অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

এর আগে গত ১ নভেম্বর শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের ২৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল গণভবনে ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন ২০ সদস্যের জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সংলাপে বসে। সেদিন সংলাপ শেষে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা অভিযোগ করেন, তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে তাঁদের সাত দফা দাবি উত্থাপন করলেও সভা-সমাবেশ নিয়ে কিছু ভালো কথা শোনা ছাড়া সুনির্দিষ্ট কোনো সমাধান পাননি।

এরপর ছোট পরিসরে সংলাপের জন্য গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দেয় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এরই অংশ হিসেবে আজকে দ্বিতীয় দফা সংলাপ হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here