বাংলা খবর ডেস্ক: দেশের বৃহৎ আবাসন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান রূপায়ণ উত্তরায় নিজস্ব সিটি স্থাপন করছে। ‘রূপায়ণ সিটি উত্তরা’ নামে এই হাউজিং এরিয়ায় রয়েছে সব আয়োজন। স্কুল, কলেজ, খেলার মাঠ, মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টার, শপিং মল, এটিএম বুথ, সুপার শপ ও ফার্মেসি রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটা শুধু অ্যাপার্টমেন্ট নয়, মেগাগেটেড কমিউনিটি তৈরি করছে রূপায়ণ। যেখানে একজন মানুষের জীবনের জন্য যা প্রয়োজন, সব সুযোগ সুবিধাই রাখা হবে। এবারের শীতকালীন রিহ্যাব মেলায় ক্রেতারা এসব অঞ্চলের ফ্ল্যাট ক্রয়ে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কেননা নিজস্ব গণ্ডির মধ্যে সব কিছু মেলে এমন জায়গায় থাকার আনন্দই অন্যরকম। এতে সময়ও বাঁচে, নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তা করতে হয় না। ক্রেতাদের এই আগ্রহের সুযোগ নিচ্ছে মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো। বেশ কিছু আবাসন ব্যবসায়ী নিয়ে এসেছেন কনডোমিনিয়াম প্রকল্প এবং স্টুডিও ফ্ল্যাট। এসব ফ্ল্যাটের চাহিদাও বেশি বলে জানিয়েছেন মেলায় অংশ নেওয়া আবাসন স্টলগুলো। গতকার বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রের মেলায় গিয়ে এসব তথ্য জানা যায়। পাঁচ দিনের আবাসন মেলার তৃতীয় দিন ছিল গতকাল। একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শৌখিন ক্রেতারা চাইছেন স্টুডিও ফ্ল্যাট, যা আকারে ছোট তবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ঘরের ফার্নিচার, কিচেন সবকিছু রেডি করে রাখে। সব কিছু থাকবে সাজানো গোছানো। আর নিজস্ব গণ্ডির মধ্যে সব পাওয়া যায় এমন প্রকল্পে ক্রেতাদের বাড়তি আকর্ষণ লক্ষ করা গেছে।
গত মঙ্গলবার শুরু হওয়া এই মেলায় ১৩০টি আবাসন ও ৩০টি নির্মাণসামগ্রীর প্রতিষ্ঠান এবং ১৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ২৬০টি স্টল রয়েছে। এ বিষয়ে রিহ্যাবের প্রথম সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবারের মেলায় প্রচুর ক্রেতা সমাগম ঘটছে। মেলার কারণে ক্রেতাদের আস্থাহীনতা অনেকটা কেটে গেছে। মেলায় উচ্চ ও মধ্যবিত্ত সব শ্রেণির মানুষই আসেন। এবার মেলায় আকর্ষণের শীর্ষে রয়েছে কনডোমিনিয়াম প্রকল্প ও স্টুডিও ফ্ল্যাট। উন্নত দেশে এসব ফ্ল্যাটের প্রচুর চাহিদা। আমাদের দেশেও শৌখিন লোকজন এ ধরনের ফ্ল্যাটে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
মেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরায় রূপায়ণ সিটির দ্বিতীয় ধাপের ফ্ল্যাট প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলছে। সেখানে ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট রয়েছে। বর্গফুটপ্রতি দাম পড়বে ১০ হাজার ৫০০ টাকা। সেখানে উচ্চবিত্তের জন্য ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৭ হাজার ৫০০ বর্গফুটের স্কাই ভিলা নামে ১০০ ডুপ্লেক্স বাড়ি করছে তারা। প্রতি বর্গফুটের দাম ১৫ হাজার টাকা। তা ছাড়া বসুন্ধরা, মিরপুর ও নারায়ণগঞ্জে ফ্ল্যাট প্রকল্প আছে তাদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতাদের তথ্য দিচ্ছেন রূপায়ণের কর্মীরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্টলের