রুমি আক্তার পলি
সঞ্জীব চৌধুরী ছিলেন একজন বাংলাদেশী সংগীতশিল্পী ও সাংবাদিক। তিনি বাংলা ব্যাণ্ডদল দলছুটের প্রতিষ্ঠাতা এবং অন্যতম প্রধান সদস্য ছিলেন। কামরুজ্জামান কামুর লেখা একটি গান অসাধারণ সুরে পরিবেশন করেছিলেন সঞ্জীব চৌধুরী তার দ্বিতীয় অ্যালবামে – ‘তোমার বাড়ির রঙের মেলায় দেখেছিলাম বায়োস্কোপ/ বায়োস্কোপের নেশা আমায় ছাড়ে না’।
এই ক্ষণকাল স্থায়ীত্বের প্রতিভার আজ (নভেম্বর ১৯) মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি।
সঞ্জীব চৌধুরী ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার মাকালকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা গোপাল চৌধুরী এবং মাতা প্রভাষিনী চৌধুরী।
ছোটবেলায় হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন ও এরপরে ঢাকার বকশী বাজার নবকুমার ইন্সটিটিউটে নবম শ্রেণীতে এসে ভর্তি হন ও এখান থেকে ১৯৭৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ১২তম স্থান অর্জন করেন। ১৯৮০ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেও মেধা তালিকায় স্থান করে নেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে ভর্তি হন কিন্তু বিভিন্ন কারণে তা শেষ না করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
তিনি একজন খ্যাতনামা সাংবাদিকও ছিলেন এবং বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ ও যায়যায়দিন এ কাজ করেন।
তিনি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের একজন কর্মী ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই ছাত্রটি এদেশের পত্রিকার ফিচার পাতায় নতুন ঢং আর স্বাদেরও সংযোজন করেছিলেন। তাঁর সম্পাদনায় একসময় ভোরের কাগজের ‘ইস্টিকুটুম’, ‘পাঠক ফোরাম’ এর মতো বিভাগগুলি পাঠককে পত্রিকার সঙ্গে আরও একাত্ম করে তোলে।
অজস্র ফিচার লিখেছেন। শুধু লেখেননি, লিখিয়েছেন, শিখিয়েছেন। এদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে আছেন অনেক গুণী সাংবাদিক যাদের হাতেখড়ি হয়েছে তার কাছে।
সুরের ওপর সঞ্জীব চৌধুরীর দখল ছিল অসাধারণ। তার গান তরুণ-তরুণীদের মুখে মুখে ফিরছে। গানের মধ্যে কবিতাকে জারিত করে অন্য এক মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। পরে তার এই ধারার অনুসারী হয়েছেন অনেকেই।
৯০ এর দশকের মাঝামাঝি বাপ্পা মজুমদারের সঙ্গে মিলে বের করলেন তার প্রথম অ্যালবাম ‘আহ্’। দুজনে মিলে তারা গঠন করলেন ‘দলছুট’। সঙ্গে ছিলেন চারুকলার আরো এক শিল্পী। সঞ্জীব দলছুটের চারটি অ্যালবামে কাজ করার পাশাপাশি অনেক গান রচনা ও সুরারোপও করেছেন। ‘দলছুট’ গানের দল গড়ে সঙ্গীতে শব্দ আর সুরের এক নতুন রুচির খোঁজ করছিলেন এই জাতশিল্পী।
তার প্রথম অ্যালবাম ‘আহ্’ প্রকাশমাত্র সাড়া তুলেছিল এদেশের শ্রোতাদের মাঝে।
কবি হিসেবেও একসময় পরিচিত ছিলেন সঞ্জীব চৌধুরী। পরে গানের জগতে ঢুকে এর চর্চা কমে গিয়েছিল। সম্ভবত তার কাব্যধর্মী গানগুলোই এই অভাব অনেকখানি পূরণ করেছিল।
একসময় বেশ কিছু ছোট গল্প লিখেছিলেন তিনি। বিভিন্ন ছোট কাগজে ছাপা হয়েছে সেসব নিরীক্ষাধর্মী গল্প।
প্রাণচঞ্চল সঞ্জীব চৌধুরী বাইলেটারেল সেরিব্রাল স্কিমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর আকস্মিক অসুস্থ বোধ করার কারণে তাকে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়।
১৯ নভেম্বর সঞ্জীব চৌধুরী ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালের আইসিইউ শাখায় মৃত্যুবরণ করেন।