আবরার হত্যা ও শিক্ষাঙ্গনের রাজনীতি

0
75

মো. সামসুল ইসলাম
বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার হত্যাকে আমরা যদি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বা ছাত্রলীগের নৃশংসতা দিয়ে ব্যাখ্যা করি, তা বোধ হয় পুরোপুরি ঠিক হবে না। এ হত্যাকাণ্ড বিশ্লেষণের জন্য আমাদের ক্ষয়িষ্ণু রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সামগ্রিক শিক্ষার মানের ও নৈতিক মূল্যবোধের অধঃপতন, পরমতসহিষ্ণুতা ও জ্ঞানের অভাব ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে এবং এসবের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবিষ্যৎ রাজনীতির একটি রূপরেখা তৈরি করতে হবে।

যতদূর দেখেছি, আবরারের ফেইসবুকে পোস্টে সরকারবিরোধী বা রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কথাবার্তা ছিল না। ভারতের সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে কিছু বক্তব্য এবং জাতীয় স্বার্থরক্ষায় কিছু উদ্বেগ ছিল, যেগুলো নিয়ে পত্রপত্রিকায় হরহামেশা লেখালেখি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে যাদের বিন্দুমাত্র জ্ঞান আছে তারা জানেন যে কোনো দেশের পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নে বা কূটনৈতিক দর-কষাকষিতে জনমতের একটি গুরুত্ব রয়েছে। সে হিসেবে আবরারের ফেইসবুক স্ট্যাটাস ভারতের সঙ্গে আমাদের দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে বৃহত্তর জনমতের একটি অংশমাত্র। এ ধরনের মতামত অপর রাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় অবশ্যই সরকারকে একটি বাড়তি শক্তি দেয়। আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে জনমতকে কোনো পক্ষই অস্বীকার করতে পারেন না। আমরা প্রতিনিয়ত এটি দেখছি। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে জনমতের একটি ভূমিকা ছিল, আবার সেই জনমতই এখন রোহিঙ্গাদের বিপক্ষে চলে যাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে আলোচনাও আমাদের দেশের জনগণ পছন্দ করেননি। পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নে এই বিষয়গুলো সব সরকারকেই বিবেচনায় নিতে হয়।

দুঃখজনক ব্যাপার যেটি তা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক রাজনীতির এসব জটিল মারপ্যাঁচ নিয়ে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মাঠপর্যায়ের, এমনকি কেন্দ্রীয় অনেক নেতার রয়েছে সীমাহীন অজ্ঞতা। ভারত আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তাদের রয়েছে ব্যাপক অবদান। কিন্তু তাদের ব্যাপারে সাময়িক কিছু জনমত, যেটি প্রকারান্তরে দর-কষাকষির ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার হাতকেই শক্তিশালী করবে তার জন্য একজনকে সরকারি সমর্থক ছাত্রদের কাছে প্রাণ হারাতে হবে? এটা তো রাজনৈতিক মূর্খতার সঙ্গে সহিংসতার সমন্বয়। বিদেশি মিডিয়ায় এটি ব্যাপক আলোচিত হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে সরকারকে বিব্রত করবে। আবার একই ধরনের একটি পোস্ট দেওয়ার জন্য খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্যপদ থেকে একজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বড়দের মধ্যেই যদি রাজনৈতিক অজ্ঞতা থাকে, তাহলে ছোটরা কী শিখবে? দেশের স্বার্থে কেউ বিরুদ্ধ মতপ্রকাশ করলে তাকে মেরে ফেলতে হবে বা বহিষ্কার করতে হবে?

আবার আমরা জানি বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তজ্ঞানচর্চার জায়গা। ব্যস্ততার কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভিসি বা শিক্ষকের ফেইসবুক দেখার সময় পাওয়ারই কথা নয়। অথচ কয়েক বছর থেকেই দেখছি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই ফেইসবুক নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড ঘটছে। এক ফেইসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক আরেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা করেছিলেন। আবার এক শিক্ষকের টাক নিয়ে মন্তব্য করায় শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেওয়ার ঘটনা শুনেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। একই পরিক্রমায় সম্প্রতি গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সামান্য এক ফেইসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে এক মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করেন। যেটি পরে একটি জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয় এবং ভিসিকে সরে যেতে হয়।

