ই-কমার্স ও বৈশ্বিক পেমেন্ট সিস্টেমে ঢুকতে যাচ্ছে ফেসবুক। এজন্য ভার্চুয়াল বা ডিজিটাল মুদ্রা ‘লিব্রা’ নিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। এটি আগামী বছরই চালু করা হবে। মঙ্গলবার মার্ক জাকারবার্গ তার ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে এই তথ্য জানান।
এই ভার্চুয়াল মুদ্রা চালু করতে ২৮টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করেছে ফেসবুক। এই মুদ্রা লেনদেনের জন্য ইতোমধ্যে পেপ্যাল, ভিসা, মাস্টারকার্ড, ইবে, উবার, লিফট ও স্পটিফাইয়ের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আর এই পুরো সিস্টেমটি দেখাশোনা করবে লিব্রা অ্যাসোসিয়েশন।
ভার্চুয়াল মুদ্রা লিব্রার দাম যাতে অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা না করে তা নিশ্চিত করতেই কাজ করবে তারা। এছাড়াও, বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে ফান্ড বরাদ্দ দেওয়ার কাজ করবে প্রতিষ্ঠানটি। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান লিব্রা অ্যাসোসিয়েশন। যার প্রধান দফতর জেনেভা শহরে।
লিব্রা নামটি ফেসবুকের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রোমান যুগে ওজন পরিমাপপদ্ধতিকে ‘লিব্রা’ বলা হতো। ফরাসি ভাষায় লিব্রা অর্থ স্বাধীনতা। যারা রাশিচক্রে বিশ্বাস করেন তারা এটাকে তুলা রাশি হিসেবেই জানেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘লিব্রা’ নামের ক্রিপটোকারেন্সি উন্মুক্ত করার কথা জানিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। যা ২০২০ সালের প্রথমার্ধেই বাজারে চালু করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
ফেসবুকের লিব্রা প্রকল্পে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পেপালের সাবেক কর্মকর্তা ডেভিড মারকাস। তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা এবং অর্থ, ঠিক এটাই আমরা এখানে এক করার চেষ্টা করছি।’
জাকারবার্গ বলেন, ‘আমরা ধোঁকাবাজি থেকে সুরক্ষা দিতে চাই। যদি আপনি লিব্রা মুদ্রা হারান, আমরা তা ফেরত দেব। আমাদের এখানে রিফান্ড করার সুযোগ থাকবে।’
ফেসবুকের ভাষায় লিব্রা হলো বৈশ্বিক মুদ্রা ও আর্থিক অবকাঠামো। সহজভাবে বললে, এটা ফেসবুকের তৈরি একটি ডিজিটাল সম্পদ ও তাদের নিজস্ব ব্লকচেইন সংস্করণ। আর ব্লকচেইন হলো এনক্রিপ্টেড প্রযুক্তি, যা বিটকয়েনও ব্যবহার করে।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্লকচেইন প্রযুক্তিতে তৈরি এই ক্রিপ্টোকারেন্সিটি চালু হলে ফোনে ডিজিটাল ওয়ালেট ‘ক্যালিব্রা’ ডাউনলোড করতে হবে। অ্যাপটির মাধ্যমে ডিজিটাল মুদ্রা আদান-প্রদান ও খরচ করা যাবে। আলাদা অ্যাপ হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি ম্যাসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ থেকেও এটি ব্যবহার করা যাবে।
ফেসবুক দাবি করছে, ‘লিব্রা’ উন্নত ও কম খরচ মুক্ত একটি সেবা। এর মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষ উপকার পাবে। একটি ফোনের মাধ্যমেই তারা এই জগতে প্রবেশ করে টাকা পাঠাতে পারবে। শুধু তাই নয়, যারা ব্যাংকিং সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত নন, তারাও এর মাধ্যমে আর্থিক সেবা নেওয়ার সুযোগ পাবে। এটা চালু করতে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য কয়েকটি দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছে ফেসবুক।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানায়, বিশ্বজুড়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে আছে ক্রিপ্টোকারেন্সি পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে মানি লন্ডারিং, অবৈধ মাদক কেনাবেচার অভিযোগ আছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো ফেসবুকের নতুন এই সিস্টেমকে কীভাবে দেখছে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান বলছে, এই ভার্চুয়াল ব্যাংকিং খাতে ফেসবুকের আগমনে এরই মধ্যে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সেবাটি প্রচলিত ব্যাংকিং পদ্ধতিকে নাড়িয়ে দিতে পারে। তবে এই প্রকল্প যদি অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণের মুখে পড়ে, তাহলে এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এছাড়া ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়টি এখানে চলে আসে। লেনদেন জালিয়াতির আশঙ্কার কথাও ফেলে দেওয়া যায় না।