প্রভাষ আমিন

চকবাজারের চুড়িহাট্টায় কিভাবে আগুন লেগেছে, তা এখনও মীমাংসিত নয়। তদন্ত কমিটি নিশ্চয়ই এ রহস্যের কিনারা করবে। কিন্তু তার আগেই নানা জনের নানা মত আগুনের উৎস নিয়ে বিভ্রান্তি বাড়াচ্ছেই কেবল। প্রথম ধারণা করা হচ্ছিলো, চুড়িহাট্টার রাস্তায় একটি পিকআপ ভ্যানের সিএনজি সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে বা সেই পিকআপ ভ্যান থেকে সিলিন্ডার নামানোর সময় আগুন লাগে। সে আগুনে বিস্ফোরিত হয় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার। সেখান থেকে পাশের হোটেলের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে গোটা রাস্তায় এবং আশপাশের ভবনে। কিন্তু একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সে ধারণাটি ঠিক নাও হতে পারে। মনে হচ্ছে, ওয়াহেদ ম্যানশনের দোতলার কেমিক্যালের গোডাউন বিস্ফোরিত হয়ে দোতলা থেকে রাস্তায় এসে পড়েছে। উৎস যাই হোক, মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা চুড়িহাট্টায়। পুড়ে মারা যায় অন্তত ৭০ জন।

কিভাবে আগুন লেগেছে, সেটা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে দুটি পক্ষ স্পষ্ট দুইভাগে ভাগ হয়ে গেছে। কেউ বলছেন, সিলিন্ডার; কেউ বলছেন, কেমিক্যাল। কিন্তু এটি সাধারণ বিতর্ক নয়। এই বিভ্রান্তির পেছনে ব্যবসায়িক স্বার্থ রয়েছে। বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারের ধারণাটি শুরুতেই বাতিল হয়ে যাবে। কারণ ঘটনাস্থলে কোনো ট্রান্সফর্মার ছিলো না। গাড়ির সিএনজি সিলিন্ডার বা হোটেলের গ্যাস সিলিন্ডারও হয়তো দায়মুক্তি পাবে, কারণ হোটেলের সিলিন্ডার আগুন লাগার পরও অক্ষত আছে। আর দুর্ঘটনায় পুড়ে যাওয়া পিকআপ ভ্যান বা অন্য কোনো গাড়ি সিএনজিচালিত ছিলো না। তাই সন্দেহের তীর এখন ওয়াহেদ ম্যানশনের দোতলার কেমিক্যালের গোডাউনের দিকেই। কারণ সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, বিস্ফোরণটি ওপর থেকে নিচে নেমেছে এবং বিস্ফোরণের সাথে সাথে গোটা এলাকায় বডি স্প্রের ক্যান ছড়িয়ে পড়ে। এই ক্যানের গুদাম ছিলো ওয়াহেদ ম্যানশনের দোতলায়। এই ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে আরো অনেক বেশি কেমিক্যাল মজুদ ছিলো। ভাগ্যিস আগুন সেখান পর্যন্ত যেতে পারেনি। গেলে আগুনের ভয়াবহতা আরো অনেক বেশি হতে পারতো।

কিন্তু একটি পক্ষ, শুরু থেকেই আগুনের জন্য সিএনজি সিলিন্ডারকে দায়ী করে আসছে। এই পক্ষটি কেমিক্যাল পক্ষ। তারা প্রমাণ করতে চাইছেন, এ আগুনের জন্য কেমিক্যালের কোনো দায় নেই। তাদের আসল চাওয়া হলো, কেমিক্যালের ব্যবসা যেন আগের মতোই চলতে পারে। আর সিলিন্ডার পক্ষ, সব দায় চাপাচ্ছেন কেমিক্যালের ঘাড়ে। তারা বলতে চাচ্ছেন, গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। সিলিন্ডার নিরাপদ।

অতো বিতর্কে আমার আগ্রহ নেই। এই বিতর্কটা আমার কাছে ডিম আগে না মুরগি আগে মার্কা মনে হচ্ছে। কারণ আগুন যেভাবেই লাগুক, ৭০ জন মানুষ মারা গেছে, এটাই নির্মম বাস্তবতা। সেদিন সিলিন্ডার থেকে আগুন লাগলেও কেমিক্যাল নিরাপদ হয়ে যাবে না। আবার কেমিক্যাল থেকে আগুন লাগলেও সিলিন্ডারকে সম্পূর্ণ নিরাপদ বলা যাবে না। বাস্তবতা হলো, দুটিই ঝুঁকিপূর্ণ। দুটিকেই নিরাপদ রাখতে হবে। পুরান ঢাকার ঘনবসতি এলাকা থেকে এখনই সব কেমিক্যাল সরিয়ে নিতে হবে। আবার গাড়ির সিলিন্ডার ও রান্নাঘরের সিলিন্ডারও নিয়মিত টেস্ট করে নিরাপদ রাখতে হবে। ব্যবসায়িক স্বার্থের চেয়ে মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশি।

লেখক : হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here