রশিদের মুখে আফগান ক্রিকেটের বদলে যাওয়ার গল্প

0
55

বাংলা খবর ডেস্ক: পুরোপুরি যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশ। কোমর সোজা করেই এখনও যারা দাঁড়াতে পারেনি। এখনও আফগানদের ভোরে ঘুম ভাঙ্গে বুলেটের শব্দে। আত্মঘাতি বোমা হামলায় এখনও কাতারে কাতারে অগণিত মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই’ই নয়, জাতিগত দ্বন্দ্ব আর লড়াই যেখানে নিয়তি, সেখানে ক্রিকেটের এমন উত্থান সত্যিই বিস্ময়কর।

খুব বেশিদিন আগের ইতিহাস নয় আফগান ক্রিকেটের। মাত্র অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের জায়গা তৈরি করে নিচ্ছে আফগানিস্তান। টি-টোয়েন্টিতে তো তারা পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে এবং শ্রীলঙ্কার মত দেশগুলোকে। ওয়ানডেতেও উদীয়মান শক্তি। টেস্টে ইতিমধ্যে ৩ ম্যাচ খেলে জিতেছে ২টিতে।

ক্রিকেটে এমন অভাবনীয় উত্থান, বিস্ময়করই বটে। আফগান ক্রিকেটে কিভাবে উঠে আসছে এত প্রতিভা। যারা প্রতিনিয়তই বিস্ময় উপহার দিচ্ছে বিশ্ব ক্রিকেটকে। বিশেষ করে রশিদ খান, মুজিব-উর রহমানের মত স্পিনার বিশ্বে এখন বিরল। অন্য ক্ষেত্রগুলোতেও দারুণ সব প্রতিভাবান ক্রিকেটার তৈরি করছে আফগানিস্তান। পর্যাপ্ত সুযোগ এবং সুবিধা পেলে যে তারা আরও দুর্ধর্ষ হয়ে উঠবে, তা বলাই বাহুল্য।

ত্রিদেশীয় সিরিজের আগেরদিন আজ মিরপুর শেরেবাংলায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিজেদের প্রতিভা তুলে আনার বেশ কিছু রহস্য জানালেন আফগান অধিনায়ক রশিদ খান। নানা প্রশ্নের জবাবে তাদের ক্রিকেটের সে সব কাহিনী জানালেন তিনি

ক্রিকেট এবং দেশের প্রতি ভালবাসাই আফগান ক্রিকেটারদের শুরু থেকে গড়ে তুলছে কঠোর পরিশ্রমী হিসেবে। রশিদ খান বলেন, ‘এটা শুধুই ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা। আমাদের যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা কিংবা মাঠ নেই। কিন্তু তিন ফরম্যাটেই আমাদের কাছে প্রকৃতি প্রদত্ত প্রতিভা রয়েছে। আমাদের কিছু একাডেমি রয়েছে এবং সেখানে কিছু সুযোগ-সুবিধাও রয়েছে। তরুণ ক্রিকেটাররা সেখানে কঠোর পরিশ্রম করে যাচেএছ। তারা এর সর্বোত্তম ব্যবহারই করছে। এমনকি ঘাসের মাঠেও পর্যন্ত। কারণ, তারা সবাই চায়- একদিন জাতীয় দলের হয়ে খেলতে।’

বাংলাদেশে এসে টেস্ট জিতলেন। খেলছেন ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে। এই সফর থেকে প্রাপ্তি কি? জানতে চাইলে রশিদ খান বলেন, ‘এই সফর থেকে আমরা ইতিবাচক অনেক কিছুই শিখেছি। আমি সত্যি খুশি ইবরাহিম জাদরানের ওপর। বাংলাদেশেই তার টেস্ট অভিষেক হলো এবং দুর্দান্ত খেলা উপহার দিয়েছে সে। এছাড়া রহমত শাহ এবং আসগর আফগানের ওপরও দারুণ খুশি। কারণ, তারা টেস্টে দারুণ ব্যাটিং করেছে। একই সঙ্গে আমরা অভিষেক ঘটিয়েছি জহির খান এবং কায়েস আহমেদের। এছাড়া রহমানুল্লাহ গুরবাজ খেলছে তার অভিষেক সিরিজ। এখানে এসে প্রতিভা প্রমাণ করতে পেরেছে সে। প্রথম দুই ম্যাচে ফরিদ আহমদ দুর্দান্ত বোলিং করেছে। এছাড়া নাভিন-উল হকও সর্বশেষ ম্যাচে অসাধারণ সব ডেলিভারি ছুঁড়তে পেরেছে। একই সঙ্গে সে দুর্দান্ত এক ফিল্ডার। বোলিং তো আছেই। বিভিন্ন বিষয়ে এখনও উন্নতি করা প্রয়োজন আমাদের। কিন্তু তরুণ ক্রিকেটাররা যেভাবে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিচ্ছে এবং নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছে এটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক দিক।’

এত অল্প সময়ের মধ্যেও আফগানরা টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে এবং টেস্টে ভিন্ন ভিন্ন দল তৈরি করে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। সে গল্পই শোনালেন রশিদ খান। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টিতে আমাদের দলটা পুরোপুরি ভিন্ন। মাত্র তিনজন ক্রিকেটার রয়েছেন যারা উভয় ফরম্যাটে খেলেন। আমি, নবি (টেস্ট থেকে অবসরে) এবং আসগর। আমরা শিখেছি, কিভাবে এক ফরম্যাট থেকে আরেক ফরম্যাটে সুইচ করা যায়। এটা অভিজ্ঞতা দিয়েই করছি। আমরা জানি যে এটা হচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এবং এর মধ্যেই নিজেদেরকে যত দ্রুত সম্ভব খাপ খাইয়ে নিচ্ছি। কারণ, এক সফরেই আপনাকে তিন ফরম্যাটে খেলতে হচ্ছে।’

টি-টোয়েন্টিতে কিভাবে এতটা সফল আফগানিস্তান। সে কাহিনীও জানালেন রশিদ খান। তিনি বলেন, ‘আমাদের টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড়রা দেশের মাটিতে কঠোর অনুশীলন করেছে। এ কারণে তারা ইন-ফর্মে রয়েছে। টেস্ট খেলেছে যারা, তারা ক্যাম্প করেছে আবুধাবিতে। ভিন্ন ভিন্ন ফরম্যাটে ভিন্ন ভিন্ন দল থাকা খুবই জরুরি। আর আফগানিস্তান এই ব্যাপারটা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছে- এটাই এখন দেখতে সবচেয়ে ভালো লাগে। কারণ, বিষয়টা কোচ এবং অধিনায়কের জন্য সহজ করে দেয়। টি-টোয়েন্টিতে দ্রুত এডজাস্ট করা সহজ নয়। তবুও আমি আমার জন্য বলবো যে, অধিনায়ক হিসেবে এটা আমাকে করতেই হয় এবং এ নিয়ে আমি খুশি।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here