আগামী মে মাসে অনুষ্ঠেয় ভারতের জাতীয় নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে নরেন্দ্র মোদির জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে তিন ক্ষমতাবান নারী রাজনীতিবিদ। যদিও এ তিন নারী দেশটির সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে এসেছেন।

তাদের মধ্যে নেহেরু-গান্ধী বংশ থেকে এসেছেন প্রিয়াংকা গান্ধী ভদ্র। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার পর ভারতকে অধিকাংশ সময় শাসন করেছে এই পরিবারটি। প্রিয়াংকা চলতি জানুয়ারিতেই চমক হিসেবে রাজনৈতিক লড়াইয়ের মাঠে নেমেছেন।-খবর রয়টার্সের।

ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশে বিরোধী দল কংগ্রেসের হয়ে মঞ্চে ওঠেন তিনি। রাজনীতি বিশ্লেষকদের ধারণা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারেন প্রিয়াংকা।

বাকি দুজন হলেন পশ্চিমবঙ্গের অভিজ্ঞ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী। মোদির ক্ষমতাসীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটকে (এনডিএ) উৎখাত করতে ভিন্ন ভিন্ন দলের এই তিন নারী এক হয়েছেন। যদিও তাদের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়নি এখনো।

ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী যশোবন্ত সিংহ বলেন, এনডিএর চেয়ে বিরোধী দলের অনেক বেশি প্রভাবশালী নারী রাজনীতিবিদ রয়েছে। কাজেই সাধারণত তারা ভোটারদের কাছে বেশি প্রত্যয়ী হিসেবে নিজেদের দাঁড় করাতে পারবেন। বিশেষ করে নারী ভোটারদের কাছে তারা বেশি আস্থার প্রতীক হয়ে উঠতে সক্ষম হবেন।

৮১ বছর বয়সী যশোবন্ত সিংহ গত বছর হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি বলেন, বিজেপির চিন্তিত হওয়া উচিত। বিশেষ করে রাজনীতির কেন্দ্রভূমিতে বড় তিনটি রাজ্যে ব্যাপক পরাজয়ের পর তাদের হতাশ হওয়াই স্বাভাবিক।

মূলধারার রাজনীতিতে প্রিয়াংকার অভিষেক অধিকাংশ ভারতীয় গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। এতে উচ্ছ্বসিত সমর্থকদের উল্লাসও দেখা গেছে। কেউ কেউ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তার মিল খুঁজে পেয়েছেন।

মে মাসের নির্বাচনে তিনি কংগ্রেসের ট্রাম্পকার্ড হতে পারেন বলেও মনে করছেন অনেকে। তার ভাই কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে তাকে তুলনা করলে দেখা যায়, সাধারণ মানুষের হৃদয় স্পর্শ করতে না পারায় অতীতে রাহুলকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।

ক্ষমতাসীন মোদির জন্য হুমকি হয়ে দেখা দেয়া অপর দুই নারী প্রিয়াংকার চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ। জোট সরকারের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে তাদেরকে।

৬৩ বছর বয়সী সাবেক শিক্ষক মায়াবতীকে ভারতজুড়ে সবাই একনামে চেনে। তার নিজের দল বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) ও একসময়ের তিক্ত শত্রু সমাজবাদী পার্টির মধ্যে গত মাসে জোট গড়েন মায়াবতী।

হিন্দুধর্মের নিচু জাত ও দলিতদের প্রতিনিধিত্ব করছে বিএসএফ। অন্যদিকে সমাজবাদী পার্টি মূলত মুসলমান ও নিচু জাতের লোকদের সমর্থন পাচ্ছে।

ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকারের দুবারের রেলপথমন্ত্রী ৬৪ বছর বয়সী মমতা ব্যানার্জি। ১৯৯৭ সালে কংগ্রেস ছাড়ার পর সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস পার্টি গঠন করেন তিনি। কলকাতায় হাজার হাজার সমর্থককে নিয়ে তিনি বিজেপিবিরোধী সমাবেশের আয়োজন করেছেন।

তবে বিরোধী দলগুলো যত চেষ্টাই করুক, জনমত জরিপে মোদি এখনো ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা।

কন্যাশিশুদের উন্নয়নে তাদের শিক্ষিত করে তুলতে মোদির বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও আন্দোলন দেশজুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তার ২৬ সদস্যের মন্ত্রীসভায় ছয় জন নারী রয়েছেন।

মমতা ব্যানার্জি ও কংগ্রেসের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক জোট হয়নি। যদিও তাদের পরস্পরের মধ্যে পরিচয় আছে।

সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও মমতা ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ সহযোগী দিনেশ ত্রিভেদী বলেন, সাবেক কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে মমতার ব্যক্তিগত ভালো সম্পর্ক আছে। কাজেই সোনিয়ার দুই সন্তানের সঙ্গে কাজ করতে মমতার অসুবিধা হওয়ার কথা না।

ত্রিভেদী বলেন, অভিজ্ঞতার দিক থেকে মমতা অনেক বেশি এগিয়ে। রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াংকা যদি মমতার দিকে হাত বাড়ান তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here