মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি ছাড়াই পৃথিবী ছাড়লেন মুক্তু মিয়া

0
531

বাংলা খবর ডেস্ক: মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি ছাড়াই পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের ভিতরগড় এলাকার মুক্তু মিয়া (৯১) বুধবার সকালে মারা গেছেন। সন্ধ্যায় স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি তিনি। জীবনের শেষবেলায় ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে সংসারের ঘানি টেনেছেন। জাতীয় পতাকায় ঢেকে সম্মান পাওয়ার শেষ স্বপ্নটুকুও তার পূরণ হলো না। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মুক্তু মিয়ার পরিবার।

মুক্তু মিয়ার পরিবার ও স্থানীয়রা জানায়, ৬নং সেক্টরের ৩/এ মধুপাড়া কোম্পানি কমান্ডার একেএম মাহবুব উল আলমের নেতৃত্বে অমরখানা ভিতরগড়সহ পাশের এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ করেছেন মুক্তু মিয়া। যুদ্ধের টানা নয় মাস রেকি করা, গাইড, সংবাদ সরবরাহ কিংবা পাকসেনাদের ক্যাম্পে আক্রমণে অংশগ্রহণ করেন বীরত্বের সঙ্গে। তার চোখের সামনেই গোলাম গাউসকে হত্যা করে পাকসেনারা।

একেএম মাহবুব উল আলমের ‘গেরিলা থেকে সম্মুখযুদ্ধে’ বইটির একটি অংশে মুক্তু মিয়া শিরোনামে স্মৃতিচারণ করা হয়েছে। সেখানে তার বীরত্বের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। যুদ্ধ শেষে স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তু মিয়ার ভাগ্যে তেমন কিছু জোটেনি। তার অনেক সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও স্বীকৃতি মেলেনি তার।

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হলেও জীবন সংগ্রামে হেরে যান তিনি। দারিদ্র্য আর সংসারের টানাপোড়েনে শেষ বয়সে ভিক্ষার থলি হাতে নিতে হয় মুক্তু মিয়াকে। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। সর্বশেষ মুক্তিযোদ্ধা বাছাই বোর্ডে তার নাম সর্বসম্মতিক্রমে তালিকাভুক্ত করা হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে নামটি এখনো গেজেটভুক্ত হয়নি।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক পঞ্চগড়ে এসে সবার সামনে মুক্তু মিয়াকে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও তা পাননি। জীবনের শেষ দিনগুলোতে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় পড়ে ছিলেন মুক্তু মিয়া। টাকা না থাকায় চিকিৎসা করাতে পারেননি। অবশেষে বুধবার সকালে মারা যান এই বীর সৈনিক।

মুক্তু মিয়ার স্ত্রী আমেনা খাতুন বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য আমরা সব জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করেছি। সবাই হবে হবে বলেছে, আজও স্বীকৃতি পাওয়া হলো না। তার শেষ ইচ্ছাটা পূরণ হলো না।

স্থানীয় ইয়াসিন আলী বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের কথা বই পড়ে জেনেছি মুক্তু মিয়া একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু আজ তাকে বঞ্চনা আর অপ্রাপ্তি নিয়েই দুনিয়া থেকে চলে যেতে হলো। এটা আমাদের কাছে লজ্জাজনক।

অমরখানা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল মান্নান ভূইয়া বলেন, মুক্তু মিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় গাইড হিসেবে অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু তিনি গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা না হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুযোগ-সুবিধা পাননি।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, মুক্তু মিয়া মারা যাওয়ার খবর শোনার পর জেলা প্রশাসক স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বসেছিলেন। কিন্তু গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা না হওয়ায় মুক্তু মিয়াকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here