অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েই জালিয়াতি করে ব্যাংক থেকে নিয়ে যাওয়া টাকা উদ্ধারের কৌশল খোঁজার তাগিদ দিলেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। বলেছেন, খেলাটি ঋণের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনার কথা।

সোমবার শেখ হাসিনার নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই অর্থ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে এই নির্দেশনা দেন তিনি। বঙ্গভবনে বিকাল সাড়ে তিনটায় শপথ নিয়ে সন্ধ্যা ৬টা ২২ মিনিটে তিনি অর্থমন্ত্রণালয়ে যান। এসময় মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।

অর্থমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বৈঠকে মুস্তফা কামাল ঋণ আদায় করার নতুন কৌশল বের করার তাগিদ নিয়ে বলেন, ‘আমরা ভালো ও খারাপকে একসাথে মেলাব না। কাউকে জেলেও পাঠাব না, বন্ধও করে দেব না। স্প্রেড (সুদ ও আমানতের হারের পার্থক্য) বেশি হলে আমানত ফেরত আসে না এসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে। যত কম রেটে ঋণ নিতে পারবেন, তত কম রেইটে ঋণ দিতে পারবেন।’

‘নন পারফরমিং লোনের যে কথা বলা হচ্ছে, এটা লম্বা সময় ধরে চলে আসছে, এটি ১৩ শতাংশ। এটি ৭ থেকে ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। নিচে নামিয়ে আনতে অনেক কঠিন হতে হবে।’

আবুল মাল আবদুল মুহিতের আমলে দেশে অর্থনৈতিক দিক থেকে নানা দৃশ্যমান উন্নয়ন হলেও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিশৃঙ্খলার বিষয়টি নিয়ে বারবার আলোচনা এসেছে। এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে খেলাপি ঋণ। এর এ ক্ষেত্রে যাচাইবাছাই না করে ঋণ দেওয়ার বিষয়টি যেমন আছে, তেমনি যোগসাজস করে টাকা বের করে নেওয়ার ঘটনাও আছে।

নতুন অর্থমন্ত্রী বলেনম ‘আত্মীয়-স্বজন চিনব না, যে দেয় এবং যে দেয় না, তাদের এক জায়গায় রাখব না। যে দেয় তার জন্য প্রয়োজনে প্রণোদনার ব্যবস্থা করে দেব।

‘যে যাচাই বাছাই করে লোন দেওয়া হয়, তা ভালো করে করতে হবে। মাঝে মাঝে দেখা যায় চুক্তি করার পর চার্জ হিসেবে তা পাই না। এগুলো দেখার জন্য প্রফেশনাল ফার্ম নিয়োগ করতে হবে। তাহলে ওই লোনগুলো ব্যাড লোনে যাবে না। আরেকটি অবকাঠামো হবে মানুষের আস্থা তৈরি করা, মানুষকে বোঝাতে হবে টাকা নিয়ে ব্যবসায় লাভ করতে পারবেন।’

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ নিয়েও কথা বলেন কামাল। বলেন, ‘এক দিন-দুই দিনের জন্য না, লাভে পড়ে এখানে আসা যাবে না। দীর্ঘ সময়ের জন্য এগুলো বিবেচনা করতে হবে, প্রশিক্ষিত বিনিয়োগকারীদের নিয়ে আসতে হবে।’

‘যারা এদেশ থেকে টাকা-পয়সা নিয়ে গেছে, তাদের আবার এদেশে নিয়ে আসতে সুযোগ করে দেওয়া হবে, যাতে তারা ম্যাক্সিমাম লাভ করতে পারে। বন্ড মার্কেট আরও প্রসারিত করার উপরও জোর দেন তিনি।

বৈঠকে উপস্থিত এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার উদ্দেশে নতুন অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এবার প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা রাজস্ব দিতে হবে। রাজস্ব আদায়ের নতুন খাতগুলোর দিকে দৃষ্টি হবে এবং দোকানগুলোতে ক্যাশ রেজিস্ট্রার মেশিন সরাতে হবে। এছাড়া বন্দরগুলোতে স্ক্যানার বসাতে হবে।’

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘এবার ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, দুই লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা দিতে পারব।’

মুস্তফা কামাল বলেন, ‘সাধারণ মানুষ রাজস্ব দিতে চায়, আমাদের লোকরা যাতে নিতে পারে সে দিকে খেয়াল করতে হবে। একটি উইন-উইন অবস্থা তৈরি করতে হবে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here