বাড়িতেই সম্ভব বডি মাসাজ!

0
64

ভোর হতে না হতেই দৌড়ঝাঁপ শুরু। বাজারহাট, রান্নার ঝক্কি সামলে অফিস পাড়ি। সারা দিন ডেস্কে মুখ গুঁজে কাজের সমুদ্র সাঁতরে অফিস টাইমের ভিড় ঠেলে বাড়ি ফেরা। ফিরেও যে বিশ্রামের খুব একটা অবসর থাকে, তেমনটা নয়। তবে দিনের শেষে আপনার পাশে এসে কেউ বসুক আর না-ই বসুক, দুই নিত্যসঙ্গীকে অবশ্যই পাশে পাবেন। স্ট্রেস এবং টেনশন! শরীর ও মনের ক্লান্তি দূর করলেই এই দুই বালাইকেও সহজেই বিদায় করা যায়। একটা রিল্যাক্সিং মাসাজই তার অব্যর্থ উপায়।

বাড়িতে মাসাজ সম্ভব?

অনেকেরই ধারণা, দামি স্পা বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কেউ ছাড়া মাসাজ করিয়ে লাভ নেই। ব্যাপারটা অর্ধসত্য। আপনি নিজে মাসাজ না করে অন্য কেউ করে দিলে সুফল বেশি পাবেন। শরীরের যে অংশে আপনি সবচেয়ে বেশি স্ট্রেস অনুভব করছেন শুরু করুন সেখান থেকেই। দেখবেন, মাত্র মিনিট দশেকের মাসাজেই অনেক রিল্যাক্সড লাগবে।

ঘাড় বা কাঁধের মাসাজ: পেটের উপরে ভর দিয়ে শুতে হবে। যিনি মাসাজ দেবেন, তিনি প্রথমে কাঁধের কাছে বুড়ো আঙুল এবং কলার বোনের কাছে বাকি আঙুল রেখে হালকা চাপ দেবেন। এর পরে ওই পজ়িশনেই সার্কুলার মোশনে বুড়ো আঙুল এবং বাকি আঙুলগুলি বোলাতে থাকুন। একে একে দুই কাঁধের কাছেই এটা করুন।

পিঠ ও কোমরের মাসাজ: এ ক্ষেত্রেও পেটে ভর দিয়ে শুতে হবে। যিনি মাসাজ করবেন, তিনি হাতে তেল বা লোশন লাগিয়ে নিন। প্রথমে মিনিট পাঁচেক পিঠে এবং হালকা হাতে কোমরে কিছুটা তেল বা লোশন মালিশ করুন। এর পরে কোমরের নীচের (টেলবোন) দিক থেকে পিঠের উপরের দিকে মাসাজ করুন। চাপের পরিমাণ অল্প অল্প করে বাড়াতে পারেন। মাঝে মাঝে কোমর ও পিঠের ধারের অংশেও সার্কুলার মোশনে মাসাজ করুন। শেষে কোমরের একদম নিম্নাংশের মধ্যভাগে বুড়ো আঙুল রাখুন। বাকি আঙুলগুলি থাকবে বাইরে মুখ করে। ওই পজ়িশনেই আস্তে আস্তে আঙুলগুলো উপর দিকে নিয়ে আসুন। কম করে বার দশেক এটা করতে হবে।

হেড মাসাজ: মাথাব্যথা দূর করতে এই মাসাজের বিধান রয়েছে আয়ুর্বেদে। কপালের মধ্যভাগে বুড়ো আঙুল রেখে বাকি চার আঙুল রাখুন কপালের দু’পাশে। শ্যাম্পু করার ধাঁচে আঙুলগুলো গ্লাইড করে চুলের উপর দিয়ে বুলিয়ে নিয়ে আসুন। এ ভাবে বেশ ক’বার মাসাজ করুন।

ফুট মাসাজ: সারা দিনের দৌড়ঝাঁপের ধকলের পরে পায়ের পাতায় কিছু ক্ষণের মাসাজ পা ব্যথা এবং স্ট্রেস তো বটেই, অনিদ্রার থেকেও নিস্তার দিতে সক্ষম। পায়ে ভাল করে বডি অয়েল বা এসেনশিয়াল অয়েল মেখে নিন। আঙুল দিয়ে পা চেপে ধরুন এমন ভাবে, যাতে বুড়ো আঙুল দুটি থাকে পায়ের তলায়। গোড়ালির দিক থেকে আঙুলের দিকে হালকা চাপ দিয়ে বুড়ো আঙুল দু’টি তুলে আনুন। এ ভাবে কয়েক বার রিপিট করুন।

