এবারের মহান মে দিবস উপলক্ষে শ্রম মন্ত্রণালয়ের স্লোগান ছিল ‘শ্রমিক মালিক ঐক্য গড়ি, উন্নয়নের শপথ করি’। সেই স্লোগানের কঠোর সমালোচনা করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরিক বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাংসদ রাশেদ খান মেনন।
‘শ্রমিক আর মালিকের ঐক্য, কার স্বার্থে আপনারা বলছেন? শ্রমিকের স্বার্থে? না মালিকের স্বার্থে? আজকে টিআইবি রিপোর্ট দিয়েছে, যে শ্রমিকের মজুরি বাড়ে নাই। বরং ২৬ শতাংশ মজুরি কমে গেছে। তাই শ্রমিকদের মধ্যে ঐক্য শ্রমিক শ্রেণির ঐক্য-এটাই আমাদের মে দিবসের মূল স্লোগান হোক। শ্রমিক মালিক ঐক্য নয়, ঐক্য শ্রমিকে শ্রমিকে।’ যোগ করেন মেনন। শ্রমিকরা ঐক্য করতে পারলে সব দাবি আদায় করা যাবে বলে মনে করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, সরকার কার স্বার্থে মালিকদের সঙ্গে শ্রমিকদের ঐক্য গড়ার শপথ করালেন। গত ১০ বছরে উপরতলার মানুষের সম্পদ বেড়েছে ১৫৫ শতাংশ আর নিচতলার মানুষের সম্পদ কমেছে ১২১ শতাংশ। গার্মেন্টস শ্রমিকদের ৫৮ শতাংশ মানসিক, ২১ শতাংশ যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নির্যাতনকারী সেই মালিকদের সঙ্গে সরকার শ্রমিকদের ঐক্য করতে বলছে?
আজ বুধবার রাজধানীর পল্টন মোড়ে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন আয়োজিত মে দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাশেদ খান মেনন এসব কথা বলেন।
রাশেদ খান মেনন বলেন, আপনারা (উপরতলা) বাড়ির পর বাড়ি করছেন আর আমাদের গার্মেন্টস শ্রমিকরা যুগ যুগ ধরে ঝুপড়ি ঘরে বাস করছে। তাদের জন্য একটি ডরমিটরিরও ব্যবস্থা করতে পারেননি।
বিশেষ অতিথি মেননের স্ত্রী ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ লুৎফননেসা খান বিউটি বলেন, গার্মেন্টস কর্মীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি দুই মাস বৃদ্ধি করে ছয় মাস করতে হবে। নিয়মিত শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও যৌন হয়রানি বন্ধ করতে হবে। যদিও প্রধানমন্ত্রী সব ধরনের নির্যাতন বন্ধ করার চেষ্টা করছেন। পোশাক কারখানার স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
সমাবেশে সব কারখানায় মজুরি বাস্তবায়ন, সবক্ষেত্রে নারী পুরুষ সমতা, চাকরিচ্যুত ১১ হাজার শ্রমিককে পুনর্বহাল, শ্রমিকদের নামে দায়ের করা ৩৫টি মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ ১৩ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিনের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক আরিফা আক্তার প্রমুখ।
এ ছাড়া মহান মে দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও সমাবেশ করেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। নগরীর পুরানা পল্টন, গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট ও প্রেসক্লাবের সামনে মে দিবসের শোভাযাত্রা বের করে বেশ কয়েকটি সংগঠন। সবার কণ্ঠেই ছিল- ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও, লড়াই কর।’ কর্মদিবস আট ঘণ্টা করা, ঘোষিত মজুরি বাস্তবায়ন ও মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করাসহ শ্রমিকের ন্যায্য দাবি তুলে ধরেন তাঁরা।