হুইলচেয়ার ছেড়ে উঠতে পারেন না খালেদা জিয়া : রিজভী

0
58

বাংলা খবর ডেস্ক: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরকার জামিন না দিয়ে ‘জীবননাশের ষড়যন্ত্র’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘কারাগারে নেওয়ার সময় দেশনেত্রী সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। অথচ তিনি এখন হুইলচেয়ার ছেড়ে উঠতে পারেন না। কারো সাহায্য ছাড়া দাঁড়াতে পারেন না।’

রোববার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন রিজভী।

এ সময় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব আরো বলেন, ‘খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের মারাত্মক অবনতি হয়েছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। হাত-পা শক্ত হয়ে গেছে। হাত-পায়ের আঙুল ফুলে গেছে। নিজের খাবার নিজে খেতে পারেন না। মাথার চুলও বাঁধতে পারেন না। তাঁর পোশাকও আরেকজনকে পরিয়ে দিতে হয়। এ অবস্থায় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) আট বাই দশ ফুটের ছোট্ট কক্ষে চিকিৎসাধীন।’

‘আজ বড় বিষণ্ণতার সঙ্গে জানাচ্ছি, বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রাণপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার আশঙ্কাজনক অবনতি ঘটেছে। অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ব্যক্তিগত প্রতিহিংসায় ৬১৩ দিন ধরে দেশনেত্রীকে বন্দি করে রেখেছেন।’

রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘কারাগারের অস্বাস্থ্যকর কক্ষে অমানবিক পরিবেশের মধ্যে দেশনেত্রীকে বন্দি রাখা হয়েছে। পঁচাত্তর বছর বয়সী নেত্রীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বারবার ইনসুলিন পরিবর্তন ও ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি করার পরও কোনো অবস্থাতেই তাঁর সুগার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কোনো কোনো সময় এটি ২৩ মিলিমোল পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে খাবারের পরিমাণ অনেক কমিয়ে দেওয়াতে শরীরের ওজনও অনেকখানি হ্রাস পেয়েছে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যথাযথ চিকিৎসার বিষয়ে আমরা বারবার দাবি করা সত্ত্বেও দেশনেত্রীকে উন্নতমানের যন্ত্রপাতিবিশিষ্ট দেশের কোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। তাঁর জরুরি ভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসা দরকার। ব্যথার কারণে রাতে তাঁর ঘুম হচ্ছে না এবং সারাক্ষণ তিনি অস্থির থাকছেন। আর্থ্রাইটিস ও ফ্রোজেন শোল্ডার সমস্যার কারণে স্বাস্থ্যের আরো গুরুতর অবনতি ঘটছে। ঘাড়-মাথা সোজা রাখতে পারছেন না। কয়েক বছর আগে অপারেশন করা চোখ ও হাঁটুর ব্যথা ক্রমশ বৃদ্ধির ফলে অসহ্য ব্যথায় কাতরাচ্ছেন তিনি।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দেশবাসী দেশনেত্রীর জীবনের পরিণতি নিয়ে অজানা আতঙ্ক ও শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। সরকার অমানবিক ও বেআইনি কাজে এত অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে যে তারা খালেদা জিয়ার বিপজ্জনক অসুস্থতাও ভ্রুক্ষেপ করছে না। সরকারের অমানবিক ও অসুস্থ আচরণ প্রমাণ করে, দেশনেত্রীকে প্রাণনাশের ষড়যন্ত্র করছে তারা।’

রিজভী আরো বলেন, ‘ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ও দেশ বিক্রি করার জন্য আইন-আদালতকে কবজা করে দেশনেত্রীর জামিনে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানী থেকে মেধাবী তরুণ আবরার ফাহাদকে হত্যা ও খালেদা জিয়ার বন্দিত্ব একই সুতায় গাঁথা। খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা হচ্ছে না। দেশনেত্রীর প্রাণনাশ করার গভীর নীলনকশা বাস্তবায়নে ব্যস্ত অবৈধ সরকার জামিনে বাধা দিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে না,  বিএসএমএমইউর পরিচালককে দিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলানো হচ্ছে— খালেদা জিয়া ভালো আছেন, তাঁর অবস্থার কোনো অবনতি হয়নি। কতটা অমানবিক হলে এত বড় মনগড়া কথা তাঁরা বলতে পারেন।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা দরকার। অন্যথায় যেকোনো সময় অঘটন ঘটে যেতে পারে। এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে আমরা আজই দেশনেত্রীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা নাজমুল হক নান্নু, ড. মামুন আহমেদ, সহদপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here