খাদ্য সংকটে কাশ্মীর

0
72

কাশ্মীরে অচলাবস্থা। বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন। কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই। গাড়ি চলাচল বন্ধ। বন্ধ হয়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহও। দোকানগুলোতেও টান পড়েছে খাবারের। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে বহুগুণ। সোমবার থেকে শুরু হওয়া টানা চারদিনের এ অচলাবস্থায় না খেয়ে দিন কাটছে নিম্নবিত্ত অনেক কাশ্মীরির। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে কাশ্মীরবাসীর এ দুর্দশা উঠে এসেছে। 

বাস-ট্রাক কোনো যানবাহনই ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না শহরে। ব্যাংকে টাকা নেই। এটিএম বুথও ফাঁকা। ভয়ংকর কিছু একটা ঘটতে চলেছে উপত্যকায়- আগাম হাওয়া বুঝে যারা মজুদ বাড়িয়েছিল, তাদের রসদেও টান পড়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় দরিদ্র জনসাধারণ ও খেটে খাওয়া দিন মজুরেরা। না আছে কাজ, না জুটছে খাবার। সচ্ছল-ধনী পরিবারের মতো মজুদ সামর্থ্যও নেই। হাট-বাজার-দোকান থেকে কিনবে সে পথও বন্ধ। রাস্তায় শত শত চেকপোস্ট। পা বাড়ালেই হাজার প্রশ্ন। ওদিকে বাজারের অবস্থাও বেহাল। সরবরাহ নেই। মুদি দোকান, তরকারি বাজার, মাছ-মাংসের হাট- সবখানেই নেই দশা, যা আছে তা আকশচুম্বী। সোমবার (৫ আগস্ট) ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়। এদিকে জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে পার্লামেন্টে একটি বিলও পাস করা হয়েছে। এ পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে কাশ্মীরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত সেনা। গ্রেফতার করা হয়েছে সেখানকার শতাধিক স্থানীয় নেতাকে। ইন্টারনেট-মোবাইল পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। পুরো কাশ্মীর এখন থমথমে, সুনসান-স্তব্ধ। সানা নামে ২৩ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী বলেন, খুব কমসংখ্যক নাগরিককে বাইরে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। তার কাছে পাঁচ-ছয়জন এসে বলেছে তাদের পরিবার না খেয়ে আছে। তিনি বলেন, ‘মুদি দোকানে যেন মানুষের বন্যা ছিল। মসলা ও শাকসবজির দোকানেও ছিল ভিড়। হাজার হাজার মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। এছাড়া পেট্রল পাম্প, গ্যাস স্টেশনগুলোতেও ছিল গাড়ির লম্বা লাইন।’ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের উপ-সম্পাদক মুজামিল জলিল টেলিগ্রাফকে বলেন, তিনি শ্রীনগরের আশপাশের অন্তত ১০টি এটিএম বুথে খোঁজ নিয়ে দেখেছেন সেখানে টাকা নেই। বেশির ভাগই এখন হাতে হাতে টাকা নিয়ে ঘুরছে। আর দরিদ্রগোষ্ঠীর কোনো জমা টাকাও নেই। তবে ভারতের এক শীর্ষ কর্মকর্তা এ খাদ্যাভাবের ঘটনাকে অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, কাশ্মীর উপত্যকায় তিন মাসেরও বেশি খাবার মজুদ রয়েছে। অধিকার কর্মীদের আশঙ্কা, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রেখে আন্দোলনকারী ও বিরোধী পক্ষের নেতাকে গ্রেফতার করছে কেন্দ্রীয় সরকার। স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত শতাধিক গ্রেফতার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লাহও রয়েছেন। বিরোধী দলের অভিযোগ, সরকার ভারতের জনতাত্ত্বিক নকশাই পরিবর্তন করে দিতে চাইছে। সানা বলেন, এই অচলাবস্থায় অনেক নৈরাজ্য ও দ্বিধা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি খুবই ভয়াবহ ও দুঃখজনক। বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে সবাই। এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি হতাহতের খবর পাওয়া গেলেও তা নিশ্চিত করতে পারেনি কোনো সংবাদমাধ্যম।

নিজের বাড়িতে যেতে পারলেন না গুলাম নবী ফিরলেন শ্রীনগর থেকেই : জম্মু-কাশ্মীরে নিজের বাড়িতে যেতে পারলেন না রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবী আজাদ। বৃহস্পতিবার ভোরে শ্রীনগর বিমানবন্দরে নামলে তাকে সেখানেই থামিয়ে দেয়া হয়। বিমানবন্দর থেকে বেরোতেই পারেননি জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক এ মুখ্যমন্ত্রী। পরে বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটের বিমানে তাকে দিল্লি ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কংগ্রেস নেতা। কংগ্রেসের এই বর্ষীয়ান নেতা শ্রীনগর বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘প্রতিবারই সংসদ অধিবেশন শেষে আমি নিজের বাড়ি ফিরিএজন্য আমি কারও অনুমতি নিইনি। আমি ওখানে যাচ্ছিলাম মানুষের দুরবস্থায় তাদের পাশে দাঁড়াতে।’ নিজের বাড়িতেই ফিরতে না পারায় অসন্তুষ্ট আজাদ বলেন, কাশ্মীরবাসী কেন্দ্রের এ পদক্ষেপে রীতিমতো ক্ষুব্ধ।

কারণ সারা অঞ্চলে কোনো মোবাইল, ইন্টারনেট বা সংযোগ পরিষেবা নেই। তার অভিযোগ, ‘এই প্রথম কোনো রাজ্যে আইন পাস হল আগে সেখানে কারফিউ জারি করে।’ বুধবার শ্রীনগরের রাস্তায় কাশ্মীরি যুবকদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের গল্প করা এবং খাওয়ার ছবিটিও প্রশাসনিক ভাঁওতা বলে বৃহস্পতিবার কটাক্ষ করেছেন আজাদ। অর্থের বিনিময়ে ওই ছবি তোলা হয়েছে বলে ব্যঙ্গ করে তিনি বলেছেন, ‘আপনি টাকা দিয়ে যে কাউকে কিনতে পারবেন এবং তাকে দিয়ে ওটা করাতে পারবেন।’

লোকসভা কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী এ ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী লালকেল্লা থেকে ঘোষণা করেছিলেন, আমরা কাশ্মীরিদের এগিয়ে নিয়ে যাব আলিঙ্গন করে। বুলেট দিয়ে নয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here