ক্ষতিপূরণ চাওয়া সেই রোগীর বাসায় গেলেন মেয়র সাঈদ

0
330

রাজধানীতে ডেঙ্গু মোকাবিলায় ‘ব্যর্থ’ হওয়ায় ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা সেই রোগীকে দেখতে গেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এ সময় তিনি বলেন, ‘নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকেই রোগীকে আমি দেখতে এসেছি।’

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম একটি আইনি নোটিশ পাঠান। এতে উল্লেখ করেন, তার স্ত্রী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ায় সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতাকে দায়ী করেন এবং ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণও দাবি করেন।

এর দুদিনের মাথায় শনিবার সকালে ওই আইনজীবীর খিলগাঁও এলাকার বাসায় যান মেয়র সাঈদ খোকন। এ সময় তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে কথা বলেন এবং তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন।

ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে করপোরেশনের কার্যক্রমের সঙ্গে নাগরিক সচেতনতার সম্মিলন ঘটলেই এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এজন্য নগর কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। সর্বদাই নাগরিকদের পাশে আছে এবং পাশে থাকবে।’

এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি, তবে নগর কর্তৃপক্ষ সচেতন আছে, তাই নাগরিকদের আতঙ্কিত না হয়ে এ বিষয়ে সচেতন হতে বলেছেন মেয়র। এ সময় তিনি মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএসসিসির গৃহীত এবং চলমান বিভিন্ন কার্যক্রম সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ১ জুলাই থেকে ক্রাশ প্রোগ্রাম উদ্বোধনের মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এর পাশাপাশি নাগরিক উদ্বুদ্ধকরণ ও সচেতনমূলক সভা-সমাবেশের আয়োজন, প্রচারপত্র বিতরণ, মাইকিং, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, অতিরিক্ত জনবল নিয়োজিত করে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে বলে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে কল সেন্টারের মাধ্যমে বিনামূল্যে নগরবাসীকে ওষুধসহ চিকিৎসাসেবা প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে স্ত্রী ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলাকারী আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম বাসায় এসে রোগীর খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য মেয়র সাঈদ খোকনকে ধন্যবাদ জানান।
এ সময় মেয়রের সঙ্গে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াহিদুল হাসান মিল্টন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডোর জাহিদ হাসানসহ অন্য জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণের সিটি করপোরেশনের মেয়কে পাঠানো নোটিশে উল্লেখ করা হয়, তানজিম আল ইসলামের স্ত্রী সাদিকুন নাহার গত ২৯ জুন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে খিলগাঁওয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি হন ও তাঁর রক্তে প্ল্যাটিলেট ১১ হাজারে নেমে অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে দাঁড়ায়। চিকিৎসকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় পাঁচ দিন পর কিছুটা সুস্থ হন তিনি। গত বছরের অক্টোবরে আইনজীবী তানজীম নিজেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন।

এই নোটিশে আরো বলা হয়, নোটিশ গ্রহীতাদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে মশা নিধন করা ও সিটির বাসিন্দাদের জন্য শহরকে বাসযোগ্য নগরীতে রূপান্তরিত করা। কিন্তু, এ এলাকায় (খিলগাঁও থানার ১ নম্বর ওয়ার্ড) প্রায় তিন বছর বসবাস করছি। এখন পর্যন্ত মশা নিধনে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। এমনকি, সচেতনতামূলক প্রচারও করা হয়নি। ভয়ঙ্কর এডিস মশা নিধনে আপনাদের ব্যর্থতা স্পষ্ট প্রতীয়মান ও এর জন্য আপনারা দায়ী।

‘আমার স্ত্রীর চিকিৎসা ও তাঁর ডেঙ্গুর কারণে সন্তানসহ পরিবার অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন। এ ক্ষতির দায়ভার আপনাদের ওপর বর্তায়। কারণ, নাগরিকদের মশার উৎপাত থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব আপনাদেরই। আমার স্ত্রীর চিকিৎসা বাবদ ৫০ হাজার টাকা, আমার আইনজীবী হিসেবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার জন্য আড়াই লাখ টাকা, দুই সন্তানের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির পরিমাণ ও পরিবারের নিদারুণ মানসিক ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয় হলেও, ৪৭ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হলো। অর্থাৎ,আপনাদের মশা নিধনে ব্যর্থতার দরুণ আমার মোট ৫০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষয়ক্ষতির জন্য আপনারা আইনত দায়ী।’

এতে আরো বলা হয়, নোটিশ পাওয়ায় সাত কার্যদিবসের মধ্যে আপনাদের ব্যর্থতার দরুণ আমার স্ত্রীর ডেঙ্গু আক্রান্তের কারণে আমাকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে বাধিত করবেন। একই সঙ্গে, এডিস মশা নিধনে কী কী পদক্ষেপ ও কত টাকা ব্যয় করেছেন, তা তথ্য অধিকার আইনমতে লিখিতভাবে অবহিত করতে অনুরোধ করা হলো। সর্বোপরি, এডিস মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে এবং খিলগাঁওয়ের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মশা নিধনে তিন দিনের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হলো।

অন্যথায়, টর্ট আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ আদায়ে ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য করতে, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়াসহ অন্য আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয় ওই নোটিশে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here