আমারও কিছু স্বপ্ন ছিল

0
411

মোল্যা নজরুল ইসলাম, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)
প্রতিটি মানুষের জীবনেই কিছু স্বপ্ন থাকে। পুলিশের চাকরিতে ঢোকার পর আমারও কিছু স্বপ্ন ছিল।
গত ১৮ বছরের চাকরি জীবনে সে স্বপ্ন পূরণের পথে একটু একটু করে এগিয়েছি অনেকটা পথ । এগিয়ে যাওয়ার পথে আজ আরও একটা বিশেষ দিন।
মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় বাংলাদেশ পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পেলাম। নতুন কর্মস্থল নৌ-পুলিশ।
আমার কাজের উপর আস্থা রাখায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি মহোদয়, মাননীয় স্বরাষ্ট্রসচিব, সিআইডি প্রধানসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা। এই আস্থার প্রতিদান দিতে অনাগত দিনেও এমন আপোষহীন থেকে নিরলস পরিশ্রম করে যাব ইনশাল্লাহ।

খ.
জয়পুরহাটের পুলিশ সুপারের দায়িত্ব শেষে ঢাকায় সিআইডির অর্গানাইজড এন্ড ইকোনমিক ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি হয়ে এসে সত্যি কথা বলতে বেশ মন খারাপ হয়েছিল।
সিআইডির পোস্টিং তখন খুব একটা আকর্ষনীয় ভাবা হতো না বরং তাচ্ছিল্যের চোখেই দেখা হতো। সারা জীবন চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করেছি। নতুন কর্মস্থলকেও গতিশীল করার মিশন নিলাম। সিআইডি প্রধানসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে আমার বিভাগ ঢেলে সাজালাম। চৌকস কর্মকর্তাদের নিয়ে ছোট একটা টিমও বানালাম। তারপর গত আড়াই বছরের কর্মকান্ড তো আপনারা জানেনই। কতোটুকু করতে পেরেছি সে বিচার জনগণ ও সরকার করবে। আমি শুধু বলব, আগে সিআইডির পোস্টিং এড়িয়ে যেতে চাওয়ার যে প্রবনতা ছিল তা দূর হয়ে এখন এটি কর্মকর্তাদের আগ্রহের পোস্টিংয়ে পরিণত হয়েছে। ভাবতেই ভালো লাগে, ভাবমূর্তির এই বদলে আমারও বিশেষ অবদান আছে।

বিদায় বেলায় একটু পেছন ফেরা যাক। গত আড়াই বছরের কাজের কিছু বিবরণ তোলা থাক টাইম লাইনে।

১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিসিএস, ব্যাংকসহ পাবলিক পরীক্ষাগুলোয় প্রশ্নফাঁসের সর্ববৃহৎ চক্রকে আইনের আওতায় আনা। অবৈধ উপায়ে আয় করা তাদের কোটি কোটি টাকার সম্পদ জব্দের জন্য মানিলন্ডারিং মামলা করা।

২. টেকনাফের এ যাবত ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকা ইয়াবা মাফিয়াদের গ্রেফতার। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে প্রথমবারের মতো ইয়াবা কারবারীদের বিপুল সম্পদ পুলিশের হেফাজতে এসেছে।

৩. এমএলএম এবং সমবায়ের নামে অজস্র প্রান্তিক মানুষের কোটি কোটি টাকা লোপাটকারীদের আইনের আওতায় আনা।

৪. জঙ্গী অর্থায়ন খুঁজে বের করে হোতাদের আইনের আওতায় আনা।

৫. দেশের বাইরে বসে গুজব রটনাকারী ও রাজনৈতিক নেতাদের নামে কুৎসা সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় আনা।

৬. এয়ারপোর্ট ঘিরে, রেডিও জকির নামে, এনজিও খোলাসহ অভিনব নানা উপায়ে প্রতারণাকারীদের আইনের আওতায় আনা।

৭. নির্বাচনের আগে-পরে, কোটা আন্দোলন, সড়ক আন্দোলনসহ নানা অস্থির সময়ে গুজব রটিয়ে জাতীয় পরিস্থিতি ঘোলাটে করা হোতাদের আইনের আওতায় আনা।

৮. দায়িত্ব নেওয়ার পর মানিলন্ডারিংকে নতুনভাবে জাতির সামনে তুলে ধরেছি, যার ফলে বৈধ চ্যানেলে বিদেশ থেকে রেমিটেন্স আসা বৃদ্ধি পেয়েছে।

৯. বিদেশী নাগরিকদের অভিনব প্রতারণা আইনের আওতায় আনা, কার্ড জালিয়াতির বড় বড় ঘটনা ধরা।

১০. দেশের বড় বড় স্বর্ণচোরা কারবারিদের আইনের আওতায় আনা।

এ তালিকা হয়তো আরও দীর্ঘ হবে। সাফল্যের ফিরিস্তি দীর্ঘ করতে চাই না। শুধু বলব, গত আড়াই বছরে যা কিছু সাফল্য, যাবতীয় অর্জণ সব আমার ডেডিকেটেড টিম এবং উধর্বতন কর্তৃপক্ষের। আর যদি কোনো ব্যর্থতা থাকে তা একান্তই আমার।

তবুও সিআইডিতে দায়িত্ব পালনকালীন প্রশ্নফাঁসসহ বেশ কিছু কাজের স্বীকৃতি হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ পদক বিপিএম লাভ করেছি। এ জন্য আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।

দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দেশ ও আইনের স্বার্থে আমার অতি আপনজন, গ্রামের মানুষ, বিভিন্ন গুরুত্বপূণ ব্যাক্তিসহ অনেকের অনুরোধ ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। আশা করি আমার এই আইনী সীমাবদ্ধতাকে তারা অনুধাবন করতে পারবেন। কষ্ট পাবেন না।

সততা, পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার সাথে গত আড়াই বছর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুদের, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এবং মাননীয় মন্ত্রীর অকুন্ঠ সমর্থণ পেয়েছি। এ এক বিরাট সৌভাগ্যই বটে। আমার আগামীর পথচলায় এ ভালোবলাসা ও মমতা অব্যহত থাকবে বলেই আমার বিশ্বাস।

গ.
গত আড়াই বছরে অসংখ্য জনগুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে গিয়ে পরিবারকে সময় দিতে পারিনি। সব সময় স্ত্রী-সন্তানদের অনুপ্রেরণা আমাকে মুগ্ধ করে। শক্তি যোগায়।
বিদায়বেলা বারবার মনে হচ্ছে, আমার টিমকে খুব মিস করবো। আমার টিমের চৌকস, দক্ষ আর মেধাবী প্রতিটি অফিসারের মঙ্গল হোক। ভালোবাসা অফুরান।

সবার জন্য শুভ কামনা।
আমার নতুন গন্তব্যের জণ্য সকলের দোয়া ও ভালোবাসা কামনা করছি।
লেখক: এডিশনাল ডিআইজি,বাংলাদেশ পুলিশ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here