প্রধানমন্ত্রীর সই করা কমিটি নিয়ে কৃষক লীগের জালিয়াতি!

0
85

বাংলা খবর ডেস্ক: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত চূড়ান্ত কমিটি ভেঙে ইচ্ছেমতো পদ বণ্টনের অভিযোগ উঠেছে দলটির অন্যতম সংগঠন কৃষক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। ২০১২ সালে এ কমিটি আওয়ামী লীগ সভাপতি অনুমোদন করে দিলেও এর পর থেকেই নিজেদের ইচ্ছায় শেখ হাসিনার কমিটির লোকজন বাদ দিয়ে ও অনেকের নাম ঢুকিয়ে ‘কমিটি বাণিজ্যের’ মাধ্যমে প্রায় নির্বিঘ্নেই মেয়াদ পার করছেন দলটির দুই শীর্ষ প্রধান। এসব সংশোধনীর ক্ষেত্রে কার্যনির্বাহী সংসদের অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা এ অভিযোগের কিছুটা স্বীকার করলেও একেবারেই অস্বীকার করেছেন সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক রেজা।

তবে অনুসন্ধানে অভিযোগগুলোর সত্যতা মিলেছে। এ কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে এসব অভিযোগ সামনে তুলে ধরে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা চাইছেন এসব বিতর্কের যেন অনুসন্ধান করে ম‚ল দল আওয়ামী লীগ আর ভবিষ্যতের কমিটিতে যেন ম‚ল্যায়ন পান সত্যিকারের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা।

আগামী নভেম্বরের মধ্যেই কৃষক লীগসহ আওয়ামী লীগের চারটি সহযোগী সংগঠনকে সম্মেলন করার নির্দেশ দিয়েছেন দলটির সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের ম‚ল অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর ১১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। কৃষক লীগের অনেক নেতার অভিযোগ, শেখ হাসিনার অনুমোদন করা কমিটিটি কাউকে দেখাননি সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক রেজা। বরং পরে শেখ হাসিনা অনুমোদিত কিছু নাম বাদ দিয়ে বিভিন্ন পদে অন্য লোকদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন তারা। আবার অনুমোদিত কমিটিতে কাটাকুটি করে কাউকে এক পদ থেকে সরিয়ে আরেক পদে বসানো হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনা অনুমোদিত কমিটিতে আশরাফুল হক জর্জ সদস্য এবং শামসুল হক দফতর সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু, আওয়ামী লীগ সভাপতি অনুমোদিত কমিটিতে আবারও কাটাছেঁড়া করে আশরাফুল হক জর্জকে সহ-সভাপতি এবং শামসুল হককে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের প্রমোশন দেন। তবে তাদের এই সিদ্ধান্ত কার্যনির্বাহী সংসদে অনুমোদন করানো হয়নি। এখনও কৃষক লীগের বিভিন্ন বৈঠকে তাদেরকে যথাক্রমে সহ-সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শেখ হাসিনা অনুমোদিত কমিটির বাইরে আরও অনেককেই কৃষক লীগে বিভিন্ন পদ দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত কমিটিতে নজরুল ইসলাম দুলাল, আবদুল লতিফ তারিন, দেওয়ান মো. জয়নাল, নজরুল ইসলাম মোল্লা, সাংবাদিক আরিফর রহমান দোলন, এটিএম আনিছুর রহমান বুলবুলের নাম না থাকলেও তারা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি। এদের কাউকে সংগঠনটির কার্যনির্বাহী সংসদের অনুমোদন সাপেক্ষে আবার কাউকে অনুমোদন ছাড়াই সহ-সভাপতির পদ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে মূল কমিটিতে নাম না থাকলেও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন নুরে আলম সিদ্দিকী। এছাড়া ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন সাবু আওয়ামী লীগের সভাপতির স্বাক্ষরিত কমিটির সদস্য হিসেবে ছিলেন, পরে তাকে ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

জানতে চাইলে কমিটিতে পদের রদবদল আনার অভিযোগ অনেকটা স্বীকার করে নিয়েছেন কৃষক লীগ সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা বলেন, কমিটিতে থাকা বেশ কয়েকজন নেতা মৃত্যুবরণ করেছেন। সেসব স্থানে নতুন নেতা দেওয়া হয়েছে। আর অনুমোদিত কমিটির বাইরে দু’একটি নাম এদিক-ওদিক হলেও হতে পারে।’

তবে, কমিটিতে পদের রদবদলের বিষয়ে কোনও ধরনের দায় নিতে রাজি হননি সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক রেজা। উল্টো তিনি বলেন, এ রকম অভিযোগ আমিও শুনেছি। কিন্তু এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে, তার স্বাক্ষরে কোনও নাম এদিক-ওদিক হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

কৃষক লীগের শেখ হাসিনা অনুমোদিত কমিটির বাইরে অতিরিক্ত পদ দেওয়ার বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া যায় গণমাধ্যমে চোখ রাখলেই। স¤প্রতি গ্রেফতার হওয়া কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি সফিকুল ইসলাম ফিরোজ নিজেকে কৃষক লীগ নেতা বলে পরিচয় দিতেন। অথচ গ্রেফতার হওয়ার পর কৃষক লীগ সভাপতি মোতাহার হোসেন বিবৃতি দিয়েছেন, সফিকুল ইসলাম ফিরোজ তার দলের কেউ নন। যদিও কৃষক লীগের স‚ত্রগুলো বলছে, ফিরোজ কৃষক লীগের নেতা। মাস কয়েক আগে দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকেও অংশ নিয়েছিলেন। এছাড়াও ওপরে উল্লিখিত নামগুলোর মধ্যে থাকা একজন গণমাধ্যমকর্মী কৃষক লীগের সহ-সভাপতি হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পদ প্রাপ্তির চিঠির ছবি দিয়েছিলেন। কিন্তু, অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তার নামও ম‚ল কমিটিতে নেই, তাকে পদ দেওয়ার পরও তা কার্যনির্বাহী সংসদে অনুমোদন করানো হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here