শীতের সকালে ল-নের টেমস নদীর তীরে সূর্য্যস্থান করছিলেন ওরিয়ানা ফালাচি। সময় ১৯৭৩ সাল। বিকিনি পরা শেতাঙ্গীনিরা শুয়েছিল। বিয়ার খাচ্ছিল আর আড্ডা দিচ্ছিল। এসময় বোরখা পরিহিতা দুই নারী চিপস খেতে খেতে এসে দাড়ান। তাদের দেখে শেত্বাঙ্গীনিরা ব্যঙ্গ করে বলছিল, ‘ তাদের মনে হয় অন্তর্বাস পড়তে হয় না। দেখো দেখো মুখ, মাথা কান গলা সব ঢেকে বসে আছে।’ ওরিয়ানা ওদের পাশে গিয়ে বললেন, ‘ ওদের নিয়ে মশকরা করার কিছু নেই। ওদের সমাজের পুরুষেরা ওদের এমন পোশাকেই দেখতে চায় বলে তারা এসব পরে। আর তোমাদের সমাজ স্বল্পবসনা দেখতে চায় বলেই তোমরা বিকিনি পরো। পুরুষের পছন্দমাফিকই নারীরা সাজে। এসবই পুরুষতান্ত্রিকতা। ’
জন্ম ইটালির ফ্লোরেন্সে ১৯২৯ সালে। পেশা সাংবাদিকতা।
সত্তরের দশকে তিনি রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়কদের সাক্ষাৎকার নিতে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছুটে গেছেন। আক্রমনাত্মক প্রশ্ন করে অনেক দেশ থেকে তাকে পালিয়ে জীবন বাঁচাতে হয়েছে । রেজা শাহ পাভলভীর সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় রেজা রেগে গিয়ে জুতা ছুঁড়ে মারেন। জুতা লুফে নিয়ে ওরিয়ানা ‘ থ্যাংকস স্যার’ বলে দ্বিতল ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে গাড়ি ড্রাইভ করে পালান।আয়াতুল্লাহ খোমেনীর ইন্টারভিউ নিতে তিনি বোরখা পরেন।
শেখ মুজিবুর রহমান, জুলফিকার আলী ভুট্টো, ইন্দিরা গান্ধী ও হেনরি কিসিঞ্জার, মার্গারেট থেচার, রেজা শাহ পাহলভী, ইয়াসির আরাফাতসহ বিখ্যাতদের সাক্ষাৎকার নেন। এসব ইন্টারভিউ’র বই ‘ইন্টারভিউ উইথ হিস্ট্রি’ ।
সাধারণ পরিবারে জন্ম। বাবা রেলগাড়ির টিকেট কালেক্টর। মা প্যারালাইসড। অল্প বয়সেই ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিকতা করে টাকা কামাতেন। প্রেম ছিল ফ্লোরেন্সের পিয়ানোবাদক গিল্লাইচিনি’র সাথে। টিকেনি সম্পর্ক ওরিয়ানা অবিখ্যাত ও গরিব ছিলেন বলে। ২০০৬ সালে তিনি মারা যান। ২০০১ সালে মিলানের একটা এওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে গিল্লাই’র সঙ্গে ওরিয়ানার দেখা। সে অনুষ্ঠানে প্রথমে মাতাল বলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি গিল্লাইকে। ততোদিনে গিল্লাই জুয়া খেলে সর্বস্বান্ত। অন্যদিকে পুরস্কৃত হচ্ছিলেন ওরিয়ানা। মঞ্চে ওরিয়ানা। তার ফোন বেজে ওঠে।গিল্লাই জানান সব। ওরিয়ানা আয়োজকদের বলে ঢুকতে দেন গিল্লাইকে। একসময় দুজন মুখোমুখি। ওরিয়ানা বলেন, ‘ সহজ হও, সহজলভ্য হয়ো না ।’ এরপর ভক্তের ভীড়ে ছিটকে পড়েন গিল্লাই। ওরিয়ানার কাছে অনুরোধ , ‘ প্লিজ অটোগ্রাফ ম্যাম।’