এটা আসলেই এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার যে, ফেইসবুক শিক্ষকদের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ! আমরাও ফেইসবুক ব্যবহার করি। আমাদের লেখালেখি নিয়ে ফেইসবুকে অনেকেই বাজে মন্তব্য করেন। এ রকম কেউ করলে তাকে আনফ্রেন্ড বা ব্লক করি। এর বেশি কিছু নয়। কিন্তু শিক্ষকরাই যদি ফেইসবুক নিয়ে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখান, তাহলে শিক্ষার্থীরা বাদ যাবে কেন? ছাত্রনেতারাও তাদের শিক্ষকদের মতো ফেইসবুককে বেছে নিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের আনুগত্য পরীক্ষার ও দমন-নিপীড়নের একটি মাধ্যম হিসেবে। একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফেইসবুকে মতামতের ব্যাপারে এত সেনসিটিভিটি থাকা তো মোটেই উচিত নয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নৃশংসতা বা টর্চার সেলের ব্যাপারগুলো অস্বীকার না করেও বলা যায়, স্কুল থেকে শুরু করে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র‌্যাগিং, গ্যাং কালচার, মস্তানি ইত্যাদি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সিনিয়র-জুনিয়র সম্পর্ক, সিনিয়রের সামনে কীভাবে দাঁড়াতে হবে, সালাম দেওয়া আর এসব না করলে অকথ্য নির্যাতনের ব্যাপারটি এখন প্রায় প্রতিটি স্কুল-কলেজে শোনা যায়। রাজনৈতিক খুনোখুনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আগেও হয়েছে। কিন্তু এভাবে গণহারে পেটানো আর মস্তানির সংস্কৃতি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিগত বছরগুলোতে ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে। গত মে মাসে গাজীপুর আইইউটির কম্পিউটার সায়েন্সের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়ে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হতে হয়েছিল। এই র‌্যাগিং, গ্যাং কালচার আর মস্তানির সংস্কৃতির সঙ্গে যদি রাজনীতি যুক্ত হয়, তাহলে তা কী ভয়ানক হতে পারে, সেটা আবরারের মৃত্যুর ঘটনাই প্রমাণ করে।

জনমনে ব্যাপক প্রশ্ন তাহলে শিক্ষকরা কী করেন? আসলে স্কুল, কলেজপর্যায়ে শিক্ষকদের করার তেমন কিছুই থাকে না। শিক্ষার্থীদের এখন মারধর নিষিদ্ধ। শিক্ষার্থীদের মারধর অবশ্যই সমর্থন করা যায় না, আবার মারধর বা কঠিন শাস্তি দিতে গেলে বিভিন্ন স্কুলে নানা ধরনের বিপত্তি ঘটেছে। আমি নিজে সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের বেয়াড়া আচরণে দু-একটি ভালো স্কুল নষ্ট হয়ে যেতে দেখেছি। আবার এটাও ঠিক, অভিভাবকরা সন্তানদের সময় দেন না এবং শিক্ষকরাও প্রাইভেট পড়ানোর জন্য স্কুল, কলেজে শিক্ষার্থীদের আচার-আচরণের ব্যাপারে তেমন মনোযোগী থাকেন না। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিসি, প্রভোস্ট, হাউজ টিউটর ইত্যাদি পদে টিকে থাকার জন্য শিক্ষকরা যে আসলে কিছুই বলেন না বা কিছুই দেখেন না, সেটা তো গণমাধ্যমে নিয়মিত আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বাইরের কেউ সেখানে রাজনীতি করতে যান না, ভোটও দিতে যান না। শিক্ষকরা বিভিন্ন দল করতে পারেন কিন্তু সততা, মানবিকতা তো থাকতে হবে। কোনো ঘটনা ঘটলেই তারা পদত্যাগ করেন, তার আগে নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোটাভুটির ক্ষেত্রে একটি প্রবণতা হচ্ছে, সব সরকারের সময় সাধারণত সরকারি দলের সমর্থক শিক্ষকরাই ভোটে জেতেন, যা শিক্ষকদের এক চরম সুবিধাবাদী মানসিকতা। রাজনৈতিক নিয়োগ সব দেশেই হয়। দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরই যে পদেই বসানো হচ্ছে, তাদের অনেকেই সেখানে হয় অদক্ষতার বা দুর্নীতির স্বাক্ষর রাখছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষপদে হোক বা ব্যাংকে হোক বা অন্য কোথাও হোক, তাদের অনেকেই চরম অদক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রাজনীতিকীকরণ তো আর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয় না। প্রাথমিক স্কুল থেকেই শুরু হয়। সম্প্রতি সংসদ সদস্যের পছন্দের ব্যক্তিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি করার প্রবিধানমালা তৈরি করা হয়েছে। এর ফলাফল কী হবে, তা বলাই বাহুল্য। সরকারি ফ্রি প্রাথমিক স্কুল আসলে কতটুকু ফ্রি বা কলেজগুলোতে কীভাবে বিভাগ খোলা হয় বা শিক্ষক নিয়োগ হয় এসব নিয়ে তদন্ত করলে তা সাংবাদিকদের জন্য সংবাদের ভালো বিষয়বস্তু হতে পারে। একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুবাদে আমাকে কয়েক বছর আগে শিক্ষার্থী সংগ্রহের ব্যাপারে এক কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে যেতে হয়েছিল। বলাবাহুল্য, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যসহ স্থানীয় রাজনীতিবিদরা সেখানে ছিলেন। আমি কিছু কলেজশিক্ষকের মুখে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের ব্যাপক প্রশস্তি শুনে হতভম্ব হয়ে গেলাম। তাদের এমন রাজনৈতিক বক্তৃতা শুনে এমনকি মূল নেতাকেই দেখলাম ভীষণ বিব্রত হয়ে মাথা নিচু করে থাকতে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই রাজনীতি কি কাম্য। শিক্ষকরা কি তাদের মেরুদণ্ড সোজা রাখতে পারেন না? তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতির পক্ষে বা বিপক্ষে কথা বলা আমাদের দেশে বিপজ্জনক। অভিভাবকরা চান না যে তার সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে রাজনীতি করে লাশ হয়ে ফিরুক। তাদের রাজনীতির উপযোগিতা বোঝাতে গেলে রাগ করেন। এমনকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কেউ কেউ তাদের সন্তানদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান বলে শুনেছি। আবার ছাত্ররাজনীতির যারা প্রবক্তা, তাদের কাছে ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে কথা বলতে গেলে লেখক-সাংবাদিকদের সুশীল বলে গালি শুনতে হয়।

