বাংলা খবর ডেস্ক: নিজের হাতে তৈরি পুতুল রং করছেন কেউ। আবার কেউ কেউ ভেজা মাটি দিয়ে নকশা করে পুতুল তৈরি করছেন। এমনই দৃশ্য দেখা যাবে পালপাড়ায়। ছোটবেলা থেকেই মাটির জিনিস তৈরিতে পারদর্শী কমলা রানী। এখনো সকাল থেকে সন্ধ্যা কাদা, মাটি ও রঙে ভিজে থাকে তার দুই হাত।
তার বাবা-মাও এ পেশার সঙ্গেই জড়িত ছিলেন। বর্তমানে তার বয়স ৫০ বছর। জীবিকার তাগিদে তাই এই বয়সেও মৃৎশিল্পের কাজ করতে হয় তাকে। তার বৃদ্ধ স্বামীও এক সময় এ কাজ করতেন। তবে বয়সের ভারে এখন আর সেই ক্ষমতা তার নেই। কমলা রানীর দুই ছেলে এবং তাদের স্ত্রীরা কেউ এ পেশার সঙ্গে জড়িত নয়। ছেলেরা কিছু কারিগরি কাজ শিখে নিজেদের পেশায় স্বাবলম্বী।
জামালপুর শহর ঘেঁষে বয়ে যাওয়া এক সময়ের খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে বসতি গড়ে উঠে পাল পরিবারের। ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই পাল পরিবারের মৃৎশিল্পীরা মাটির তৈরি হাড়ি-পাতিলসহ নানা ধরনের বাসন-কোসন এবং খেলার সামগ্রী তৈরি করে আসছেন। এক সময় হাজার হাজার পরিবার মাটির তৈরী জিনিসপত্র বিক্রি করে জীবন অতিবাহিত করতেন। অথচ দিনকে দিন এই ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ তার গৌরব হারাতে বসেছে। প্লাস্টিক সামগ্রীর কাছে তাদের মাটির তৈরি হাড়ি পাতিল আজ হুমকির মুখে। মৃৎশিল্পের কদর কমে যাওয়ায় পালপাড়ার প্রায় শতাধিক কারিগর পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে জীবন যাপন করছেন। অভাব-অনটন যেন তাদের নিত্যসঙ্গী। এ কারণে অনেকেই বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
‘মৃৎ’ মানে মাটি আর ‘শিল্প’ মানে নিজ হাতে তৈরি কোনো সুন্দর জিনিস। আর তাই মাটি দিয়ে তৈরি জিনিসপত্রকে বলা হয় মৃৎশিল্প। মৃৎ শিল্প গ্রাম বাংলার মাটি ও মানুষের কথা বলে। গ্রামীণ সভ্যতার বাংলাদেশে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য বন্ধন মৃৎ শিল্প। এই শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বলা হয় ‘কুমার’। গ্রামে তাদের বলা হয় ‘পাল’। বিশ্বজুড়ে প্রত্যেকটি দেশের রয়েছে নিজস্ব শিল্প ও সংস্কৃতি। এই শিল্প ও সংস্কৃতির পরিচয়েই পরিচিত হয় সেই দেশ বা জাতি । একেকটি শিল্পের বিস্তারের পিছনে রয়েছে একেকটি দেশ বা জাতির অবদান। তেমনই একটি শিল্প হচ্ছে মৃৎ শিল্প।