বিরোধী দল নেই, গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরছেন ক্ষমতাসীনরা

0
74

বাংলা খবর ডেস্ক: চুয়াডাঙ্গা জেলার রাজনৈতিক হাওয়া অনেকটাই নিরুত্তাপ। শক্তিশালী বিরোধী দল মাঠে না থাকায় সরকারি দলের নেতা-কর্মীরাও গায়ে হাওয়া লাগিয়ে চলছেন। চুয়াডাঙ্গার দুটি আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল অনেকাংশে নিরসন হলেও বিএনপির কর্মকা- বেশ ঝিমিয়ে পড়েছে। অন্যদিকে সরকারি দলের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক কর্মকা- জেলাবাসীকে আশাহত করেছে। আর জামায়াতের নেতা-কর্মীরা চলছেন ‘নিজে বাঁচ’ নীতিতে। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের কিছুদিন পর চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগে বিভেদ দেখা দেয়। জেলার দুটি আসনের দুই এমপির নেতৃত্বে গড়ে ওঠে পৃথক গ্রুপ। এ সময় দলের ত্যাগী নেতারা অনেকটাই বঞ্চিত হয়ে পড়েন। হাইব্রিড নেতারা চলে আসেন সামনের কাতারে। অনেকটা অভিমানেই পেছনের কাতারে চলে যান পরীক্ষিত অনেক নেতা-কর্মী। এ অবস্থায় দীর্ঘ বিরতির পর ২০১৬ সালে জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটি নিয়েও গোপনে অনেক নেতা-কর্মী অসন্তোষের কথা বলেন। দুই পক্ষেই বিভেদ বাড়ে। ২০১৯ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে হঠাৎ করেই ঘুরে দাঁড়ায় জেলা আওয়ামী লীগ। দুই পক্ষের মতপার্থক্য অনেকটাই কমে যায়। কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমনকে কেন্দ্র করে এক মঞ্চে বসেন দুই এমপি। এতে অনেক নেতা-কর্মীই আবারও এক হয়ে দলকে এগিয়ে নিতে কাজ শুরু করেন। ফলে নির্বাচনে জেলার দুটি আসনেই জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের দূরত্ব কমলেও নির্বাচনের পরপরই এর অঙ্গ সংগঠনে নতুন করে ফাটল দেখা দেয়। কিছু নেতা-কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের অনেকেই জেলা আওয়ামী লীগ থেকে দূরে সরে যান। এর প্রভাব পড়ে সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও উপজেলা নির্বাচনে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে নামেন। এতে সাধারণ কর্মীরা দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন। প্রকাশ্যে নির্বাচনী আলোচনায় আনীহা দেখা দেয় দলের সমর্থকদের মধ্যে।

অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর একাধিক গ্রুপের কারণে দীর্ঘদিন নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ হয়ে মাঠে রয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসার পর চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির গ্রুপিং প্রকটভাবে প্রকাশ পায়। ২০০৯ সালে হাজী মোজাম্মেল হকের বঙ্গজ বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে বসে জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। এর পরপরই অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস গ্রুপও আলাদাভাবে কমিটি গঠন করে। সেই থেকে উভয় কমিটিই নিজেদের ‘বৈধ’ বলে দাবি করতে থাকে। জেলা বিএনপি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে গঠিত হয় চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। এতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদুর প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস আহ্বায়ক মনোনীত হন। এতে অন্যতম যুগ্ম-আহ্বায়ক করা হয় দুদুর ভাই ওয়াহেদুজ্জামান বুলাকে। এতে চার ভাগে বিভক্ত বিএনপিকে এক করার চেষ্টা করা হলেও দুটি গ্রুপের মধ্যে বিভেদ থেকেই যায়। এ অবস্থায় শরীফুজ্জামান শরীফের নেতৃত্বে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির একটি গ্রুপ সক্রিয় হয়ে ওঠে।

