মরে গেলেও ফিরে তাকাবো না তোর মুখপানে! আর কথা? সে তো বলবোই না। ঠিক এমনই ধনুকভাঙ্গা পণই যেনো করে বসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী! কার সাথে? তা কি আর নতুন করে বলে দিতে হবে, বিশেষ করে সিআরপি কনভয়ে গত ১৪ তারিখের জঙ্গি হানার পর? অবশ্যই মোদীর জিভ বেশ ঝাঁঝালো স্বরেই আক্রমণ শানিয়েছিলো চিরপ্রতিদন্দ্বী পাকিস্তানের দিকে। এমন ওল-তেঁতুল রসালো পীরিতের মাঝেই সুগন্ধা সুবাতাস বইয়ে দিলেন খোদ নরেন্দ্র মোদী। গলার স্বর বেশ নরোম করে পাকিস্তানকে আলোচনার টেবিলে ডাক দিতে মোদীর যেনো তিলমাত্র আপত্তি নেই। আর এই ঐতিহাসিক মিষ্টিমাখা ডাকাডাকিতেই স্পষ্ট হয়ে গেলো, মোদী বসতে চান। বসতে চান পাকিস্তানের সাথে আলোচনার টেবিলে।

উপমহাদেশের দুই পরাক্রমশালী রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের আজন্ম তিক্ততার মাঝে এমন বৈঠকবাজির মিঠাইম-া কিন্তু আকাশ থেকে আসেনি। ভারত সফররত সৌদী যুবরাজ ঠিক ঠিক রুদ্ধদ্বার আলোচনায় কোনো না কোনো ভাবে বশ করে ফেলেছেন মোদীকে।আনন্দবাজার পত্রিকা বেশ রসিয়ে এই বুধবার লিখেছে এক জবরদস্ত প্রতিবেদন।

পত্রিকাটি বলছে, ‘‘যে সোনায়া পাকিস্তানকে উদ্দেশ করে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আলোচনার পাট শেষ।’’ আজ কিন্তু সুর কিছুটা নরম করে ইসলামাবাদকে ফের আলোচনার বার্তাই দিলেন নরেন্দ্র মোদী। সৌদি আরবের যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের সঙ্গে মোদীর বৈঠকের পরে যৌথ বিবৃতিতে বলা হল, ‘‘সামগ্রিক আলোচনা যেখানে শুরু হতে পারে, ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সে রকম পরিবেশ  তৈরির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছে দুই দেশ।’’
পুলওয়ামার হামলার পরে জইশ-ই-মহম্মদ নেতা মৌলানা মাসুদ আজহারকে রাষ্ট্রপুঞ্জের জঙ্গি তালিকায় আনার দাবি জোরদার হয়ে ওঠার আবহে পাকিস্তান সফরে গিয়েছিলেন সলমন। সেখানে পাকিস্তান-সৌদি যৌথ ঘোষণাপত্রে ছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের জঙ্গি তালিকা নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ। আজ সেই ঘোষণাপত্রের উল্টো পথে হেঁটেছেন সলমন। সৌদি-ভারত বিবৃতি বলছে, ‘‘জঙ্গির পাশাপাশি জঙ্গি সংগঠনকেও রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষিদ্ধ তালিকায় আনার বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়েছে বৈঠকে।’’

সীমান্তপারের সন্ত্রাস রোখা, জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির আর্থিক সাহায্য বন্ধ করাÑ সবই রয়েছে বিবৃতিতে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের মতে, আজকের বৈঠকের পরে এ কথা স্পষ্ট যে, পুলওয়ামা-পরবর্তী পরিস্থতি সামলাতে কূটনৈতিক পথেই জোর দিচ্ছে দিল্লি। সৌদি আরব পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাই সে দেশের নেতৃত্বকে পাশে রেখে বার্তা দেওয়া হয়েছে ইসলামাবাদকে। বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের মে থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে মোদী যে ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগী হয়েছিলেন, তার প্রশংসা করেছেন সলমন। কিন্তু ঘটনা হল, ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে তৃতীয় রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না, এটাই ছিল এত দিন সাউথ ব্লকের অবস্থান। সৌদি আরবের সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে পাকিস্তান প্রসঙ্গ রেখে সেই অবস্থান থেকে সরে এল নরেন্দ্র মোদীর সরকার।’’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here