সীমাহীন ব্যর্থতার পরও ঐক্যের তুষ্টি

0
76

বাংলা খবর ডেস্ক: সরকারের বৈরী আচরণ, দলে বিভক্তি ও কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারার হতাশাসহ নানা কারণে সৃষ্ট বৈরী পরিবেশেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি ঐক্যবদ্ধ বলে দাবি নেতাদের।

দলটির সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো- কারাবন্দি দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে কার্যকর আন্দোলন করতে না পারা। এনিয়ে দলের ভেতরে ও বাইরে সমালোচনার মুখোমুখি হন শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। তারা মুখে ‘রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের জননী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনব’ বলে ঘোষণা দিলেও কার্যত বিদায়ী বছরে রাজপথে তাদের দেখা মেলেনি। দেশের বৃহত্তর ও প্রধান বিরোধী দল হিসেবে নিজেদের দাবি করা বিএনপির কেমন কাটল ২০১৯ সাল- পর্যালোচনায় জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক খালিদ হোসেন।

বছরের শুরুতেই হতাশায় নিমজ্জিত নেতাকর্মীরা

চলতি বছরের প্রথম দিন মঙ্গলবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শোচনীয় ভরাডুবির পর নেতাকর্মীরা হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েন। সেদিন বিকেলে দলের প্রতিক্রিয়া জানতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদকর্মীরা গেলে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন দলের সহ-দফতর সম্পাদক বেলাল আহমেদ। সংবাদকর্মীদের উপস্থিতিতে নয়াপল্টনের প্রেস কনফারেন্স কক্ষের বৈদ্যুতিক বাল্ব নিভিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো সাংবাদিক লাগবে না। আপনারা চলে যান।’ তবে বছরের দ্বিতীয় দিন থেকে দু-একজন নেতা বিভিন্নভাবে গণমাধ্যমে কথা বলতে শুরু করেন।

এমপিদের শপথ নিয়ে নাটক

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল বাতিল চেয়ে নতুন করে নির্বাচনের দাবিতে একাট্টা হন সবপর্যায়ের নেতাকর্মীরা। শপথ না নেয়ার ঘোষণা দিলেও আকস্মিকভাবে দলীয় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়। এ নিয়ে বিএনপির ভেতরে-বাইরে নানা কৌতূহল সৃষ্টি হয়। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ গ্রহণের কারণে প্রথমদিকে বিএনপি এক নির্বাচিত এমপিকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। একপর্যায়ে সংসদে যোগদানের সিদ্ধান্ত দিয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া অন্যরা শপথ গ্রহণ করেন। অনেকে বিষয়টিকে ‘বিএনপির নাটক’ বলে অভিহিত করেন।

এরই মধ্যে কারাবন্দি দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে গত ১ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। বিএনপির নির্বাচিত এমপিদের সংসদে শপথ নেয়ার সময় প্যারোলে খালেদা জিয়ার মুক্তির গুঞ্জন ওঠে। দলের নির্বাচিতরা শপথ নিয়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। ওই প্রেক্ষাপটে এমপিদের ওপর চরম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

শরিকদের সম্পর্ক ছিন্ন, জাতীয় মুক্তিমঞ্চ গঠন

দলের নির্বাচিতরা সংসদে যোগদানের পর বিএনপির ঘনিষ্ঠ মিত্র ২০ দলীয় জোটের শরিক বিজেপি সভাপতি আন্দালিভ রহমান পার্থ বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন। আরেক শরিক লেবার পার্টির মুস্তাফিজুর রহমান ইরানও বিএনপিকে অল্টিমেটাম দেন। এ টানাপোড়েনের মধ্যে ‘জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায়’ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বিএনপির নেতৃত্বের প্রতি হতাশা জানিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয় মুক্তিমঞ্চ নামে আরেকটি জোট গঠন করেন। এতে জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ জাতীয় দল, জাতীয় গণতান্ত্রিক দল- জাগপাসহ কয়েকটি দল যুক্ত হয়।

স্থায়ী কমিটিতে আসতে না পেরে ক্ষোভ

চলতি বছরের ১৯ জুন দলের ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহামুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটিতে নিযুক্ত করা হয়। আব্দুল্লাহ আল নোমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, শাজাহান ওমর, হাফিজ উদ্দিনদের মতো সিনিয়রদের পাশ কাটিয়ে কনিষ্ঠদের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে আনায় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ক্ষুব্ধ হন। শাজাহান ওমর ওই সময় দলের সার্বিক পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার মনে হয় আর এই দল করা হবে না।’

১০ কাঠার প্লট চেয়ে একঘরে রুমিন

আগস্টের শেষ দিকে সংসদ সদস্য হিসেবে ১০ কাঠার প্লট চেয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন বিএনপির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এবং তাকে প্লট বরাদ্দ দেয়া হলে তিনি সরকারের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকারও অঙ্গীকার করেন আবেদনে। বিষয়টি প্রকাশ হলে দলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। একপর্যায়ে রুমিন তার প্লটের আবেদন প্রত্যাহার করেন। এ ঘটনার পর থেকে প্রায় একঘরে হয়ে পড়েন তিনি।

ছাত্রদলের পরিস্থিতি এতটা শোচনীয়!

ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিয়ে শোচনীয় অবস্থা পরিলক্ষিত হয় বিএনপির ছাত্র সংগঠন- ছাত্রদলের। দীর্ঘ ২৭ বছর পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাবেক ছাত্রদল নেতারা ছিলেন বেশ তৎপর। এ কাউন্সিল প্রক্রিয়া ঠেকাতে আদালতের দ্বারস্থ হন সংগঠনের সাবেক সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান। কাউন্সিলের বিরোধিতা করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে সংগঠনের সিনিয়র নেতাদের একাংশ। লাঞ্ছিত হন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। পরিস্থিতি নিরসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মতামত দিলেও তা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমলে নেননি বলে অভিযোগ ওঠে। কাউন্সিল বাদ দিয়ে নিয়মিতদের দিয়ে ধারাবাহিক কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে আন্দোলনরতদের থেকে ১২ ছাত্রদল নেতাকে বহিষ্কার করা হয়, যা এখনও বহাল রয়েছে।

শেষমেশ কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচিত হন ছাত্রদলের সভাপতি ও সম্পাদক। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের তিন মাস পর ৬০ সদস্যের আংশিক কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়।

কমিটি নিয়ে ধোঁয়াশা

পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের পদপ্রত্যাশীরা চোখে যেন ধোঁয়াশা দেখেন। যুবদল সুপার ফাইভ আর স্বেচ্ছাসেবক দল চলছে সুপার সেভেন কমিটি দিয়ে।

এছাড়া মেয়াদ পার হতে চললেও পূর্ণাঙ্গ কমিটির খবর নেই জাতীয়তাবাদী কৃষক দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দলের। তিন মাসের জন্য আহ্বায়ক কমিটি গঠন হলেও স্ব স্ব সংগঠনের কাউন্সিল কবে হবে তা কারোরই জানা নেই। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। সংগঠনটি নির্ধারিত সময়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে।

মহিলা দলে বিভেদ

গত ১৬ নভেম্বর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঝগড়া-মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের অনুসারীরা। এরপর থেকে এ দুই নেত্রীর মধ্যে কথাবার্তা বন্ধ। আগস্টের শেষদিকে বেগম সেলিমা রহমানকে আহ্বায়ক এবং নিপুণ রায় চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে নারী ও শিশু অধিকার রক্ষার ফোরাম গঠন করা হয়। বিভিন্ন ঘটনায় এ ফোরামের সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে গেলেও অভিযোগ ওঠে, মহিলা দলকে দুর্বল করতে নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম গঠন করা হয়েছে।

সীমাহীন যে ব্যর্থতা

দল গুছিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তিতে কার্যকর আন্দোলনের কথা থাকলেও লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি বিএনপি। এ কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ স্পষ্ট হতে থাকে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে কর্মীদের তীর্যক মন্তব্যের শিকার হতে হয়। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে। বছরজুড়েই তারেক রহমান সকল পর্যায়ে ভিডিও কনফারেন্সে যোগাযোগ রক্ষা করে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত দেন।

বছরের শেষদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন ইস্যুতে দলের মধ্যে বিভক্তি তীব্র রূপ নেয়। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সরকারবিরোধী কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য দলীয় এমপিদের পদত্যাগের আহ্বান জানান। কিন্তু পরদিনই চট্টগ্রাম-৮ আসনে আবু সুফিয়ানকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি।

খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে গত ২৬ নভেম্বর হাইকোর্টের সামনে অবস্থান নেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহামুদ, আব্দুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান তারা। ভাঙচুর হয় মন্ত্রণালয়ের একটি গাড়ি। এ ঘটনায় বিএনপির শরিক জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, কৃষদল নেতা কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনসহ অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বিএনপির আইনজীবীরা নেতাদের জামিন আবেদন করতে সক্ষম হন। কিন্তু ১২ ডিসেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন করাতে ব্যর্থ হন তারা। আবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত।

এছাড়া বিজয় দিবসে রাজধানীতে বড় ধরনের শোভাযাত্রা করলেও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের উপলব্ধি, জুনিয়র নেতাকর্মীদের বেয়াদবির কারণে তাদের কার্যকর আন্দোলন গড়ে ওঠেনি।

