বিভক্তিতেই রয়ে গেল ফোবানা : এনএবিসি ‘র সাথে এক পক্ষের ঐক্য

0
171

বাংলা খবর ডেস্ক:
ফোডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন্স ইন নর্থ আমেরিকার (ফোবানা) বিভক্তিতেই রয়ে গেছে। তবে একটি পক্ষের সাথে নর্থ আমেরিকা বাংলাদেশ কনভেনশনের (এনএবিসি)’র ঐক্য প্রক্রিয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে গেল রবিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ঘোষণা দেয়া হয় যে, আগামী বছর থেকে এনএবিসি আর থাকবে না। তারা ফোবানার সাথে একিভূত হবে। তবে এবার ফোবানা এবং এনএবিসির সম্মেলনে সকলেই অংশ নেবেন। এনএবিসি সম্মেলন হবে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে আটলান্টায়। অপরদিকে, ফোবানা সম্মেলন হবে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নিউইয়র্কে।
রবিবারের এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জ্যাকসন হাইটসের বেলাজিনো পার্টি হলে। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফোবানার এই গ্রুপের স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারমান মোহাম্মদ হোসেন খান। প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন মোহাম্মদ হোসেন খানের সাথে বিলুপ্তির ঘোষণা দেয়া এনএবিসির নেতা আবু লিয়াকত হোসেন, ফোবানার এই অংশের হোস্ট কমিটির আহ্বায়ক শাহনেওয়াজ, সদস্য-সচিব ফিরোজ আলম, ফোবানার স্টিয়ারিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী আজম প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, ‘বিভক্তি-বিভাজনকে বিসর্জন দিয়ে আমরা ও এনএবিসির নেতৃবৃন্দ আজ ঐক্যবদ্ধভাবে এক জায়গায় দাঁড়িয়েছি। এখন থেকেই আমরা ঐক্যের পথে চলা শুরু করেছি। অনেক আলাপ-আলোচনার পর নিজেদের মধ্যেকার দূরত্ব কমিয়ে এনে একসাথে কাজ করার লক্ষ্যে আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এক সময় ফোবানার যাত্রাপথে নিজেদের মধ্যেকার অনাকাঙ্খিত বিভক্তি ও বিভাজনের রেখা দেখা দেয়। এর ফলে ১৯৯৪ সালে ফোবানা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। অনেক চেষ্টা ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে ১৯৯৭ সালে ফোবানা ঐক্যবদ্ধ হয়। পুনরায় ১৯৯৯ সালে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। এই বিভক্তির জন্যে আমরা কাউকেই দায়ী করতে চাই না। এটাই ছিল ফোবানার ওই সময়ের পরিণতি। ফোবানার সৌভাগ্যের ছিকা ছিড়ে গেলেও চলার পথ থেমে যায়নি’।

লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মদ হোসেন খান বলেন, ‘ভাঙা সম্মেলন করার দীর্ঘ পথ চলতে গিয়ে ফোবানার অনেক অলংকার তার গা থেকে খসে পড়েছে। ফলশ্রুতিতে আমরা মূলধারার রাজনীতিতে নিজেদের সেভাবে তুলে ধরতে পারিনি। প্রমোট করতে পারিনি জাতীয় সংস্কৃতি, কৃষ্টি, শিল্প ও সাহিত্যকে। আমাদের অনেক সামাজিক সংগঠনকেও বিভক্তি আর বিভাজন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে’ ।

সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়, এবছর নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে লাগায়ার্ডিয়া এয়ারপোর্ট সংলগ্ন ম্যারিয়ট হোটেলের বলরুমে ফোবানা সম্মেলন হবে। এন্এবিসি সম্মেলন হবে আটলান্টায়। আগামী বছর এনএবিসির বিলুপ্তি ঘটবে ফোবানায়-এ ঘোষণাও দেয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরও ছিলেন আতিকুর রহমান সালু, গিয়াস আহমেদ, আলী ইমাম, ডা. মাসুদুর রহমান, ড. ইবরুল চৌধুুরী, মাকসুদ এইচ চৌধরী, মঞ্জুর হোসেন, ফারুক হোসেন মজুমদার, নুরুল আজিম, এজাজ আকতার তৌফিক, আবু নাসের, নিজাম রহিম, বদিউল আলম, ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, বিল্লাল হোসেন, কামরুজ্জামান বকুল।

