সাধু-ভক্তে জমজমাট লালনের ছেঁউড়িয়া

0
75

বাংলা খবর ডেস্ক: বাউল সম্রাট মরমী সাধক ফকির লালন সাঁইয়ের ১২৯তম তিরোধান (মৃত্যুবার্ষিকী) দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালির ছেঁউড়িয়ায় কালিগঙ্গা নদীর তীরে ৩ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা ও লালন মেলা শুরু হচ্ছে আজ (বুধবার) । এ উপলক্ষে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় সাঁইজির বারাম খানার আখড়া বাড়িতে বসছে সাধুর হাট।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কুষ্টিয়া লালন একাডেমি এই আয়োজন করেছে। তিরোধান দিবস পালন উপলক্ষে আখড়া বাড়িতে সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ সত্য সু-পথের সন্ধানে মানবতার দিক্ষা নিতে ইতোমধ্যেই আত্মার টানে দেশ-বিদেশের সাধুগুরু ও ভক্তরা দলে দলে এসে আসন গেড়েছে সাঁইজির মাজারে।

মূল উৎসব শুরু হওয়ার ৫/৬ দিন আগ থেকেই আখড়ায় আসা বাউল সাধকরা মাজারের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে গেয়ে চলেছেন সাঁইজির আধ্যাত্মিক মর্মবাণী ও ভেদ তথ্যের গান। জমজমাট এখন লালন শাহের আখড়া বাড়ি। কুষ্টিয়া পরিণত হয়েছে উৎসবের শহরে। সেখানে মঞ্চ ও লালন মেলার স্টল নির্মাণ ও মাজার পরিষ্কারের কাজ শেষ হয়েছে বেশ কয়েকদিন আগে।

বুধবার সন্ধ্যায় ৩ দিনব্যাপী এই আয়োজনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের এমপি মাহবুবউল আলম হানিফ।

জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন কুষ্টিয়া-২ আসনের এমপি ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, কুষ্টিয়া-১ আসনের এমপি আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশা, কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভির আরাফাত, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সদর উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, পিপি অ্যাড. অনুপ কুমার নন্দী।

অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে থাকবেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমান। আলোচনা করবেন লালন মাজারের প্রধান খাদেম মহম্মদ আলী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আজাদ জাহান। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন লালন একাডেমির অ্যাডহক কমিটির সদস্য সচিব এনডিসি এবিএম আরিফুল ইসলাম।

এদিকে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা সুষ্ঠুভাবে আয়োজন সম্পন্ন করতে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি অনুষ্ঠানস্থলে থাকবে র‌্যাব ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ।

উল্লেখ্য, ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠির নির্মম অত্যাচারে গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবন যখন বিষিয়ে উঠেছিল, ঠিক সেই সময়ই সত্যের পথ ধরে, মানুষ গুরুর দিক্ষা দিতেই বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের আবির্ভাব ঘটে কুষ্টিয়ার কুমারখালির ছেঁউড়িয়াতে। লালনের জন্মস্থান নিয়ে নানা জনের নানা মত থাকলেও আজো অজানাই রয়ে গেছে তার জন্ম রহস্য। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। আর্থিক অসংগতির কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে পারেননি। ছিলেন স্বশিক্ষায় শিক্ষিত।

যৌবনকালে পূন্য লাভের জন্য তীর্থ ভ্রমণে বেরিয়ে তার যৌবনের রূপান্তর ও সাধন জীবনে প্রবেশের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। তীর্থকালে তিনি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে সঙ্গীরা তাকে প্রত্যাখ্যান করে। পরে মলম শাহের আশ্রয়ে জীবন ফিরে পাওয়ার পর সাধক সিরাজ সাঁইয়ের সান্নিধ্যে তিনি ফকিরি লাভ করেন।

ভক্ত মলম শাহের দানকৃত ১৬ বিঘা জমিতে ১৮২৩ সালে আখড়া গড়ে ওঠে। প্রথমে সেখানে লালনের বসবাস ও সাধনার জন্য বড় খড়ের ঘর তৈরি করা হয়। সেই ঘরেই তার সাধন-ভজন বসতো। ছেঁউড়িয়ার আঁখড়া স্থাপনের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সেখানেই শিষ্যভক্তদের নিয়ে পরিবৃত থাকতেন।

ফকির লালন প্রায় এক হাজার গান রচনা করে গেছেন। ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর ভোরে এই মরমী বাউল সম্রাট দেহত্যাগ করেন এবং নিজের সাধন-ভজন ঘরের মধ্যেই তাকে সমাহিত করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here