দায়িত্বে থাকা এস এম শামসুল কবীর খোকন দেশ রূপান্তরকে বলেন, উত্তরার রূপায়ণ সিটি শুধুমাত্র অ্যাপার্টমেন্ট নয়, একটি মেগাগেটেড কমিউনিটি। যেখানে লাইফ স্টাইলের জন্য যা যা প্রয়োজন সব থাকবে। দেশের সর্ববৃহৎ শপিং মল তৈরি করা হবে। থাকবে স্কুল, কলেজ, খেলার মাঠ, মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টার, শপিং মল, এটিএম বুথ, সুপার শপসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা।
তিনি বলেন, এখানে ৫টি সেগমেন্টে অ্যাপার্টমেন্ট সেল করছি আমরা। এর মধ্যে গ্রান্ড সেগমেন্টের ফ্ল্যাট আগামী বছর হস্তান্তর শুরু হবে। বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট ম্যাক্সাসের বুকিং নেওয়া হচ্ছে। এগুলোর ২ হাজার ৬৫ থেকে ৭ হাজার স্কয়ার ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। দাম পড়বে সাড়ে ৯ হাজার থেকে সাড়ে ১১ হাজার টাকা স্কয়ার ফুট। তিনি বলেন, মেলায় বেশ সাড়া পেয়েছি। আরও সাড়া পাব।
শেলটেক ঢাকার ধানমণ্ডি, মিরপুর, বনানী, গুলশান, কলাবাগান, মালিবাগ, নিউ ইস্কাটন, উত্তর বাড্ডা, শান্তিনগর ও উত্তরার ১১টি ফ্ল্যাট প্রকল্প নিয়ে মেলায় এসেছে। তাদের ফ্ল্যাটের আকার ৯৭১ থেকে ২ হাজার ২০০ বর্গফুট। প্রতি বর্গফুটের দাম ৬ হাজার ২০০ থেকে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা। মিরপুরে শেলটেক বীথিকা নামের কনডোমিনিয়াম প্রকল্প আছে প্রতিষ্ঠানটির। প্রতিষ্ঠানটির অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার মোহাম্মদ নজীর আহমেদ বলেন, কনডোমিনিয়াম প্রকল্পের বিষয়ে প্রচুর আগ্রহ রয়েছে ক্রেতারাদের। মেলায় এ নিয়ে অনেকেই খোঁজ খবর নিচ্ছেন।
কমপ্রিহেনসিভ হোল্ডিংসের রাজধানীর গুলশান, বনানী, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও উত্তরায় ১৮টি প্রকল্পে ২০০টির বেশি ফ্ল্যাট আছে। তাদের ফ্ল্যাটের আকার ১ হাজার ১৯০ থেকে ৪ হাজার ৬০০ বর্গফুট। প্রতি বর্গফুটের দাম ৮ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা। মিরপুরের কাজীপাড়ায় প্রতিষ্ঠানটির কনডোমিনিয়াম প্রকল্পে ৭২টি ফ্ল্যাট আছে। সেখানে ফ্ল্যাটের দাম প্রতি বর্গফুট ৭ হাজার ৮০০ টাকা।
কমপ্রিহেনসিভ হোল্ডিংসের উপমহাব্যবস্থাপক কাজী শামসুল আলম বলেন, ‘কনডোমিনিয়ামে সাড়া ভালো। ইতিমধ্যে ৪০ শতাংশ ফ্ল্যাট বিক্রি হয়ে গেছে। ভালো লোকেশনে বড় জায়গা পেলে আমরা নতুন কনডোমিনিয়াম প্রকল্প নেব।’
মেলায় আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন তাদের ধানমণ্ডি, গুলশান, বনানী, মগবাজার, পল্টন, নিকেতন, মোহাম্মদপুর, বারিধারাসহ বিভিন্ন এলাকায় ৩০টি প্রকল্পের ৫০০-এর বেশি ফ্ল্যাট তুলে ধরেছে। ১ হাজার ২৫০ থেকে ৪ হাজার ৮০০ বর্গফুট আয়তনের এসব ফ্ল্যাটের প্রতি বর্গফুটের দাম ৬ হাজার থেকে ২৮ হাজার টাকা। রাজধানীর পল্টন ও নিকেতনে দুটি মিনি কনডোমিনিয়াম আছে প্রতিষ্ঠানটির।
জানতে চাইলে আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের বিপণন ও বিক্রয় উপব্যবস্থাপক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘কনডোমিনিয়াম প্রকল্পে অভাবনীয় সাড়া পাচ্ছি। পল্টনের মিনি কনডোমিনিয়ামের অধিকাংশ ফ্ল্যাট বিক্রি হয়ে গেছে। বড় আকারের জমি পেলে নতুন কনডোমিনিয়াম প্রকল্প নেব আমরা।’