বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ কমেছে : যুক্তরাষ্ট্র

0
71

বাংলা খবর ডেস্ক: বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার গতি ও মাত্রা ধারাবাহিকভাবে কমেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেরোজিম-২০১৮’ শীর্ষক বৈশ্বিক বার্ষিক জঙ্গিবাদবিষয়ক মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ২০১৮ সালের জঙ্গিবাদ পরিস্থিতি সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে।

এতে বাংলাদেশ অংশে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার গতি ও মাত্রা ধারাবাহিকভাবে কমেছে। যদিও পৃথক ঘটনায় একজন সেক্যুলার লেখক খুন ও একজন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক গুরুতর আহত হয়েছেন। বাংলাদেশের নিরাপত্তাবাহিনী সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালিয়ে হামলা পরিকল্পনা নস্যাৎ, সন্দেহভাজন জঙ্গি নেতাদের গ্রেফতার, অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক দ্রব্য জব্দ করেছে।

তবে জঙ্গিদের সফল বিচারের ক্ষেত্রে বিচারিক বাধা ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের সফলতাকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ম্লান করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। জঙ্গিবাদ এবং জঙ্গিদের ভূ-স্বর্গ হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করতে না দিতে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ অব্যাহত রেখেছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

প্রায়ই জঙ্গি হামলার জন্য বাংলাদেশ সরকার স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে দায়ী করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে ২০১৫ সাল থেকে প্রায় ৪০টি হামলার দায় স্বীকার করেছে ভারতীয় উপমহাদেশের জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্ট (একিউআইএস) ও আইএস।

মার্কিন এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে অনুসারী দলে টানতে ও নিজেদের মতাদর্শ ছড়িয়ে দিতে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করছে। আইএস এবং একিউআইএস তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রকাশনা, ভিডিও ও ওয়েবসাইটে বাংলাদেশি জঙ্গিদের উপস্থাপন করেছে।

বাংলাদেশে ২০১৮ সালের পরিস্থিতি

গত বছরের ১১ জুন সন্দেহভাজন জঙ্গিরা মুন্সিগঞ্জের সেক্যুলার লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী শাজাহান বাচ্চুকে খুন করে। এ ঘটনায় এখনও তদন্ত চলমান থাকলেও খুনীরা একিউআইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় বলে বাংলাদেশের নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের ধারণা।

সিলেটের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাফর ইকবালকে ইসলামের শত্রু ঘোষণা দিয়ে গত ৩ মার্চ তার ওপর হামলা চালায় নিজেকে একিউআইএসের সদস্য দাবি করা এক ব্যক্তি।

তবে একিউআইএস কিংবা অন্য কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে ওই ব্যক্তির সম্পর্ক নেই বলে বাংলাদেশ সরকারের তদন্তে জানা গেছে।

আইন, আইনের প্রয়োগ এবং সীমান্ত সুরক্ষা

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদবিরোধী ২০০৯ সালের একটি আইন ২০১২ এবং ২০১৩ সালে সংশোধন করার পরও ২০১৮ সালে বাস্তবায়নাধীন ছিল। গত বছরের ৫ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইনে প্রথমবারের মতো ঢাকা এবং চট্টগ্রামে দু’টি সন্ত্রাসবাদবিরোধী বিশেষ আদালত গঠন করে।

ঢাকার বিশেষ আদালতে প্রথম মামলা হিসেবে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে হলি আর্টিসান বেকারি জঙ্গি হামলায় সংশ্লিষ্ট ছয়জনের বিচার শুরু হয়। আইনি ও পদ্ধতিগত বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও বাংলাদেশ সন্দেহভাজন বিদেশি জঙ্গিদের অন্য অভিযোগে বিদ্যমান আইনেই গ্রেফতার করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় সীমান্ত এবং বন্দরে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি আরোপ করেছে বাংলাদেশ। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নিরাপত্তা প্রক্রিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ থাকলেও ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন তাদের বিমান সুরক্ষা মানের ৭৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ কার্যকর বলে সম্মতি দেয়। যা আন্তর্জাতিক এই বিমান পরিবহন সংস্থার ২০১২ সালের এক নিরীক্ষা মানের চেয়ে ২৬ শতাংশেরও বেশি।

ইন্টারপোলের সঙ্গে আইনপ্রয়োগের তথ্য বিনিময় করলেও জঙ্গিদের পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কোনো ওয়াচলিস্ট নেই বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে ইন্টারেক্টিভ কোনো এপিআই ব্যবস্থা নেই।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের র‌্যাব, কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট এবং বাংলাদেশ পুলিশের অন্যান্য শাখা সন্দেহভাজন জঙ্গিদের গ্রেফতার ও অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এসব অভিযানে অনেক সন্দেহভাজন জঙ্গি নিহত হয়েছে। অনেক সময় এসব হত্যাকাণ্ডকে ক্রসফায়ার কিংবা গোলাগুলি বলে জানানো হচ্ছে। তবে পর্যবেক্ষকরা সন্ত্রাসবাদবিরোধী কিছু অভিযানের সত্যতা ও গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের জঙ্গিবাদবিরোধী সহায়তা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ। এছাড়া সঙ্কট মোকাবেলা, প্রমাণ সংগ্রহ, ক্রাইম সিন তদন্ত, অবকাঠামো সুরক্ষা, নেতৃত্বের বিকাশ এবং প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সাইবার ও ডিজিটাল তদন্ত সক্ষমতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে দেশটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগের বিচারিক দক্ষতার প্রশিক্ষণ, কমিউনিটি পুলিশিং সহায়তা এবং স্বাক্ষ্য আইনের আধুনিকায়নের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত পরামর্শও পেয়েছে বাংলাদেশ। সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের জন্য একটি অ্যালার্ট তালিকা তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা নিচ্ছে ঢাকা। যাতে দেশটির প্রবেশদ্বারে এই সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া যায়।

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদে বিদেশি অর্থায়নের ব্যাপারেও প্রতিবেদনে আলোচনা করা হয়েছে। কোনো বিদেশি সংস্থা কিংবা গোষ্ঠী; যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের কাছে থেকে অর্থ সংগ্রহে আইনি নিষেধাজ্ঞার কথাও বলা হয়েছে।

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতে ধর্মীয় নেতা ও ইমামদের সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং জঙ্গিবাদ, প্রতিরোধ ও নির্মূল সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি কাজ করছে। জঙ্গিবাদের প্রচারণা ঠেকাতে এবং ইসলাম যে জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না তা ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে তুলে ধরতে কাজ করছে পুলিশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here