আমরা যদি খুব সাম্প্রতিক কিছু ছাত্র আন্দোলন পর্যালোচনা করি তাহলে দেখব, সেগুলো ছিল মূলত দল-নিরপেক্ষ আন্দোলন। ২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলন ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্টরা শুরু করলেও পরে এটা প্রায় সব মতের শিক্ষার্থীদের সমর্থন পায়। ২০১৫ সালে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাটবিরোধী বিক্ষোভ ছিল সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলন। দীর্ঘ আন্দোলনের পর কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি এক ধরনের রাজনৈতিক বোঝাপড়া হলেও এটি তাদের শিক্ষা সম্পর্কিত দাবি ছিল। আমি যেটা বোঝাতে চাইছি তা হলো প্রাইভেট, পাবলিক, মাদ্রাসা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সমসাময়িক যে ছাত্র বিক্ষোভ হয়েছে, তা মূলত ছাত্রছাত্রীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ছিল এবং বেশির ভাগই সফল হয়েছে। আমরা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় ছাত্র বিক্ষোভ দেখেছি, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের গুম হওয়া নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলন দেখেছি। অতিসম্প্রতি নিরাপদ সড়ক চাই, কোটা সংস্কার আন্দোলন, শহীদুল আলমের মুক্তি, গোপালগঞ্জের ভিসি ইত্যাদি ক্ষেত্রেও ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলন দেখেছি। এগুলো ছিল দল-নিরপেক্ষ আন্দোলন, যেখানে সব মতের ছাত্র-শিক্ষক অংশ নিয়েছেন। এক নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ছাড়া সব দাবিই তো মোটামুটি অর্জিত হয়েছে।

ওপরের উদাহরণগুলো বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখি, শিক্ষার্থীরা মোটেই রাজনীতিবিমুখ নন বরং তারা তাদের দাবি-দাওয়া পূরণের আন্দোলন করছেন এবং দল-নিরপেক্ষ রাজনীতি তাদের জন্য বেশি ফলদায়ক হয়েছে। শিক্ষার্থীরা রাজনীতি করবে, তবে তা মূল রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গসংগঠন হিসেবে কি না তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন। মূল দলের অংশ হিসেবে রাজনীতি করলে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ কতটুকু বজায় থাকবে, তা নিয়ে মতপার্থক্য হতে পারে। বিশেষত, সরকারি দলগুলো এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য বিস্তারের চেষ্টা করবে এবং কোনোভাবেই সব দলের জন্য সমান ক্ষেত্র তৈরি হবে না। বলা হচ্ছে, আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঐতিহাসিকভাবেই anti-establishmen রাজনীতির ধারক-বাহক। বিগত তিন দশকের অভিজ্ঞতা তো তা বলে না। এ ক্ষেত্রে মনে রাখা উচিত, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো anti-establishment তবে তা বিতর্কে, পড়াশোনার, গবেষণার ক্ষেত্রে। যেমন ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সামাজিক বিজ্ঞানের বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে আমরা পুঁজিবাদবিরোধী একটি শক্তিশালী নব্য-বামধারা লক্ষ করি। আবার জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে গ্রেটা থানবার্গ তো একাই লড়াই শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের একত্র করতে পেরেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন সেমিস্টার পদ্ধতিতে চলছে, অনার্স কোর্স এখন চার বছরের। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পড়াশোনাকে যদি আন্তর্জাতিক মানের কাছাকাছি যেতে হয়, তাহলে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা কতটুকু এবং কী পর্যায়ে রাজনীতি করবে, তার একটি ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামো শিক্ষকদেরই দাঁড় করাতে হবে। সাধারণ জনগণ দেখছেন দলীয় রাজনীতির নামে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কী হচ্ছে। তারা দেখেছেন, এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সফলতার পরপর আমাদের ছাত্রনেতারা কীভাবে রাতারাতি ধনী হয়ে গিয়েছিলেন। দলীয় লেজুড়বৃত্তির এই অপরাজনীতি থেকে সুস্থ রাজনৈতিক পরিস্থিতির আবহ সৃষ্টির দায়িত্ব এখন শিক্ষকদের হাতে। তারা যদি একমত হয়ে জাতির স্বার্থে কাজ করেন, তবেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পেতে পারি সুস্থ স্বাভাবিক রাজনীতি, পড়াশোনা, আর মুক্তচিন্তার আবহ।

লেখক

কলামনিস্ট ও গবেষক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here