এই সংবাদ সম্মেলনের তথ্য জানার পরই মীর চৌধুরী এবং জাকারিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ফোবানা’র অপর পক্ষ থেকে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, ‘১৯৮৭ সালে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে যে ফোবানার যাত্রা শুরু হয়েছে, সেটির সত্যিকারের উত্তরাধিকারী আমরাই। সাংগঠনিক রীতি অনুযায়ী আমরা গত ৩২ বছর ধরে বিভিন্ন শহরে ফোবানা সম্মেলন করে আসছি। সে ধারাবাহিকতায় আসছে সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্ক সিটি সংলগ্ন লং আইল্যান্ডে নাসাউ কলসিয়ামে ৩ দিনের ফোবানার প্রস্তুতি চলছে। সেই ফোবানা সম্মেলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অভিপ্রায়ে ‘আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে’ থাকা কতিপয় লোক ফোবানার নামে তামাশা শুরু করেছেন। অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে ফোবানার মূলধারা থেকে বহিস্কৃতরাই এনএবিসি চালু করেছিলেন কয়েক বছর আগে। একইভাবে ফোবানার নির্বাচনে ভোট না পেয়ে ক্ষুব্ধ কিছু লোক পাল্টা ফোবানার নাটক করছেন। তাই জনবিচ্ছিন্ন এসব লোকজনের মধ্যেকার ঐক্যপ্রক্রিয়ার ফলাফল শূন্য।’ প্রবাসীরা যাতে বিভ্রান্ত না হন সে আহবানও জানিয়েছেন মীর চৌধুরী ও জাকারিয়া চৌধুরী।
বিবৃতিতে ফোবানার প্যাডে চেয়ারম্যান মীর চৌধুরী এবং এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি জাকারিয়া চৌধুরী বলেছেন, ‘ফোবানার নাম অবৈধভাবে ব্যবহার করে নিউইয়র্কে আজ (২৪ ফেব্রুয়ারি) যে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে তা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমরা ফোবানা কেন্দ্রীয় কমিটি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই-ফোবানা একটি ফেডারেশন। এটি পরিচালিত হয় একটি কনস্টিটিউশন ও অপারেটিং প্রসিডিউরের মাধ্যমে। এটি কোনো ব্যক্তির পরিচালিত সংগঠন নয়। যে কোনো সংগঠন ফোবানার কনস্টিটিউশন, বাইল’জ ও অপারেটিং প্রসিডিউর মেনে ফোবানায় অংশগ্রহণ করতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, নিউইয়র্কে কিছু ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে ফোবানার নির্বাচনে পরাজিত হয়ে এবং কেউ কেউ বহিস্কৃত হয়ে আজকে ফোবানার নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালনার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। যার প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে তাদেরকে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও তারা থেমে নেই। তারা একের পর এক ফোবানার নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছেন। তাই তাদেরকে অতিশিগগিরই আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য ফোবানা কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নিউইয়র্কে যখনই ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় তখনই এই গ্রুপটি বিভিন্নভাবে সম্মেলনকে বাধাগ্রস্থ করার জন্য ফোবানার নাম ব্যবহার করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুষ্ঠান করার অপচেষ্টা চালায় এবং কমিউনিটিকে বিভক্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু অন্য শহরে যখন ফোবানা সম্মেলন হয় তখন তাদের দেখা যায় না। নিউইয়র্কে যে সংগঠনেই এরা সম্পৃক্ত হয়েছেন সেই সংগঠনকেই তারা দ্বিধাবিভক্ত করেছেন। এরা সংগঠন ভাঙার কারিগর হিসেবে সমাজে চিহ্নিত। তাই সর্বোচ্চ এই আইনের দেশে এই ধরনের বেআইনি কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত না করার জন্য গণমাধ্যমসহ সকলের প্রতি অনুরোধ করা হচ্ছে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here