হ্যান্ড মাসাজ: কবজি থেকে শুরু করে হালকা চাপ দিতে দিতে আঙুলের উপরের অংশ পর্যন্ত আসুন। হাতের উল্টো পিঠের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি। শেষে শুধু আঙুলের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত কয়েক বার হালকা মাসাজ দিন।

বড়সড় আঘাত, ক্ষত বা বাতের সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া মাসাজ করাবেন না।

মুখমণ্ডলের মাসাজ

সুন্দর, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও দীপ্তিময় ত্বক পেতেও কেরামতি দেখাতে পারে মাসাজ। এতে আপনার মুখের ত্বক হবে টানটান। ফুটবে জেল্লা। অচিরেই নির্বাসনে যাবে বয়সের ছাপ এবং বলিরেখা! তবে নিয়মানুবর্তিতাই হল একমাত্র শর্ত। দিনে দু’বার পারলে তো ভালই, নয়তো অন্তত রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এই ফেশিয়াল মাসাজ করুন। মাসাজের আগে এক্সফোলিয়েট করে নিন।

মাসাজ পদ্ধতি

প্রথমে সারা মুখে ক্রিম লাগিয়ে নাকের উপর দিয়ে হালকা চাপে আঙুল বুলিয়ে নীচের দিকে নিয়ে আসুন। গোটা মুখে সার্কুলার মোশনে মাসাজের পরে চোখের নীচের অংশের ভিতর থেকে বাইরের দিকে আঙুল বুলিয়ে নিন একবার। চিকবোনের নীচের জন্যও একই পদ্ধতি। এর পরে কপালের মধ্যভাগ থেকে ভুরুর উপর দিয়ে চুলের কাছাকাছি পর্যন্ত মাসাজ করুন। উপর থেকে নীচে মাসাজের সময়ে বুড়ো আঙুল ব্যবহার করুন। ঠোঁটের নীচের ভাগে আঙুলের মাথা দিয়ে হালকা চাপ দিতে দিতে থুতনির কাছে আনুন। থুতনির নীচ থেকে বাইরের দিকে আঙুল টেনে এনে কান পর্যন্ত নিয়ে যান। হালকা হাতে দ্রুত গলার মাঝের অংশ থেকে থুতনি পর্যন্ত কয়েক বার আঙুল বুলিয়ে নিন। এতে গলার আশপাশের বলিরেখা দূর হবে।

বয়স বা স্ট্রেসের কারণে অনেক সময়েই চোখের কোণে বলিরেখা ফুটে ওঠে। তা দূর করতে হালকা চাপে নাকের উপর দিয়ে চোখের কোণ পর্যন্ত তর্জনীর সাহায্যে মাসাজ করুন। পাঁচ সেকেন্ডের মতো চাপ বজায় রেখে ফের ওই পদ্ধতিতেই মাসাজ করুন। এতে ডার্ক সার্কল থেকে মুক্তি পাবেন অনায়াসে।

  • থার্ড আই পয়েন্ট অর্থাৎ নাক ও কপালের মিলনস্থলে আঙুল রেখে ১ মিনিট চাপ দিন
  • চিকবোনের নীচের অংশে তর্জনী দিয়ে ১ মিনিট চাপ দিন। একে বলে বিউটি পয়েন্ট। এতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, অ্যাকনের সমস্যা দূর হয়
  • কলার বোনকে বিউটি বোনও বলে। ক্লান্তি ও হতাশা কাটাতে এই হাড়ের উপরেও প্রেশার দিতে হবে
  • ভুরুর নীচের হাড়েও চাপ দিতে হবে। চোখের নীচের কালি ও ক্রোজ় ফিট অর্থাৎ চোখের ধারের বলিরেখা দূর হবে

শেষ কথা

অনেক সময়ে আপনার অজান্তেই শরীরে এমন কিছু সমস্যা বাসা বাঁধে, যার উপশমে এই ঘরোয়া পদ্ধতিগুলি আশানুরূপ স্বস্তি দিতে অপারগ। সে ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের দ্বারস্থ হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here