পিতা দিবসের কড়চা

0
529


চৌধুরী জহির:
মাতা দিবস, পিতা দিবস, ভালবাসা দিবস, ধন্যবাদজ্ঞাপণ দিবসগুলো নিয়ে ভাবছিলাম। এমন একদিন হয়ত আসবে, যেদিন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের মত আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদও বিদায় নেবে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী তারা রেখে যাবে দিবসগুলোর বাণিজ্যিক কদর!

এই দিবসগুলোর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রে মর্মস্পর্শী ইতিহাস আছে। কিন্তু সেই ইতিহাস আমাদের নিছক বাঙালী কিংবা এশীয় ঘরানার নয়। আমরা আমাদের জীবন যাপনে যা স্বাভাবিক ও ন্যায়ানুগ ভাবি, পশ্চিমা জীবন যাপনে সেটাই হুয়ে যায় বিশেষ কারণ জনিত।

মানুষের এই জীবন যাপনকে বাণিজ্যিক চাদরে ঢাকতেই অভ্যস্ত কনজ্যুমার ইকোনমি। তাইত মাতা দিবস, পিতা দিবস কিংবা ভালবাসা দিবসে একটি বাণিজ্যিক টার্গেট নির্ধারণ করে কর্পোরেশনগুলো। বাড়ি-গাড়ির দোকান থেকে শুরু করে ছোট্ট ১ ডলার দামের শুভেচ্ছা কার্ড বিক্রেতা পর্যন্ত।

ঘটনাকাল ১৯৬৬, যখন প্রেসিডেন্ট লিন্ডেন জনসন প্রথম ফাদার্স ডে ঘোষণা করেন। কিন্তু এটি জাতীয় দিবসের স্বীকৃতি পায় আরো ছয় বছর পর ১৯৭২ সালে। তবে ফাদার্স ডে’র ধারণাটি মূর্ত হয়ে ওঠে সেই ১৯০৭ সালে। যেদিন পশ্চিম ভার্জিনিয়ার একটি সুরংয়ে আমেরিকার ইতিহাসে ভয়াবহতম খনি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়! কয়লা খনিতে সেদিন মারা যায় ৩৬২ জন শ্রমিক। তার দুই বছর পর ইলিনয়ে আবারও মারা যায় আরো ২৫৯ জন!

১৯১৪ সাল থেকে মাতা দিবস পালিত হয়ে এলেও সার্বজনীন পিতা দিবসের জন্য আমেরিকা তখনও প্রস্তুত নয়। কিন্তু সনোরা স্মার্ট ডোড নামে ওয়াশিংটনের এক তরুণী যেন অলক্ষ্যে প্রস্তুত হচ্ছিলেন পিতা দিবস পালনের আবশ্যকতা জাতিকে বুঝাতে। মাতৃহীনা সনোরা নিজের আরো পাঁচ ভাই-বোনকে বড় করে তোলার জন্য পিতাকে সম্বর্ধনার আয়োজন করেন। সেই ১৯১০ সালের ১৯শে জুন। সে দিনটিও ছিল রোববার।

খুব ছোট্ট বয়সে সনোরার মা মারা গেলে তার পিতা খুব কস্টে ৬টি সন্তানকে বড় করে তুলেন নিজে আর বিয়ে না করে। সনোরার বাবা ছিলেন একজন যুদ্ধফেরত সৈনিক, নাম উইলিয়াম স্মার্ট। তার জন্মদিন ছিল ৫ জুন। সনোরা চেয়েছিলেন, সেদিনটিতেই যেন তাকে সম্মানিত করা হয়। কিন্তু চার্চের অনুরোধে সেটি পিছিয়ে করা হয়েছিল ১৯শে জুন রোববার তারিখে।

পিতা দিবস উপলক্ষে এবার যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ব্যবসা হয়েছে কমপক্ষে ১৬ বিলিয়ন ডলার। গত এক দশকে পিতা দিবসের ব্যবসা বেড়েছে ৭০ শতাংশ। অবশ্য মাতা দিবসে এবার ব্যবসা হয়েছে ২৫ বিলিয়ন ডলার।

বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য কোম্পানি ক্রেতাসাধারণকে আকৃষ্ট করে পণ্যমূল্যে ছাড় দিয়ে। যেমন বাই ওয়ান, গেট ওয়ান ফ্রি। আমার এক বন্ধু বলেছিলেন- ‘ফ্রি’ শুনলেই নাকি মহিলারা কেনোকাটার জন্য পাগলপারা হয়। এটা এরকম যে, হাতির সঙ্গে চামচ ফ্রি দিলে, ঐ চামচের জন্য তারা নাকি হাতিটাই কিনবে! দিবসগুলোতে দোকানীরা ঐ কাজটিই করেন! তারা ‘ফ্রি’ শব্দটি জুড়ে দেবেই!

আমার স্ত্রীও বাচ্চাকাচ্চাদের বাজারে নিয়ে গিয়ে নিজের পয়সায় কিনে আনলেন পছন্দমাফিক স্যুট আর সার্ট আমার জন্য। বিনিময়ে এ মাসের বাড়ির ইউটিলিটি বিলগুলো চাপিয়ে দিলেন আমার ঘাড়েই। ফলে এ মাসে আরো দু’টি দিন হাড়ভাঙ্গা ওভারটাইম করতে হবে আমাকেই! লং লীভ ফাদার্স ডে, মাদার্স ডে!

নিউইয়র্ক, ১৭ই জুন ২০১৯, বৈশাখী অনুষ্ঠানে আর গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়ান, আরিজোনা, যুক্তরাষ্ট্রে।
লেখক: কলামিস্ট, সাংবাদিক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here