শাস্তির ব্যবস্থা না নিলেও দেখা মিলেছে রিজভীর শোডাউন

জেলাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে হাতেগোনা কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হলেও সেখানকার নেতাদের মধ্যে দেখা মেলে ভীষণ বৈরিতা। এ কারণে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধি প্রাঙ্গণে ঢাকা মহাগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জুকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হলেও এ ঘটনায় সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কয়েক বছর আগে দলীয় কার্যালয়ে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু পৃথকভাবে হামলার শিকার হলেও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে দফতর সম্পাদকের দায়িত্বে থেকে নিজের সংগ্রামী জীবন উপস্থাপন করেছেন রুহুল কবীর রিজভী। নিয়মিত ১০/১২ ঘণ্টার অধিক সময় তিনি দাফতরিক কাজে নিয়োজিত থেকেছেন। দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করেছেন। সরকারবিরোধী স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করার প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন তিনি। ইতোমধ্যে ঘনিষ্ঠরা রিজভীর লাইফ স্টাইলকে গান্ধীজী, ম্যান্ডেলা, চে’র সংগ্রামের সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেছেন।

পদত্যাগের চাপে বিএনপি

গত বছরের শেষদিকে কণ্ঠশিল্পী মনির খানের পদত্যাগের চাপে বছর শুরু হলেও ২০১৯ সালের শেষদিকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খানের পদত্যাগে বেশ অস্বস্তিতে পড়তে হয় বিএনপিকে। কেউ কেউ এসবের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান দীর্ঘদিন থেকে নিষ্ক্রিয় থেকে কয়েকটি গণমাধ্যমে পদত্যাগের কথা জানান। পরে তার স্ত্রী মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বোন এটাকে গুঞ্জন বলে উড়িয়ে দেন।

জাহিদ হোসেনের মেয়ের বিয়েতে কাদের সিদ্দিকী কেন

১৯ ডিসেম্বর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী হাওয়া ভবনের জন্য তারেক রহমানকে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দেন। তারেক রহমানের সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। তাকে দেখে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা বিস্মিত হন এবং অস্বস্তিতে পড়েন। সেখানে অনেকে প্রশ্ন করেন, কাদের সিদ্দিকী কেন?

গুম-খুন না হলেও যাদের হারিয়েছে বিএনপি

এ বছর দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর মামলা-হামলা, গুম-খুনের তেমন অভিযোগ না থাকলেও বছরের শুরুর দিকে দলের উপদেষ্টা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক কাজী আসাদ দীর্ঘদিন অসুস্থ থেকে অনেকটা বিনা চিকিৎসায় মারা যান। বছরের শেষ দিকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও অবিভক্ত ঢাকার শেষ মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা ‘রাষ্ট্রহীন’ হয়ে নিউইয়র্কে মারা যান। ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে তার মরদেহ দেশে এনে সমাহিত করা হয়। এছাড়া ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা কবির মুরাদ।

বিএনপির নয় নেতাকর্মীর মৃত্যুদণ্ড

জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে পাবনার একটি আদালত ঈশ্বরদীতে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ট্রেনবহরে হামলার ঘটনায় করা মামলায় বিএনপির নয় নেতাকর্মীর মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। একই মামলায় ২৫ জনের যাবজ্জীবন এবং ১৩ জনের ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলন-বক্তৃতা-বিবৃতিতে বছর পার

ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিষয় প্রকাশ করতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেয়ার পাশাপাশি আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, পরিবহন খাতে নৈরাজ্য, কৃষকের দাবি আদায়ে জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলেও বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ, বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিদর্শনে যান বিএনপি নেতারা। তবে বছরজুড়ে সংবাদ সম্মেলন, বক্তৃতা-বিবৃতিতে নেতাদের সরব উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।

ভারতের নাগরিকপঞ্জি নিয়ে সোচ্চার বিএনপি

কাশ্মীর কিংবা অযোধ্যার ভেঙে ফেলা বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির তৈরির পক্ষে রায় ঘোষণা নিয়ে তেমন প্রতিক্রিয়া না দেখালেও নাগরিক সংশোধনী আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে বেশ সরব ছিল বিএনপি। দলটির অভিযোগ, ভারতের এনআরসি নিয়ে সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, এমনিতেই ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে বাংলাদেশ ভারাক্রান্ত, তার ওপর এনআরসি উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকার তাদের ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতির প্রমাণ হিসেবে যেভাবে নির্বিকার রয়েছে, তা স্পষ্টতই আমাদের জনগণ, সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান।

সার্বিক বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, চলতি বছর গুম-খুনের ঘটনা তেমন না হলেও সরকারের দমন-পীড়ন-মামলা অব্যাহত ছিল। এত প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বিএনপির নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন।

যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের ভাষ্য, এখনও যারা মাঠপর্যায়ে বিএনপি করে, যারা সংসদ সদস্য হননি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা আমাদের চেয়ে অধিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তারা যে এখনও বিএনপি করেন সেজন্য তাদের বীরের খেতাব দেয়া উচিত। সূত্র: জাগোনিউজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here