একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে আজ রোববার সারা দেশে বিভিন্ন দলের প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ৩০০ সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য জমা দেওয়া ৩০৬৫ মনোনয়নপত্রের মধ্যে ৭৮৬টি বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সূত্র অনুযায়ী, সারা দেশের ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা যাচাই-বাছাই শেষে ২ হাজার ২৭৯টি মনোনয়নপত্র বৈধ এবং ৭৮৬টি মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন। যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তারা রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আগামীকাল ৩ ডিসেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন শুনানি করে আপিল নিষ্পত্তি করবে ৬ থেকে ৮ ডিসেম্বর।

এছাড়া যাদের আবেদন বৈধ হয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা নির্বাচন কমিশনে প্রমাণসহ আপিল করতে পারবেন। নির্বাচন কমিশনে তার শুনানিতে আইনজীবীর বক্তব্য প্রদানেরও সুযোগ দেবে।

এদিকে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ লেবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেছেন, সরকারের বিজয়ের পথ সুগম করতেই ২০ দলীয় জোটের ৮০ প্রার্থীকে আজ মনোনয়ন বঞ্চিত করা হয়েছে।

সারা দেশে যে সংখ্যক মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তাতে দেখা গেছে বেশিরভাগই বিএনপির মনোনয়নপত্র। এর কারণ জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, ‘বাতিল হওয়া মনোনয়নপত্র স্থানীয় রিটার্নিং কর্মকর্তারা দেখেছেন, কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ কেন? আপিলের সুযোগ আছে, এটাই চূড়ান্ত নয়।’

নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহমেদ খান বলেন, ‘রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে চাইলে যে কেউ আপিল করতে পারবেন। তবে তা যাচাই-বাছাই শেষে তিনদিনের মধ্যে করতে হবে।’ তিনি জানান, আগামী ৬ থেকে ৮ ডিসেম্বর আপিলের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

সারা দেশে ৭৮৬টি মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও ৩৫টি আসনে কোনো প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়নি। ২৬৫টি আসনে এক বা একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। সর্বোচ্চ বাতিল হয়েছে কুড়িগ্রাম-৪ আসনে। এখানে ১৩টি মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। জমা পড়েছিল ২৩ মনোনয়নপত্র।

যেসব আসনে ছয়টির বেশি মনোনয়নপত্র বাতিল

ঢাকা-১৭ আসনে ২৭টির মধ্যে ১১টি বাতিল হয়েছে। ফরিদপুর-৪ আসনে ১৪টির মধ্যে ১০টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ২৭টির মধ্যে ১১টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে ১৬টির মধ্যে ১০টি ও কুমিল্লা-৩ আসনে ২৭টির মধ্যে ১০টি বাতিল হয়েছে।

বগুড়া-৭ আসনে ১৪টির মধ্যে ৭টি, রাজশাহী-১ আসনে ১২টির মধ্যে ৮টি, যশোর-২ আসনে ১৫টির মধ্যে ৭টি, ময়মনসিংহ-৩ আসনে ১৭টির মধ্যে ১০টি, কিশোরগঞ্জ-২ আসনে ১০টির মধ্যে ৭টি ও ঢাকা-৮ আসনে ২২টির মধ্যে ৭টি বাতিল হয়েছে।

যে ৩৫টি আসনে কারো মনোনয়নপত্র বাতিল হয়নি:

ঠাকুরগাঁও-২, দিনাজপুর-৫, জয়পুরহাট-২, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩, নওগাঁ-২, নাটোর-৩, পাবনা-২ ও ৪, কুষ্টিয়া-৩, বাগেরহাট-৩, খুলনা-১, ৩, ৪, ৫, সাতক্ষীরা-৩, পটুয়াখালী-৪, ভোলা-৩, বরিশাল-৪ ও ৫, পিরোজপুর-২, টাঙ্গাইল-২, ৫, জামালপুর-২, নেত্রকোনা-৩, ঢাকা-১২ ও ১৩, নরসিংদী-৪, গোপালগঞ্জ-২, মৌলভীবাজার-৪, কুমিল্লা-৭, চাঁদপুর-৩, ফেনী-২, নোয়াখালী-৫, লক্ষ্মীপুর-৩ এবং কক্সবাজার-১।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত পুনঃতফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে।

নির্বাচনে অংশ নিতে ২৬৪ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য ২৮১ প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। অন্যদিকে ২৯৫ আসনে বিএনপির ৬৯৬ জন এবং ২১০ আসনে জাতীয় পার্টির ২৩৩ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন। এছাড়া ৪৯৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।

বিএনপি অধিকাংশ আসনেই একের অধিক প্রার্থী দেয়। আওয়ামী লীগ ১৭ আসনে এবং জাতীয় পার্টি ২৩ আসনে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here