২০১৪ সালের নির্বাচনের পর কেন্দ্র ঘোষিত সব আন্দোলন-সংগ্রামে জেলা বিএনপির তিনটি গ্রুপ আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করতে থাকে। ২০১৫ সালের শুরুতে বিএনপির ৫ জানুয়ারির আন্দোলন চলাকালে সারা দেশের মতো চুয়াডাঙ্গায়ও ধরপাকড় শুরু হয়। এতে বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী আটক হন। একপর্যায়ে ২৪ জানুয়ারি আটক হন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস। অনেকটাই থেমে যায় চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রাম। অবশ্য এর আগেই দলের অনেক নেতা-কর্মী জেল-জুলুমের ভয়ে আত্মগোপন করেন।

২০১৯ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আশার আলো দেখতে শুরু করলেও মনোনয়ন নিয়ে আগের গ্রুপিং প্রকাশ্যে চলে আসে। মাঠ গোছানোর পরিবর্তে বিএনপি নেতারা এ সময় মনোনয়নযুদ্ধের দিকেই বেশি মনোযোগী হয়ে পড়েন। কেন্দ্রীয় নেতারাও একাধিক নেতাকে মনোনয়ন দিতে বাধ্য হন। জেলার দুটি আসনেই পরাজিত হয় বিএনপি। এ অবস্থায় নির্বাচনে পরাজিত জেলা বিএনপিকে চাঙ্গা করতে দীর্ঘদিনের পুরনো আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। গঠন করা হয় নতুন আহ্বায়ক কমিটি। এতে কেন্দ্রীয় বিএনপির উপ-কোষাধ্যক্ষ ও জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবুকে আহ্বায়ক করা হয়। এরপর থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির কর্মকা- খুব একটা চোখে পড়েনি। ফলে সাধারণ নেতা-কর্মীরাও দ্বিধায় পড়েছেন, শেষ পর্যন্ত কী হবে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির?

এদিকে সরকারের অন্যতম অংশীদার সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চুয়াডাঙ্গা জেলার রাজনীতি অনেকটাই স্থবির। আর যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে গ্রেফতার আতঙ্কে প্রকাশ্য রাজনীতি থেকে অনেকটাই দূরে অবস্থান করছে জেলা জামায়াত।

২০০৮ সালে সরকার গঠন করার পর রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের অন্য শরিক দলগুলোর মতো জাতীয় পার্টিকেও একসঙ্গে দেখা যায়নি। সরকারি দলের অবজ্ঞা-অবহেলা আর কেন্দ্রীয় দিকনির্দেশনার অভাবে চুয়াডাঙ্গায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে জাতীয় পার্টি। ভেঙে পড়েছে মনোবল। স্থানীয় অনেক নেতা-কর্মীর মতে, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেনের নিষ্ক্রিয়তাও এর অন্যতম কারণ। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় রাজনীতি এলোমেলো হওয়ায় অনেকটা অভিমান করেই তিনি নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন বলে অনেকের মত। অন্যদিকে চুয়াডাঙ্গায় জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক ভিত্তি শক্ত না হলেও ভিতরে ভিতরে চলতে থাকে কোন্দল। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে একাদশ সংসদ নির্বাচনে আগে। জাপার জেলা সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে বেশকিছু নেতা-কর্মী দল ছেড়ে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। এরপর থেকে জাতীয় পার্টির কার্যক্রম চোখে পড়েনি। এমনকি দলের চেয়ারম্যানের মৃত্যুর পরও জাতীয় পার্টির কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি।

অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধ ইস্যু সামনে আসার পর শুরুর দিকে চুয়াডাঙ্গা জামায়াতের নেতা-কর্মীরা গ্রামাঞ্চলে নিজেদের কর্মকা- বাড়িয়ে দেন। তারা একদিকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ স্থাপন করেন। পাশাপাশি নানা কর্মসূচিতে নিজেদের ব্যস্ত রাখতে থাকেন। এ অবস্থায় চুয়াডাঙ্গার দুটি আসনের একটিতেও দলের প্রার্থী মনোনীত না হওয়ায় রাজনৈতিক মাঠ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন জেলা জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। নির্বাচনের পর চুয়াডাঙ্গায় জামায়াতের কর্মকা- অনেকটা নিষ্ক্রিয়। অভিযোগ রয়েছে, দলের অনেকেই সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আঁতাত করে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here